আবাসিক হলে যেভাবে কাটছে রমজান

পুষ্টিহীন খাবার খেয়ে ‘কায়দা করে বেঁচে আছেন’ ববির আবাসিক শিক্ষার্থীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে রমাজানের অপেক্ষা করে। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে রমজানের আলাদা একটা আমেজও কাজ করে। সবাই মিলে একসাথে বসে রুমে নয়তো হলের ছাদে বা মাঠে বসে ইফতার করা। সেহারিতে ডাকাডাকি করা, তারাবি আদায় একসাথে। অন্যরকম এক আবেগ কাজ করে রমজানে। হলগুলো নতুন এক রূপ পায়। কিন্তু এই আনন্দ আর প্রীতির আড়ালে কিছু বিষয় আনন্দকে কিছুটা মলিন করে দেয়। রমজান আসলেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে শত আনন্দের মাঝেও বদনে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। 

বিশেষ করে সেহরির খাবারের মান ও দাম নিয়ে। হলের ডাইনিংয়ে যে মানের খাবার বিক্রি করে সেহরির জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই মানের খাবার খেয়ে রোজা রাখা খুবই কষ্টকর। এইসব নিয়েই রমজানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থীরা রমজানের দিনগুলো কেমন করে পার করছে তা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি তুলে ধরেছে। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চারটি আবাসিক হল রয়েছে। ছাত্র হল দুটি বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলা। আর ছাত্রী হল দুটি শেখ হাসিনা ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। 

বঙ্গবন্ধু হল
বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলের একটি বঙ্গবন্ধু হল। হলটিতে রমজানের ইফতারি হিসেবে থাকে চপ, পিঁয়াজু, ছোলা-মুড়ি, ফিরনি ইত্যাদি। সেহরির জন্য রাতে ১০টার আগে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়, আর রাত দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে পার্সেল খাবার নিতে হয়। সেহরির খাবার চলে সেহরি খাওয়ার শেষ সময় পর্যন্ত।

বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিংয়ে সেহরির খাবার হিসেবে সাধারণত রুই মাছ, মুরগি, ডিম মাঝে মাঝে সুরমা মাছ বা গুড়ামাছ সাথে সবজি থাকে। রুইমাছ, সুরমা মাছ সাথে সবজি-ডাল ৬০ টাকা, মুরগী-সবজি ৫০ টাকা, ডিম-সবজি ৪০ টাকা। হলগুলোর মাঝে বঙ্গবন্ধু হলের খাবার তুলনামূলক ভালো। খাবার খেতে উপচে পড়া ভিড়ও থাকে, বসার জায়গা পাওয়ার জন্য দাড়িয়ে থাকা লাগে লাইনে।

নয়ন বিশ্বাস নামের হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, বেঁচে থাকার জন্য আমরা এই খাবার খায়, খাবারে কোন পুষ্টিগুণই নেই।

শেরে বাংলা হল
শেরে বাংলা হল শিক্ষার্থীদের কাছে আরেক দুঃখের নাম এই হলের ডাইনিং। দাম যতই বৃদ্ধি হোক না কেন বাড়েনা খাবারের স্বাধ ও মান অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এই হলে রমজানে কেমন চলছে এই বিষয়ে কথা হয় ১০ থেকে ১৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে। সরেজমিনে ইফতারি কিনতে গিয়ে দেখা যায় হলের ডাইনিংয়ে বেশ ভিড় ইফতার নিতে আসছে সবাই।

কথা বলে জানা যায়, ইফতারির আইটেম গুলো মোটামুটি ভালো এটা নিয়ে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। ইফতারি হিসেবে থাকে বেগুনি, আলুচপ, পিয়াজু ও ছোলাবুট। রাতের খাবার হিসেবে থাকে বিভিন্ন রকমের ভর্তা, ডিম ভুনা, সবজি। সেহরির খাবার হিসাবে পাওয়া যায় মুরগি-ভাত-সবজি ৬০ টাকা, মাছ-সবজি-ভাত ৬০ টাকা, ডিম-ভাত-সবজি ৪০ টাকা।

কথা হয় শেরে বাংলা হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে। ৪০০৩ নাম্বার রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ইয়াকিন আরাফাত বলেন, শেরে বাংলা  হলের সেহরির খাবারের দাম বাড়লেও মান কমেছে। মুরগির ঝোল শেষ হয়ে যায় আগে থেকেই, কোনদিন বা ভাত শেষ হয়ে যায় শেষের দিকে যারা যায় তাদের আর খাওয়া হয় না। হলে এমনি চলে, এখন বিষয়গুলো অভ্যাস হয়ে গেছে খাবার হিসেবে যে সবজি দেওয়া হয় মাঝে মাঝে সিদ্ধ হয়না মনে হয় কাঁচা সবজি খাচ্ছি। গতকালকে পেঁপে সবজি নিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম সবজি সিদ্ধই হয়নি।

