প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সক্ষমতা জানান দিচ্ছে ইউআইইউ’র সিএসই বিভাগ

  © টিডিসি সম্পাদিত

বর্তমান বাংলাদেশে ট্রেন্ডিং একটি সাবজেক্ট হলো কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে মুখস্থবিদ্যার নির্ভরতা কাটিয়ে যেসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে প্রযুক্তির রাজ্যে নিজের সৃজনশীল দক্ষতা তুলে ধরতে চান, তাদের জন্য সিএসই একমাত্র সুবর্ণ সুযোগ। বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) তরুণ শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে দুই দশক থেকে। ইউআইইউ সিএসই বিভাগে তিনটি প্রোগ্রাম রয়েছে। বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ডেটা সায়েন্স এবং এমএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। 

তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি এবং এ সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত ও কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ব্যতিক্রম সিএসই বিভাগ। বর্তমানে বিভাগটিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক মিলিয়ে মোট ৯২জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার আছেন। যাদের মধ্যে ১২জন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপকসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত আছেন ১৬ জন ফ্যাকাল্টি। জাপান, আমেরিকা, ক্যানাডা, ইংল্যান্ড, জার্মানি এবং চায়না থেকে রয়েছে যাদের পিএইচডি ডিগ্রি। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্যাকাল্টি বুয়েট থেকে এবং অন্যরা আইইউটি, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে ইউআইইউ'র সিএসই বিভাগ কারিকুলাম প্রণয়ন করে। নিজেদের দক্ষতার সাথে পছন্দ ঠিক রাখতে ইউআইইউ'র এই বিভাগটি শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দেয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষে যাওয়ার পর ডেটা সায়েন্স, নেটওয়ার্কিং, আইসিটিসহ ৭টি ট্র্যাক থেকে মেজর নেয়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা চাহিদা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সেগুলোকে বেছে নিতে পারেন বলে জানান।

সম্প্রতি অ্যাকাডেমিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রি কোলাবোরেশনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছে সিএসই বিভাগ। শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ইন্ডাস্ট্রি ইন্টার্নশিপ বিষয়ক একটি কোর্স সংযুক্ত করেছে। যার মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন। বিভাগটির প্রধান জানান, এই কোর্সটি ৩ ক্রেডিটের একটি কোর্সের সমান। যার মাধ্যমে বিভিন্ন টেক কোম্পানি গুলো তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিংবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। এই কোর্সের মূল্যায়ন বিভাগের হাতে থাকে না, বরং ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট যারা আছেন, তারা শিক্ষার্থীদের কাজের উপর ভিত্তি করে মার্কিং করে থাকেন। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার আগেই এই কোর্সের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে ইউআইইউ'র সিএসই বিভাগ কারিকুলাম প্রণয়ন করে। নিজেদের দক্ষতার সাথে পছন্দ ঠিক রাখতে ইউআইইউ'র এই বিভাগটি শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দেয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষে যাওয়ার পর ডেটা সায়েন্স, নেটওয়ার্কিং, আইসিটিসহ ৭টি ট্র্যাক থেকে মেজর নেয়ার সুযোগ রয়েছে—প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নুরুল হুদা, বিভাগের প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

বিভাগীয় প্রধান আরো বলেন, ৩ ক্রেডিটের এই কোর্সের ৭০ শতাংশ নম্বর প্রদান করেন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা। এর বাইরে ইউআইইউ আরো ৪ জন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করেন যে বাস্তবে তারা কতটা শিখতে পেরেছেন। সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের এই শেখন প্রক্রিয়া কতটা অর্জিত হয়েছে, স্বীকৃতি দেয়ার আগে সেটা বাংলাদেশ বোর্ড অব অ্যাক্রিডেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের উদ্দেশ্যের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নেয় সিএসই বিভাগ। নিজেদের প্রমাণের এই সুযোগ শিক্ষার্থীরা অন্য কোথাও পাবেন কিনা আমার জানা নেই।

কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারীরা দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতে পারেন। প্রযুক্তির যত ভিন্নতা এবং উদ্ভাবন আসবে এই সেক্টরের শিক্ষার্থীদের তত বেশি মেলে ধরার সুযোগ পাবেন। বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েটরা নিজেরা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। বিভাগীয় প্রধান বলেন, সিএসই'র শিক্ষার্থীর কাজে পরিধি অনেক বড়ো। বিশেষত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, নেটওয়ার্কিং, ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটিং, বিজনেস ইন্টেলিজেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে তারা কাজ করতে পারেন। তবে বাংলাদেশে সচরাচর শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার টেস্টার, ডেটা অ্যানালিস্ট ছাড়াও মেশিন লার্নিং এবং সাইবার সিকিউরিটি রিলেটেড সেক্টরে বেশি কাজ করেন।

