হঠাৎ বেগতিক করোনা: অনলাইন ক্লাস বন্ধ ঘোষণা দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের

অনলাইন ক্লাস বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন আইএসইউ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
অনলাইন ক্লাস বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন আইএসইউ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে পুষিয়ে নিতে বেশ ক’দিন ধরেই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই এই প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রাজধানীর দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইউনাইটেড ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এর আগে শীর্ষস্থানীয় এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করছেন বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান। সে সময় তিনি বলেছিলেন, এই আপৎকালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা অনলাইনে সীমিত পর্যায়ে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটা মূলত বসে না থেকে সময়কে কিছুটা কাজে লাগানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেটের বেহাল অবস্থার কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। তাদের ভিডিও ও অডিও ফাইলগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করার অনুরোধ করছি। তাও না পারলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইউনিভার্সিটি খোলার পরে যথেষ্ট পরিমাণ সময় হাতে নিয়ে ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে আমরা পরবর্তী সেমিস্টার শুরু করব।

জানা যায়, গত ২৩ মার্চ করোনার বন্ধের সময়টাতে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়ে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। একইভাবে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লাইভ ক্লাস অথবা ভিডিও টিউটোরিয়াল পাঠানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিও।

ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নির্দেশনার আলোকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনার বন্ধে অনলাইনে পাঠদান দেয়া হচ্ছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নেয়া এ ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হারও প্রায় শতভাগ। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মশালারও আয়োজন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই অনলাইনে সচল রয়েছে। প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে পাঠ নিচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সভা করা হচ্ছে। এমনকি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দিয়েছি।

এদিকে ইউআইইউ-এর আগে অনলাইন ক্লাস বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। বুধবার এক বার্তায় সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম মফিজুল ইসলাম বলেন, করোনা সংকট শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর তথা ‌২৯ মার্চ থেকে আমারা অনলাইন ক্লাস শুরু করি। আমাদের মনে হয়েছিল, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে এবং তারা সময়মতো কোর্স শেষ করতে করতে পারবে না। তাছাড়া চাকরির সুযোগও হারাবে। আবার আসন্ন নতুন সেমিস্টার প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কাও ছিল।

তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ধীরে ধীরে করোনারভাইরাস আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস চালু রাখতে আমরা আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বাধ্য করতে পারি না। নতুন সিদ্ধান্ত হলো- পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত সব অনলাইন ক্লাস আগামী ১২ এপ্রিল থেকে স্থগিত থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