কথা হয় ৫০০২ রুমের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন হৃদয়ের সাথে। তিনি জানান, হলে রমজান মাসে খাবারের কষ্ট হয় সবারই, যে খাবার ডাইনিং বিক্রি করে ঐ খাবার খেয়ে থাকা খুবই কষ্টের। গতবছর রমজানে হলে খাবারের সমস্যার জন্যই হল থেকে চলে গিয়ে মেসে থাকতাম।

জাকির জানান, আমি প্রথম কয়েকদিন হলের ডাইনিং সেহরি করতাম, কিন্তু খাবারের মান ভালো না হওয়ায় এখন বাইরে করি। মাছ রান্না হলে মনে হয় শুটকি মাছ রান্না হয়েছে মাছ সিদ্ধই হয়না। ৬০ টাকায় ২ পিচ মুরগি দিলেও মুরগি রান্না একদম বাজে। আমি কয়েকদিন নিয়ে না খেয়ে চলে আসছি। হলের শিক্ষার্থীরা এই রমজানে কোনরকম খেয়ে বেঁচে আছে এই পুষ্টিহীন খাবার খেয়ে।

শেখ হাসিনা হল
ছেলেদের হলগুলোতে সেহরির খাবার রাত আড়াইটা তিনটার দিকে দেওয়া হলেও মেয়েদের হলে রাত ৮টার সময় দেওয়া হ সেহরির খাবার।  খাবার হিসেবে এখানে থাকে মাছ+সবজি ৩৫ টাকা, মুরগি ও সবজি ৩০ টাকা ভাত আলাদা করে কিনতে হয় এখানে।

শবনম নামের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সেহরির খাবার দেওয়া হয় রাত ৮টায়। এই খাবার অনেকসময় সেহরিতে নষ্ট হয়ে যায়। তখন না খেয়েই রোজা রাখা লাগে আমাদের। অভিযোগ করেন খাবারের মান নিয়েও বলেন মাছগুলো খাবার উপযোগী থাকে না পঁচা পঁচা গন্ধ আসে আর যে মোটা চালের ভাত দেয় তা না পারি খেতে না পারি সইতে।

আরও পড়ুন: ভিসির কাছে বিচার চাইলেন মারধরের শিকার জবির সেই অধ্যাপক

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল
সদ্যচালু হওয়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় রমজানের খাবারের হালচাল নিয়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস পরীক্ষা না থাকলে রমজানের প্রথম দিনই বাসায় চলে যেতাম। রমজানে এই হলের ডাইনিংয়ে খাবার খেয়ে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য। এখানেও ইফতারি হিসাবে থাকে ছোলা, পিয়াজু, আলুরচপ আর বেগুনি। সেহরির খাবার হিসেবে থাকে মাছ ও সবজি ৪০ টাকা, মু্রগি ও সবজি ৩০ টাকা মাঝে মাঝে ৩৫ টাকা দিয়েও পাওয়া যায়।

আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, রমজান আসলেই আমাদের প্রথমেই আশা থাকে কবে থেকে বন্ধ হবে ক্যাম্পাস। সেদিন বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে একহয়ে ইফতারি করব। মায়ের হাতের রান্না খাবারে তৃপ্তির সাথে সেহরি করব, তখন হলের এই খাবারের কথা ভুলে যাব। ছুটি শেষে এসে আবার হলের এই খাবারের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠবে। এইভাবেই পার হয়ে যাবে, একদিন এই বিষয়গুলো স্মৃতি হিসেবে জমা হবে তখন চাইলেও হয়তো আর এই ডাইনিংয়ের খাবার খাওয়া আর হবে না। তখন সকল অভিযোগুলো আফসোসে পরিণত হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন শিক্ষার্থী দেবশ্রী দেবনাথ বলেন, হলে আমার রুমমেটরা মুসলিম তারা ইফতারের সময় আমাকে তাদের সাথে খেতে ডাকে। বিভিন্ন সংগঠন এবং এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিলের দাওয়াতে যাই। সিনিয়র-জুনিয়র একসাথে বসে সবাই খোলা আকাশের নিচে ইফতার অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। 

উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার (৯ এপ্রিল) থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হলেও আগামী ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ হবে আবাসিক হলগুলো। এসময় অনেক আবাসিক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence