বিদায় নিচ্ছেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক

  © ফাইল ফটো

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের চাকরির মেয়াদ সামনে সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান চেয়ারম্যানের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হবে। সে হিসেবে ১৭ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন তিনি।

পিএসসি সূত্র বলছে, ১৭ সেপ্টেম্বর এক বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনে। এর মধ্য দিয়েই বিদায় নেবেন বর্তমান চেয়ারম্যান। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) পিএসসি জনসংযোগ কর্মকর্তা ইশরাত শারমীন ঈশিতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর স্যার অবসরে যাচ্ছেন। এ উপলক্ষে পিএসসি থেকে বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে।

সংবিধানের ১৩৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘পিএসসির চেয়ারম্যান বা কোনো সদস্যের দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর বা ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া—এর মধ্যে যেটি আগে ঘটবে সে পর্যন্ত কমিশনের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’ ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় ড. মোহাম্মদ সাদিক বিদায় নিচ্ছেন। তথ্যমতে, ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে পিএসসির চেয়ারম্যানের অবসরের বয়স ৬২ বছর থেকে ৬৫ বছর করা হয়।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ড. মোহাম্মদ সাদিককে পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সংবিধানের ১৩৮ (১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তাকে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরে ২ মে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। এর আগে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

১৯৮২ সালের নিয়মিত বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সাদিক ১৯৫৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। সিভিল সার্ভিসে নির্বাচন কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক, সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রথম সচিব ছিলেন।

বলা হয়ে থাকে, সম্প্রতি চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি যে চাকরিটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উঠেছে, তা হলো বিসিএস। এক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যানের অবদানও বেশ। কেন বিসিএস এত জনপ্রিয়- এমন প্রশ্নের জবাবে এর আগে পিএসসি চেয়ারম্যান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান পিএসসি প্রিলি থেকে শুরু করে নিয়োগ হওয়া পর্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় রাখে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের বিশ্বাস চলে এসেছে যে, কোন প্রকার তদবির ছাড়াই সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব। এটি বিসিএসে আবেদন বাড়ার অন্যতম কারণ।

দ্বিতীয়ত— বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও সামাজিক মর্যাদা।

তৃতীয়ত— আমরা যে শুধু ক্যাডার নিয়োগ দেই তা নয়, নন ক্যাডারেও ২ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দিয়ে থাকি। ফলে অনেক বেশি প্রার্থী আবেদন করছে।

চতুর্থত— একজন চাকরিপ্রার্থী বিসিএস প্রস্তুতি নিলে অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতিও হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ কেউ বিসিএস প্রস্তুতি নিলে ব্যাংক, শিক্ষক নিয়োগ এমনকি বিমানসহ বিভিন্ন স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে পারেন। এ কারণে একজন চাকরিপ্রার্থী বিসিএসকেই টার্গেট হিসেবে বেছে নেয়। এটিও বিসিএসে প্রার্থী বাড়ার অন্যতম কারণ।

পঞ্চতম— উচ্চশিক্ষার পর অনেক শিক্ষার্থীই দেশের বাইরে চলে যায়। আবার অনেকের মধ্যেই দেশপ্রেম কাজ করে; ফলে তারা দেশেই থেকে যায় এবং দেশের জন্য কিছু করতে চায়। এ ধরণের বড় একটি শ্রেণি বিসিএস দিয়ে থাকে।

বিসিএস জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আরেক কারণ হলো— অনেক চাকরিপ্রার্থীই নিজের দেশ, বাংলাদেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধসহ বিশ্ব জগৎ সম্পর্কে জানতে চায়। বিষয়গুলো জানার মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে চায়।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোট ১৩ জন ব্যক্তি। পিএসসির প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ড. এ কিউ. এম বজলুর করিম। তিনি ১৯৭২ সালের ১৫ মে থেকে ১৯৭৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আর বর্তমানে ১৩তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক।

আরো পড়ুন: পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে ৪১তম বিসিএসের প্রিলি নয়: ড. মোহাম্মদ সাদিক

পড়ুন:  পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের সাক্ষাৎকার


সর্বশেষ সংবাদ