ডিআইইউতে নিষিদ্ধ সাংবাদিকদের সংগঠন, বহিষ্কারের হুমকি পাচ্ছেন সাংবাদিকরা

ডিআইইউতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায়  প্রশাসন-কর্তৃপক্ষের বাধা
ডিআইইউতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায়  প্রশাসন-কর্তৃপক্ষের বাধা  © সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সংবাদ প্রকাশ করার জেরে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি (ডিআইইউসাস) এর স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সংগঠন প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, সাংবাদিক সমিতির সকল কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ওয়েবপেজ/ফেসবুক পেজ এবং অন্য কোন বিশেষ মিডিয়া প্লাটফর্মে প্রচার করার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলো।

একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করলে বহিষ্কার করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি। সম্প্রতি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মুছা মল্লিক  ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের বাক স্বাধীনতা হরণে উঠে পড়ে লেগেছে। নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, হয়রানীর বিষয়ে মুখ খুললে চাপ প্রয়োগ, মতের বিরোধ হলে শিক্ষার্থীদের বহিস্কারের হুমকি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক নানা অনিয়মসহ শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রিক ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলছে।

এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে অন্তরালেই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার অসংখ্য নজির স্থাপন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবকে কুক্ষিগত নিয়মের মধ্যে এনে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি অর্জন ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা বাধাগ্রস্থ করছে।

অপরদিকে অনিয়মের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকদের একটি অংশ কথা বলার চেষ্টা করলে তাদেরকেও চাপ প্রয়োগ করা এবং গণমাধ্যমকে অসহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি দায়িত্বশীল ও সত্য সংবাদ প্রচার করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টায় মেতে উঠছে।

“সর্বশেষ, তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের প্রথমে বহিষ্কারের হুমকি এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করা যাবেনা মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।”

তারা আরও বলেন, সংগঠনটি ২০২০ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের হেনস্তা ও কণ্ঠরোধের অলীক স্বপ্ন দেখছে। যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত কলেজগুলো সাংবাদিক সংগঠনগুলোর জন্য জায়গা বরাদ্দসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করলেও বিপরীতে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমন সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে- বিশ্ববিদ্যালয়টি মুক্তবুদ্ধি চর্চায় অসহযোগিতা ও শিশুসুলভ আচরণ করছে।

ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যবসায়ী মনোভাবে সাংবাদিক সমিতি আঘাত হানতে পারে এমন মনোভাব থেকে মুক্ত চিন্তায় স্থায়ী বাঁধা দিতে চাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে সাংবাদিক সংগঠনের ওপর এমন নগ্ন সিদ্ধান্ত স্বাধীন গণমাধ্যম ও মুক্ত সাংবাদিকতা চর্চার পরিপন্থী বলেও মনে করে তারা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস এবং হেনস্তা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে বলে আমদের বিশ্বাস। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তবুদ্ধিচর্চার স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সামনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গণেশ চন্দ্র সাহাকে একাধিক কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধান, ডিন এবং উপদেষ্টাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিওটি, ভিসি, প্রো-ভিসি'র একটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সকল শিক্ষকরা অনুমোদনহীন ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিক সমিতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন পূর্বানুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, লোগো ব্যবহার করা ফেসবুক গ্রুপ, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব, ওয়েবপেজ এবং সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা, অনুমোদন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে ইফতার পার্টি ও অন্যান্য প্রোগ্রাম করা, নতুন সদস্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এই সমিতি করে আসছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের পরিপন্থী।

এছাড়াও সুনির্দিষ্টভাবে এই সমিতির কিছু সদস্যের নামে টিউশন ফি ছাড়া পরীক্ষা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা, শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা, পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বন এবং পরীক্ষার হলে নকল ধরা হলে শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুক্তবুদ্ধির চর্চায় সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন এবং ছাত্ররা চাইলেই যে কোন পত্রিকায় বা যে কোন সাংবাদিক সমিতির সাথে সংযুক্ত হতে পারে।

“তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোন পেশাজীবী সংগঠনের কোন প্রয়োজনীয়তা এই মুহুর্তে নেই। এ অবস্থায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির সকল ওয়েবপেজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীকে এই বিষয়ে সচেষ্ট থাকার জন্য বলা যাচ্ছে।”

“এ অবস্থায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিক সমিতির সকল কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ওয়েবপেজ/ফেসবুক পেজ এবং অন্য কোন বিশেষ মিডিয়া প্লাটফর্মে প্রচার করার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। বিগত ৭ এপ্রিলে সকল বিভাগীয় প্রধানগণ এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছেন।” 

এ বিষয়ে সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা রাজিউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছে। এ জেরে তাদের হুমকি দেওয়া অশুভ লক্ষণ। কোনভাবেই ইউনিভার্সিটি প্রশাসন এটা করতে পারেনা। সাংবাদিকদের নীতিগত জাগয়ায় তারা সঠিক রয়েছে। সুতরাং আহবান থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত একটা সুরাহার দিকেই যাবে৷


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence