অবন্তিকার আত্মহত্যা: এক বছরেও হয়নি চার্জশিট, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধোঁয়াশা

ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা  © ফাইল ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। তবে এখনো তার মায়ের করা আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর গ্রেপ্তার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী রায়হান আম্মান সিদ্দিক বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন।

দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। মামলার বাদী, অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের গোপনীয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, তদন্ত-সংশ্লিষ্ট জবি প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  

মামলার নথি ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা চান অবন্তিকা। কিন্তু তা না পেয়ে ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। ওই ঘটনার পর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা, দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সরব হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

গত বছরের ১৮ মার্চ পুলিশ সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও রায়হান আম্মান সিদ্দিককে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তবে বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত আছেন। 

অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম জানান, তার পরিবার এখনো জানতে পারেনি তদন্ত প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে তার সঙ্গে প্রহসন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য জবিতে ভর্তি করিয়েছিলাম, কত স্বপ্ন ছিল! কিন্তু কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মেয়েকে হারাতে হলো। জবি প্রশাসন এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না।’

আরও পড়ুন: হিফজ মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন, গুরুতর অসুস্থ  

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন। তদন্তের অংশ হিসেবে ৪৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গত বছরের ১৩ জুন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তবে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক।  

তিনি বলেন, তদন্তের রিপোর্ট গত বছরের ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা প্রশাসনই বলতে পারবে। তদন্ত রিপোর্টে কী আছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ড. জাকির হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াস উদ্দিনকে ফোনে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে কিছু না জানিয়ে কল কেটে দেন। এরপর তাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, পুলিশের তদন্তে অবন্তিকার মোবাইল ফোনের স্ক্রিনশট, বার্তা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা তদন্তে সহায়ক বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবন্তিকার ফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রতিবেদন পুলিশের হাতে রয়েছে। কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, তদন্তের চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে এবং তা দ্রুত আদালতে দাখিল করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