দিনে শিক্ষার্থী, রাতে ছিনতাইকারী

সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত   © সংগৃহীত

পহেলা আগস্ট রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে বন্ধুর জন্মদিন পালন করতে ধানমন্ডি আসেন সাত তরুণ৷ বাড়ি ফেরার সময়ে আনুমানিক রাত ১১টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটে মিরপুর রোডের ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের তেলের পাম্পের সামনে অটোরিকশার গতিরোধ করেন ছয় তরুণ। কৌশলে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাস্তা পার করে নিয়ে আসেন ঢাকা কলেজ লাগোয়া নায়েম সড়কে। ভেতরে গলিতে নিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় চারটি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এ ঘটনায় জড়িত সবাই ঢাকা কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী। 

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী তরুণরা বিষয়টি স্থানীয় নিউমার্কেট থানা পুলিশকে অবহিত করলে ওই রাতেই নীলক্ষেত মোড়ে ডেকে এনে চারটি মোবাইল ফোনের মধ্যে তিনটি ফেরতও দেওয়া হয়েছে। তবে নগদ ১২ হাজারের কিছু বেশি টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী শুভ্র (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমরা বন্ধুর জন্মদিন পালন করে বাসায় ফিরছিলাম৷ এর মধ্যে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে ছয়জন এসে আমাদের ধরে নিয়ে যায়৷ আমাদের টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়৷ আমাদের ছুরি, চাকু দেখিয়ে ভয় দেখায়৷ মারধরও করা হয়। পরে আবার একটা নাম্বার থেকে ফোন করে আমাদের তিনটা মোবাইল ফেরত দেয়৷ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিনিট আটকে রাখার অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী এই তরুণ৷’

অবশ্য সিসিটিভি ক্যামেরার দুটি ফুটেজেও মিলে এর সত্যতা। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের সাথে লাগোয়া জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমী (নায়েম) এর গলি দিয়ে ১৩ জন যুবক প্রবেশ করছে৷ এর মধ্যে সাত ভুক্তভোগী আর ছয় জন ছিনতাই চক্রের সদস্য৷ প্রথমে তাদেরকে ঢাকা কলেজের হল গেটের (৩ নং গেট) ভেতরে নিয়ে মোবাইল টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়৷ পরে আবার বের হয়ে তাদেরকে নায়েমের গেটের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর ভুক্তভোগীদের নিয়ে কলেজের সামনের মিরপুর সড়কের দিকে চলে যায় ছিনতাইকারীরা৷ ছিনতাইকারীদের একজনের গায়ে ঢাকা কলেজের লোগো সম্বলিত টি-শার্টও দেখা যায়৷ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরা দিনে শিক্ষার্থী আর রাত হলেই ছিনতাইয়ে জড়ান। চক্রটি এমনভাবে কাজ করে যাতে কেউ ধরতে না পারে৷ অনেক সময় রাতে রাস্তায় টহল পুলিশ থাকে তখন তারা এসব করে না৷ আবার কাউকে ধরে আনার ক্ষেত্রে তারা কলেজ ক্যাম্পাস কেই বেছে নেয় কেননা ক্যাম্পাসে বিনা অনুমতিতে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে না। আর নিজেদের ক্যাম্পাস এজন্য তাদের সাহসও বেশী থাকে৷ 

এর আগেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও ঢাকা কলেজের সামনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ছিনতাইয়ের শিকার হন৷ ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রীর নাম ইকরা৷ সে ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান-খান জয়ের বোন ইনিন তাজরিনের বন্ধবী৷ ঘটনাটি ছাত্রলীগ সভাপতি জানতে পারলে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন৷ পরে ভুক্তভোগী ঐ জাবি ছাত্রী তার মোবাইল, মানিব্যাগ ফেরত পায়। 

অনুসন্ধান বলছে, কলেজ ক্যাম্পাসের আশেপাশে ছিনতাইয়ের ঘটনা ছাড়াও এমন কয়েকটি গ্রুপ আছে যারা নিজেদের ইচ্ছায় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অপরিচিতদের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে৷ পরে তাদেরকে আলাদা ডেকে নিয়ে নগদ টাকা দাবি করা হয়৷ গ্রুপগুলো এসব কর্মকাণ্ডকে নিজেদের ভাষায় ‘ফিটিং' পরিভাষা ব্যবহার করে৷ 

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে এমন বেশ কয়েকটি চক্র রয়েছে৷ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা ছিনতাইয়ের কাজটি করে থাকে৷ প্রতিটি গ্রুপে তিন থেকে পাঁচ জন থাকে৷ ক্ষেত্র বিশেষে এর সংখ্যা বেশিও হয়৷ তবে এসব ছোট ছোট গ্রুপ কোন ঝামেলায় পড়লে ফোন করে অন্য গ্রুপের সদস্যদের ডেকে আনে৷  রাত ১০টা বা ১১টা থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়৷ ভোররাতেও এসব ঘটনা ঘটে৷ এরা মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার থাকলে সেগুলো ছিনিয়ে নেয়৷ 

কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বলছেন, ‘গুটিকতক শিক্ষার্থীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পুরো ঢাকা কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। প্রতিনিয়তই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে অপরাধীরা আবার অনেকেই বাইরে থেকে এসেই অপরাধ করে ঢাকা কলেজের নাম বলেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাই যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনার দাবিও তাদের।  


ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিনিয়তই পুলিশের নিয়মিত টহল টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অনেকেও আটকও হচ্ছে। প্রয়োজনে আমরা পুলিশের টহল আরও বাড়াবো। কলেজ প্রশাসন উদ্যোগী ভূমিকা পালন করলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের সংযোগ থাকতে হবে এবং প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবে।’

তবে বাইরের ঘটনার দায় ঢাকা কলেজ প্রশাসন নেবেনা বলে জানান ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ ও আইন বিরোধী যে কোন কাজে যদি কেউ যুক্ত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কলেজ এরিয়ার বাইরে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার দায় আমরা নিতে পারবো না। এটি সম্পূর্ণই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। তারা যদি মনে করেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে কেউ তবে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি৷


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence