‘বিএনপি-এনসিপির ঐক্য প্রয়োজন, এজন্য বিএনপিকে পরিবারতন্ত্র থেকে বের হতে হবে’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১১ PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তবে এজন্য বিএনপিকে কিছু শর্ত দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এসব শর্ত উল্লেখ করে পোস্ট করেছেন তিনি।
পোস্টে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লেখেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আমরা বহুদিন ধরে ব্যক্তি ও দলের সংকট হিসেবে দেখার ভুল করেছি। এই সংকট বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার নয়, এটি এক গভীরতর রাষ্ট্রগত সংকট, যা ব্যক্তিনির্ভর ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে। পরিবারতন্ত্রের যে দুর্বলতা দীর্ঘদিন বিএনপিকে জর্জরিত করেছে, সেই জায়গায় সংস্কারের পথ আমরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছি। ফলে বিএনপি যখন জনগণের কাছে তার ঐতিহাসিক আবেদন হারিয়েছে, তখন তারা অবলম্বন খুঁজেছে প্রতিষ্ঠানের ছায়ায়। তবুও আশা থাকে, নতুন প্রজন্ম যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তারা পরিবারতন্ত্রের গণ্ডি ভেঙে আবারও জনপদের রাজনীতিতে ফিরতে পারে। ভারতের কংগ্রেসও আজ একই পথ খুঁজছে : পরিবারতন্ত্রের শেকল ভেঙে পুনর্গঠিত হওয়ার পথ।
বাংলাদেশের প্রকৃত সংকট দুই ধারার আধিপত্যবাদ উল্লেখ করে এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়ক লেখেন, বাংলাদেশের প্রকৃত সংকট কোনো দল নয়, দুই ধারার আধিপত্যবাদ: মুজিববাদ ও মওদূদীবাদ। গত পাঁচ দশক ধরে ভারত–পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্সি যুদ্ধের এক দীর্ঘ ক্ষেত্র ছিল বাংলাদেশ, যার নিয়ন্ত্রণে ছিল কখনো মুজিববাদ, কখনো মওদূদীবাদ। এই দ্বৈত আধিপত্যের ফলে আমাদের রাষ্ট্র, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো ক্রমশ ভেঙে পড়েছে।
ছাত্র শিবিরের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল এই প্রক্সি রাজনীতির দাসত্ব থেকে বের হয়ে সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্মাণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিবির তার কিছু কল্যাণমূলক কাজের আড়ালে ছাত্রসমাজকে জামায়াতের হাতে তুলে দিল, কিছু পদ-পদবি ও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। ফলে দেশ আবারও পুরনো প্রক্সি রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে পড়ল।
বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন, আজ দেশপ্রেমিক শক্তির সামনে একসাথে দুটি যুদ্ধ। মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের দায়ভার। এই দুই যুদ্ধ একা কোনো দল লড়তে পারবে না। বিএনপি ও এনসিপি—গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ধারার দুই শক্তির মধ্যে একটি দায়িত্বশীল ঐক্য প্রয়োজন। তবে এ ঐক্যের শর্ত রয়েছে: বিএনপিকে তার পুরোনো সীমাবদ্ধতা ও পরিবারতন্ত্রের ছায়া থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। আর যারা ভারতের প্রভাব-রাজনীতির দিকে ঝুঁকে আছে, তাদেরও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলধারায় ফিরে আসতে হবে।
এনসিপির এই নেতা আরও লেখেন, এনসিপি কোনো অবস্থাতেই এই দায়িত্ব থেকে পিছু হটবে না। আমাদের চারটি প্রশ্নে আপস নেই: বাংলাদেশের পুনর্গঠন, সার্বভৌম মর্যাদা ও জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্মান। ঐক্য আসুক বা না-আসুক, এনসিপি জনগণের সঙ্গে নিয়ে এই আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশের পথ আটকে আছে দুই ফ্যাসিবাদী প্রক্সির হাতে, মুজিববাদ ও মওদূদীবাদের আধিপত্যে। এই প্রক্সির শাসন কাঠামো ভেঙে আমরা যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক, সৎ, জাতীয় রাষ্ট্র গড়তে চাই, তবে প্রতিটি নাগরিককে এই ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের কাজে শামিল হতে হবে। এ লড়াই কেবল নির্বাচন বা ক্ষমতার লড়াই নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মাকে পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই বাঁচাতে হবে তার রাজনীতিকে—প্রক্সির ছায়া থেকে।