পিনাকী ভট্টাচার্য
যৌবনে হারিয়েছেন প্রিয় মানুষকে, বার্ধক্যে দূরে সন্তান থেকে, আরেকজনকে বিদায় এক অনিবার্য শূন্যতায়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৬ PM
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনলাইন একটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। তার স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, যৌবনে হারিয়েছেন জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে, বার্ধক্যে থেকেছেন সন্তানদের দূরত্বে। আরেক সন্তানকে বিদায় জানিয়েছিলেন অনিবার্য শূন্যতায়।
শুক্রবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের দীর্ঘ ও ক্লান্ত ইতিহাসে একসময় আবির্ভূত হয়েছিলেন এক নারী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি শুধু কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নন; বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করা এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর পদচারণায় বদলে গেছে দেশের রাজনীতির ধারা, তাঁর চোখের দৃঢ়তায় এক প্রজন্ম খুঁজে পেয়েছে অহংকার, স্বাধীনতার স্পর্শ ও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শিক্ষা। রাজনীতিতে “আপোষহীন” শব্দটির নতুন ব্যঞ্জনা তৈরি করেছিলেন তিনিই।’
তার জীবনে রাজনীতি কখনোই নিছক রাজনীতি ছিল না- ছিলো এক অবিরত সংগ্রাম জানিয়ে পিনাকী বলেন, ‘শোক, কষ্ট, ষড়যন্ত্র ভরা এক বিস্তীর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র। যৌবনে হারিয়েছিলেন প্রিয়তম মানুষটিকে। বার্ধক্যে সন্তানের কাছে থেকেও ছিলেন বহু দূরে। আরেক সন্তানকে বিদায় জানিয়েছিলেন এক অনিবার্য শূন্যতায়।’
তার বিরুদ্ধে ছুটে এসেছিলো কুৎসার ঢেউ, ‘দিগন্তঢাকা অপবাদ উল্লেখ করে এই অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট জানান, তার প্রতিপক্ষ দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিখিয়েছিলো তাকে ঘৃণা করতে। কিন্তু তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে থেকেছেন; তার নীরবতার মধ্যেই ছিল এক অদম্য শক্তি—যা তার প্রতিপক্ষ কখনো ঠিকঠাক বুঝতে পারেনি।
ডিসেন্সি ছিল তার কবচ- রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল তার অস্ত্র। আর দুর্নীতির কালিমা থেকে দূরে থাকার অদম্য সাহস তাকে তুলে এনেছিল এমন এক উচ্চতায়, যা এখনো কোন বাংলাদেশির পক্ষে অতিক্রম করা দুরূহ।’
পিনাকী উল্লেখ করেন, ‘তিনি যে দলের নেতা ছিলেন, সেই দলটা তার মতো রাজনৈতিক নেতার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। তিনি একাই সেই দলকে টেনে তুলেছিলেন পাহাড়ের চূড়ায়—যেখানে তার অনুসারীরা কখনো বুঝতে পারেনি, তারা যে শিখরে দাঁড়িয়ে আছে তা আসলে এক নারীর দৃঢ়তার নির্মাণ।
এইজন্যই তার সংগ্রাম আর সংগ্রামী জীবনের সিলিসিলা নিজের দলে তার যোগ্য উত্তরাধিকার খুঁজে পায়নি—এটাই তার মহাকাব্যের ট্র্যাজেডি। আর আমাদেরও অপূর্ণ থেকে গেলো এক সম্ভাব্য ইতিহাস দেখার সৌভাগ্য—যে ইতিহাসে তিনি হতেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, এক রাষ্ট্রমাতার প্রতিমূর্তি। যদি আমাদের দুর্ভাগ্য হয় তাকে বিদায় জানানোর, তবে তার সেই বিদায়ও কোনো সাধারণ বিদায় হবেনা।’
যেদিন তিনি বিদায় নেবেন, সেদিন ইতিহাসের বাতাসও থমকে দাঁড়াবে জানিয়ে পিনাকী বলেন, ‘হাজার তরুণ একসময় দূর ভবিষ্যতে তার জীবনগাথা পড়ে অনুভব করবে—একদিন বাংলাদেশে এক নারী এসেছিলেন- মাতৃরূপে, যিনি জাতির বুকে ঢেলে দিয়েছিলেন নিরাপত্তা, দৃঢ়তা, আর অটল সাহসের আশ্রয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার উপস্থিতি ছিলো নক্ষত্রের মতো আলোকময়, আর তার প্রস্থানও হবে নক্ষত্রের মতোই—অটুট দীপ্তি ছড়িয়ে তা অনন্ত নক্ষত্রের দিকে উড়াল দিবে।’