এক বছরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্রীর আত্মহনন, চেষ্টা আরও ১১ শিক্ষার্থীর

রিবনা শাহারিন, বৃষ্টি সরকার, দেবশ্রী রায় ও শেফা নূর ইবাদি
রিবনা শাহারিন, বৃষ্টি সরকার, দেবশ্রী রায় ও শেফা নূর ইবাদি  © টিডিসি ফটো

এক বছরের ব্যবধানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ৪ ছাত্রী। আত্মহননের চেষ্টা করলেও বেঁচে গিয়েছেন আরও ১১ জন শিক্ষার্থী। তাদের প্রত্যেকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেও পেছনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কারণ। আত্মহননকারী ৪ জনই নারী শিক্ষার্থী। তারা হলেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিবনা শাহারিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বৃষ্টি সরকার, ফিন্যান্স এণ্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী দেবশ্রী রায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শেফা নূর ইবাদি।

আত্মহত্যা চেষ্টা করেও বেঁচে যাওয়া মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের ৪ ছাত্র, শেরে বাংলা হলে তিনজন ছাত্র, শেখ হাসিনা হলে একজন ছাত্রী, রূপাতলী হাউজিং এলাকায় নিজ নিজ মেসে দুজন ছাত্র ও এক ছাত্রী, শেখ হাসিনা হলের সামনে এক ছাত্র এবং ঝালকাঠিতে নিজ বাসভবনে একজন ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।

আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিবনা শাহরিন আত্মহত্যা করেন পারিবারিক কারণে। তার বাবা বেঁচে ছিল না, মায়ের সাথে চাচাদের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। পরিবারিক অবহেলা এবং মায়ের এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ডে তার ভিতর চলে আসে এক ধরনের হতাশা ও একঘেয়েমি ভাব, ১ম বর্ষের এই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না কোনো বন্ধু, মিশতো না সহপাঠীদের সাথে। শেষ পর্যন্ত বেঁচে নেয় আত্মহত্যার পথ। ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের পেছনে মোল্লা ছাত্রী নিবাসের একটি বন্ধ কক্ষ থেকে মৃত্যুর দুই থেকে তিন দিন পর ঐ ছাত্রীর অর্ধগলিত, ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। রিবনার মায়ের দাবি, তার মেয়ে মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্ত ছিল এবং সে একা থাকতে পছন্দ করতো। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে।

গত ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে প্রেম ঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বৃষ্টি সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে থেকে প্রেমিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় তার। বৃষ্টি সরকারের আত্মহত্যার খবর জেনে তাৎক্ষণিকভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন প্রেমিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দেবশ্রী রায় স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহ ও সাংসারিক অশান্তির কারণে আত্মহত্যা করেন গত ১৭ মার্চ। বাবার বাড়ি সাতক্ষীরা এবং স্বামীর বাড়ি খুলনা হলেও স্বামীর কর্মস্থল বরগুনা সদর থানায় একটি ভাড়া বাসায় ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রেমের বিয়ের মাত্র তিন মাস পর আত্মহত্যা করেন এই শিক্ষার্থী। দেবশ্রী রায় ও স্বামী কঙ্কন রায়ের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো। নানা কারণে মেয়ের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো বলে জানান দেবশ্রীর বাবা-মা।

45c54e1b-5baf-4dc6-959b-10234f5f70ae দেবশ্রী রায়

সর্বশেষ গতকাল ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেফা নূর ইবাদি আত্মহত্যা করেছেন। প্রেম ঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

আত্মহত্যার বিষয় জেনে দুঃখ প্রকাশ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কয়েকদিন আগেও এই বিষয়ে একটি কাউন্সেলিং সেমিনার হয়েছে। বর্তমানে  বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এসে মাসে ২ দিন করে সেবা দেন, তারা সরাসরি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। আমরা ইতোমধ্যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চেয়ে ইউজিসিতে চিঠি দিয়েছি। অতি শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পাবো। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের আরো আন্তরিক ও বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রেম-ভালোবাসা ও পরকীয়াকেই বেশি দায়ী করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. আ.ক.ম.রেজাউল করিম। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা প্রেম- ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ছে, আবার কেউ কেউ পরকীয়া করছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্পর্কের কিছুদিনের মাঝেই তাদের মাঝে বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে সেই হার অনেক বেড়ে গেছে। আবার একই ব্যক্তি একসাথে একাধিক সম্পর্ক করছে। অনেক সময়ই দেখা যায়, একটা মেয়ের সাথে অনেকগুলো ছেলে প্রেম করতে চায়, সুতরাং খুব সহজেই সে অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু ছেলেরা সেটা খুব সহজে পারে না। আবার শারীরিক সম্পর্ক করে ছেলেরা অনেক সময় ব্লাকমেইল করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাদের মাঝে যেকোনো একজন প্রতারণা করে, অন্যজন সেটা মেনে নিতে পারে না। তখন অতিরিক্ত আবেগি হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এছাড়াও পারিবারিক অশান্তি, হতাশার কারণেও মানুষ আত্মহত্যা করে, তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রেম ঘটিত কারণেই আত্মহত্যা করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

2913c41c-b929-4921-b5e4-802c73a079db শেফা নূর ইবাদি

তিনি জানান ,মনোবিজ্ঞানের গবেষণামতে যখন কেউ কারো সাথে প্রতারণা বা অন্যায়-অত্যাচার করে, তখন ভুক্তভোগীও তার প্রতিশোধ নিতে চায়। কিন্তু যখন সেটা নিতে ব্যর্থ হয় তখন সে নিজের উপরে প্রতিশোধ নেয়। এজন্য অনেকে হাত কাটে, নেশা করে, বিভিন্ন ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়,এমনকি আত্মহত্যাও করে।

আত্মহত্যা প্রবণতা কামানো উপায় হিসেবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলের ব্যবস্থা করা। শিক্ষক ও অভিভাবকের উচিত শিক্ষার্থীদের সাথে আরো বন্ধু-সুলভ সম্পর্ক রাখা,তাদের মোটিভেশন দেওয়া, তাদের সমস্যাগুলো জানা ও সমাধানের চেষ্টা করা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করা ও স্থায়ীভাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence