বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফুড ভ্লগারের বিতর্কিত মন্তব্যের সমালোচনা

ফুডআপ্পি ওরফে ফাবিহা হাসান মনীষা
ফুডআপ্পি ওরফে ফাবিহা হাসান মনীষা  © সংগৃহীত

দেশের ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অশ্লীলতা শিখানো হয়’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন ‘ফুডআপ্পি’ নামে পরিচিত এক ফুড ভ্লগার। সম্প্রতি ফাবিহা হাসান মনীষা নামের ওই ভ্লগার তার ফেসবুক ‘অনেক দামি প্রাইভেট ভার্সিটিতে অশ্লীলতা’ শিখানো— উল্লেখ করে একটি পোস্ট করেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে সরব হন দেশের সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার পর ওই পোস্ট সরিয়ে ফেলা, লাইভে এসে তার বিরূপ ও অসন্তোষজনক ব্যাখ্যা এবং আরেকটি পোস্টের মাধ্যমে ক্ষমাও চেয়েছেন সমালোচিত ওই ভ্লগার।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দেয়া ওই পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘‘ভাগ্যিস আমার বাপ মা’র অঢেল টাকা ছিলো না, থাকলে তারাও মনে হয় টাকা দিয়ে আমাকে অনেক দামি প্রাইভেট ভার্সিটিতে অশ্লীলতা শিখতে পাঠাতো’’—এমন পোস্টের পরপরই এ নিয়ে সরব হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। তারা ওই পোস্টের কমেন্টে এর নানারকম জবাব দিতে থাকেন। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অশ্লীলতা শেখানো হয় এমন মন্তব্য করে পুরো বেসরকারি উচ্চশিক্ষাখাতকেই অপমান করা হয়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন ছোটপর্দার তারকারাও। এ নিয়ে পাল্টা পোস্টও দিয়েছেন তারা।

সামাজিক মাধ্যমে করা পোস্টটি বিতর্কের মুখে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

ফুডআপ্পি ওরফে ফাবিহা হাসান মনীষা বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছে। তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেওয়া তথ্য মতে, তিনি রাজধানীর আজিমপুরস্থ সরকারি অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স কলেজে (সাবেক হোম ইকোনমিক্স কলেজ) পড়াশোনা করেছেন। মূলত, বিভিন্ন খাবারের প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্টের খাবারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যালোচনার ভিডিও করেই সামাজিক মাধ্যমে উত্থান ফাবিহা হাসান মনীষার।

আমি বর্তমানে আইউবিতে মাস্টার্স করছি। আমার ব্যাচমেট একজন নেই যারা জব করছে না। কিংবা জবের চেষ্টা করছে না। অনেককে দেখছি ভালো জব পাচ্ছে না তাই টিউশনি করাচ্ছে। যেহেতু আমার আন্ডারগ্রেডও একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছিল, তখনও আমার অনেক ক্লাসমেটদের দেখেছি পার্টটাইম জব কিংবা টিউশনি করতে—শবনম ফারিয়া।

ওই ফুড ভ্লগার পোস্ট করার কয়েক ঘণ্টা পর তীব্র সমালোচনার মুখে তা সরিয়ে ফেলেন। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়ে আরেকটি পোস্ট করেন এবং সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের যুক্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যদিও তাতে তিনি কোনো যৌক্তিক ও সুষ্পষ্ট তথ্যভিত্তিক বক্তব্য বা অবস্থান তুলে ধরতে পারেননি। এরপর আবার ফাবিহা হাসান মনীষা ও তার স্বামী মাহদী হাসান মান্নাকে নিয়ে একটি লাইভে এসে বিষয়টি নিয়ে দু’জনে আরও রসিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতে থাকেন। লাইভে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অর্থের উৎস নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ অশালীন মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইউবি) শিক্ষার্থী ও ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। বিতর্কিত ওই পোস্টে তিনি মন্তব্য জানিয়ে লিখেছেন, তাদের টাকা আরেকটু কম থাকলে আরও ভালো হতো, তাহলে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট কিনে এসব ননসেন্স স্ট্যাটাস দিতে পারতেন না। আর আমার মনে হচ্ছে, তাদের টাকা না থাকায় ভালোই হয়েছে, আপনার যেই জ্ঞান আর চিন্তা ধারা; তাতে আপনাকে প্রকৃত শিক্ষা তো দিতে পারতো না, অযথা তাদের টাকাটা নষ্ট হতো। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দেশের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পরিবারের অঢেল টাকা নেই বলেও যুক্ত করেন তিনি।

এরপর এ নিয়ে গতকাল একটি পোস্টও করেন ফারিয়া। তার মতে, আসল কথা হলো কাদের তারকা বা রোল মডেল কাকে বানাবেন বুঝে বানাবেন। একজন অযোগ্য মানুষকে তারকা বানিয়ে আরও ১০ জন অযোগ্য মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছেন বেফাঁস কথা বলে সেইটাকে আবার ডিফেন্ড করার। প্লিজ এটা করবেন না।

পোস্টটি করার কয়েক ঘণ্টা পর তীব্র সমালোচনার মুখে তা সরিয়ে ফেলেন ওই ভ্লগার। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়ে আরেকটি পোস্ট করেন এবং সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের যুক্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যদিও তাতে তিনি কোনো যৌক্তিক ও সুষ্পষ্ট তথ্যভিত্তিক বক্তব্য বা অবস্থান তুলে ধরতে পারেননি। এরপর আবার ফাবিহা হাসান মনীষা ও তার স্বামী মাহদী হাসান মান্নাকে নিয়ে একটি লাইভে এসে বিষয়টি নিয়ে দু’জনে আরও রসিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতে থাকেন। লাইভে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অর্থের উৎস নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ অশালীন মন্তব্য করেন।

‘‘বিষয়টা সরকারি-বেসরকারি নিয়ে না। একজন শিক্ষিত মানুষ কোনোদিন অশ্লীল ইঙ্গিত দিয়ে এটা বলতে পারে না যে মেজরিটি ছেলে মেয়ে যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং পরিবারের অঢেল টাকা নেই তারা কোনো সোর্স থেকে টাকা ইনকাম করে পড়াশুনা করে।’’

আমি বর্তমানে আইউবিতে মাস্টার্স করছি। আমার ব্যাচমেট একজন নেই যারা জব করছে না। কিংবা জবের চেষ্টা করছে না। অনেককে দেখছি ভালো জব পাচ্ছে না তাই টিউশনি করাচ্ছে। যেহেতু আমার আন্ডারগ্রেডও একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছিল, তখনও আমার অনেক ক্লাসমেটদের দেখেছি পার্টটাইম জব কিংবা টিউশনি করতে—যুক্ত করেন শবনম ফারিয়া। 

জনপ্রিয় ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরও এই ইস্যুতে ফেসবুকে সরব হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আপনি যে ভ্লগ বানান তার ৯০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট কিংবা শিক্ষার্থীদের। তিনি আরও যুক্ত করেন, আপনার কথিত এসব হালাল আয়ের উৎসের (ভ্লগিং) যোগান আসে সেই হারাম উপার্জনকারীদের কাছ থেকে?


সর্বশেষ সংবাদ