বাংলাদেশের শিক্ষা কারিকুলামে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মুখস্থ নির্ভর থাকেন। এমন প্রবণতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীল দক্ষতায় কিছুটা দুর্বল থাকেন। মুখস্থনির্ভর পাঠ্য অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসার তাগিদ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সিএসই থেকে ভালো করার জন্য একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে চিন্তাশক্তি কিছুটা প্রবল থাকা জরুরি। একেবারে অন্ধভাবে কেউ সিএসই পড়তে চাইলে সেটার আগে তাকে তার সক্ষমতা নিয়ে ভাবা জরুরি। না হলে শেষে ভালো করার সুযোগ কমে যায়। সিএসই'র একজন শিক্ষার্থীকে প্রোগ্রামিং পারতে হবে। প্রোগ্রামিং পারতে হলে শিক্ষার্থীর লজিক চিন্তা করার সক্ষমতা থাকা জরুরি। আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চিন্তা শক্তিতে প্রাধান্য দিতে হবে। যেকোনো বিষয়ে ভালো করতে হলে একজন শিক্ষার্থীর মুখস্থ নির্ভরতার চেয়ে চিন্তাশক্তি বেশি কাজে দেয়।

ইউআইইউ'র সিএসই বিভাগে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে বাস্তবিক শিক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের শেখন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে ২৮টি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। বিভাগীয় প্রধান বলেন, প্রতিটি কোর্সকে আমরা মার্কেট ওরিয়েন্টেড করে প্রস্তত করেছি। মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত কোর্স কন্টেন্টগুলো পরিবর্তন হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের শেখন প্রক্রিয়ায় মেশন লার্নিং, ডেটা সায়েন্স, আইসিটি, ওয়েব প্রোগ্রামিং, মোবাইল কমিউনিকেশন এবং এন্ড্রয়েডসহ যুগোপযোগী কন্টেন্টগুলো প্রাধান্য দেয়া হয়। আমাদের লক্ষ্য, গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর একজন শিক্ষার্থী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জব মার্কেটে সুযোগ পান। শিক্ষার্থীদের জন্য সিএসই বিভাগ বিশেষভাবে স্থাপন করেছে, সিসকো ল্যাব, মেশিন লার্নিং ল্যাব, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, ডেটা সায়েন্স ল্যাব এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ল্যাব।

বাংলাদেশে এখনো সিএসই সংশ্লিষ্ট চাকরি কিংবা সামগ্রিক বাজার বেশি বড়ো নয়। তবে এই বাজার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, পিউর কম্পিউটার সায়েন্স, কিংবা আইসিটি থেকে পড়ুয়া একজন গ্র্যাজুয়েট সংশ্লিষ্ট সেক্টরে যে ভূমিকা রাখতে পারেন সোশ্যাল সায়েন্স কিংবা অন্য ফিল্ডের গ্র্যাজুয়েটরা সেটা পারেন না। 

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেরণা তৈরি করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করে। উদ্ভাবনী নেশায় এসব শিক্ষার্থীরা দিনরাত কাজ করেন। বিভাগীয় প্রধান বলেন, আমাদের রোবোটিকস ল্যাবে শিক্ষার্থীরা রাত জেগে রোবট বানায়। অনেক শিক্ষার্থী বাসায় না গিয়ে দিনরাত এখানে পড়ে থাকেন। ইউআইইউ’র মার্স রোভার টিমের শিক্ষার্থীরা আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পর্যায়ক্রমে ১৩ তম, নবম এবং সর্বশেষ পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে এবং এখন পর্যন্ত সমগ্র এশিয়ায় তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্মান অর্জন করেছে। চ্যাম্পিয়ন টিমে অধিকাংশ সদস্য সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। এই বছরও ইউআইইউ আরও উন্নত ফলাফল প্রদর্শন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে একটা গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে সিএসই বিভাগ নতুন সব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করবে। সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে এবং সেটিকে বাণিজ্যিকভাবে রূপান্তরিত করবে—প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নুরুল হুদা, বিভাগের প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির “টিম অ্যাপোক্যালিপস” আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২৩ এবং “চেইন রিঅ্যাকশন” টিম ৫ম ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-২০২৪ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাইবার সিকিউরিটি ট্র্যাকও অনেক শক্তিশালী। সিএসই বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা ৬৩ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত রয়েছেন। 
নতুনদের উদ্দেশ্যে বিভাগীয় প্রধান বলেন, ভর্তি হওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এবং যে বিভাগে ভর্তি হবেন সেটা সম্পর্কে তথ্য যাচাই করতে হবে। বর্তমান যুগে স্টেম এডুকেশনের পাশাপাশি আর্টসকেও প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ মানবিক শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। সবমিলিয়ে ইউআইইউ একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষতা নিশ্চিতের পাশাপাশি মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ার জন্য কাজ করে। এখানে শিক্ষার্থীরা বেশকিছু ক্লাব কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারে। যেটা তাদের শেখন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

সিএসই বিভাগকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুরুল হুদা। গুণী এই অধ্যাপকের ভাষ্য, ভবিষ্যতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে একটা গবেষণা নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে সিএসই বিভাগ নতুন সব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করবে। সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে এবং সেটিকে বাণিজ্যিকভাবে রূপান্তরিত করবে। সেটার ফল ভোগ করবে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগণ থেকে পুরো পৃথিবীর মানুষ। এমন ভবিষ্যৎ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে ইউআইইউ'র নিজস্ব রিসার্চ হাব আছে।


সর্বশেষ সংবাদ