শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই ফ্যাসিস্ট আমলের: ভিসি
- ববি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৯ PM , আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৯ PM

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) চলমান আন্দোলনের জন্য উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক মো. মুহসিন উদ্দিনকে দায়ী করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত যারা নিয়োগ পেয়েছে— শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা শিক্ষার্থী রয়েছে তারা সবাই ফ্যাসিস্ট আমলের। এ পর্যন্ত নতুন কেউ যোগদান করেনি এবং যদি কেউ বলে, আমি ফ্যাসিস্টেদের কেউ না, সেই দাবি করতে পারবে না। তারা সেই আমলেই নিয়োগপ্রাপ্ত এবং আমরা জানি কীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে। আজ রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, জুলাই আন্দোলনেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি ঘটানো হয়েছে। প্রথমে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত কোনও দাবি ছিল না যে কারণে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিতে হবে। এরপর শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে কথা বলেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনও ধরনের ইস্যু ছিল না যার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনাগুলোর পেছনে তিনজন মানুষ কাজ করছে। যারা চিঠি দিয়ে বলেছেন আমরা সিন্ডিকেট সভা বয়কট করছি তারাই এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছেন। সরকারের নিয়োগ করা লোক এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। এ ধরনের কাজ করতে ওনাদের আইনি বাধা আছে। তারা এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। এরপরও তারা এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও তথ্যই গোপন থাকে না।
অধ্যাপক শুচিতা শরমিন বলেন, আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এসেছি শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য। যোগদানের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের কী প্রয়োজন তা নিয়ে কাজ করে চলছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবারের মতো প্রো-ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আসার পর গেস্ট হাউজে থাকছেন। তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাকে বলা হয়েছে আপনি আপনার সম্মান রক্ষার্থে বাসা ভাড়া করে থাকবেন। ইউজিসি থেকে জানতে চেয়েছে প্রোভিসি কেন গেস্ট হাউজে থাকছেন? আর প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের গেস্ট হাউজের জন্য কেন আসবাবপত্র কিনতে হবে? তারা কি গেস্ট- প্রশ্ন রেখেছেন।
উপাচার্য বলেন, প্রো-ভিসি উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া বেশ কয়েকটি দাফতরিক চিঠি ইস্যু করেছেন। তা তিনি কোনোভাবেই পারেন না। চিঠি ইস্যু করতে হলে উপাচার্যের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু তিনি কিছুই মানছেন না।
তার অভিযোগ, প্রো-ভিসি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভুল তথ্য সরবরাহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। তবে তিনি যে কাজগুলো করছেন তা বর্তমান সরকারের আমলে কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য যখনই পরিবেশ সৃষ্টি করছি তখনি গন্ডগোল তৈরির জন্য ইন্ধনে জোগাচ্ছে।
উপাচার্য বলেন, গত শুক্রবার উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী আজেবাজে কথা বলে স্লোগান দেয়। এসময় তারা বুলডোজার দিয়ে উপাচার্যের বাসভবন গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় বাসভবনের লোহার গেট ভাঙচুর করা হয়। জুলাই আন্দোলনের সময়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। সিন্ডিকেট সদস্যদের উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আমার প্রাণের জায়গা রয়েছে। কিন্তু যারা এ ধরনের গন্ডগোল করছে তাদেরকে ভিন্নভাবে দেখতে সরকার থেকে নির্দেশনা রয়েছে।
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর যে আচরণ সেটা যদি আমি না দেখি, এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ও সম্মান নষ্ট করার মতো ঘটনা ঘটানো হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মামলা হবে। মামলা প্রত্যাহার করতে হলে তাদেরকে আসতে হবে উপাচার্যের সঙ্গে বসতে হবে। তাদের মধ্যে যদি অনুশোচনা হয় তাহলে অবশ্যই মামলা প্রত্যাহার হবে। আমিতো শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার জন্য বসি নাই। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন মানবিকতা ও উন্নয়ন কল্যাণ দেখতে চাই। ধ্বংসাত্মক দেখতে চাই না।
প্রসঙ্গত, উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট থেকে দুজন শিক্ষক প্রতিনিধিকে বিধিবহির্ভূতভাবে বাদ দেওয়া ও ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আকস্মিক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। তারা উপাচার্যের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট ও বাসভবনের মূল ফটকে তালা দেন।
পরদিন শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনে পূর্বনির্ধারিত সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকলে বাতিলের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। উপাচার্যের অভিযোগ, তার বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী বুলডোজার দিয়ে বাসভবন গুঁড়িয়ে ফেলা ও আগুন দেওয়ার হুমকি দেন।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সানোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় অভিযোগটি করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ার ঘটনায় আজ রবিার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে তারা প্রতিবাদ জানান। দুপুরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ বা মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন করে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এ সময় অভিযোগ প্রত্যাহারে ছয় ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। তবে সন্ধ্যা ছয়টা আলটিমেটামের সময় শেষ হলেও কর্তৃপক্ষ অভিযোগ প্রত্যাহার করেনি।