ছিনতাইকারীর হাতে ৩ দিনে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নেপথ্যে কী?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ PM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ PM
সম্প্রতি রাজধানী ও এর আশপাশে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। গত ১২ ও ১৪ ডিসেম্বর মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সাম্প্রতিক দুটি মর্মান্তিক ঘটনা। নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সমাজের আশায় যারা উচ্চশিক্ষার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই স্বপ্নযাত্রা থেমে গেল দুর্বৃত্তদের ছুরির আঘাতে।
এদিকে, রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেই সঙ্গে সকালের দিকে ছিনতাই বেশি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আজ রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র নারায়ণঞ্জের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছিলেন। ঘটনার দুই দিনর পর গতকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সীমান্তের বাবা আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সীমান্তকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। তার শরীরে বেশ কয়েকটি জখম ছিল।
এর আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানকে (২৬) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি উপজেলার মৌচাক জামতলা এলাকার তানভির হোসেন নান্নু মিয়ার ছেলে। চাকরি করতেন উত্তরার একটি কল সেন্টারে।
তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রবিবার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
এ সময় তারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবির মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে একটি বিবৃতি দিতে হবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিহানকে একটি ফিচার করতে হবে; পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতে হবে; ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচার শুরু হবে এবং যতক্ষণ তাদের গ্রেপ্তার না করা হবে, ততক্ষণ ফেসবুক প্রোফাইলে তার ছবি ও মৌন প্রতিবাদ চলবে।
এই হত্যাগুলোর পেছনে অপরাধ চক্রের দুঃসাহস এবং দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি এসব অপরাধকে আরও বেশি উৎসাহিত করছে বলেও জানান তারা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রবিবার তিনি বলেন, শেষ রাতের দিকে সাধারণত ছিনতাই বেশি হয়। আমরা পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছি, শেষ রাতে পেট্রোলিং বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হয়ে ছিনতাই শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যেকোনো মূল্যে অপরাধ কমিয়ে একটি নিরাপদ শহর ও সমাজ গড়তে বদ্ধপরিকর।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের একটি বৈষম্যহীন এবং নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি জোরদার এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তুলছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার ও সাধারণ মানুষ।