শিবির না করায় ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা জামায়াত প্রার্থী বাবার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২১ PM , আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৭ PM
ছেলে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি না করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। এজন্য তার সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বরিশাল-১ আসন গৌরনদীতে। ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণাকারী বাবা এএইচএম কামরুল ইসলাম খান হচ্ছেন জামায়াত নেতা ও নির্বাচনী আসনটির দাঁড়ি পাল্লা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী। অপরদিকে, ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি।
আজ রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়ে বাবা এএইচএম কামরুল ইসলাম খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি ব্যর্থ বাবা। আমার বড় ছেলের সাথে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য।
অবশ্যই তাই এই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হলে সন্ধ্যার পর জামায়াত প্রার্থী এএইচএম কামরুল ইসলাম খানের ওয়ালে সেটি আর দেখা যাচ্ছে না।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা জাকির হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আমাদের নির্বাচনী এলাকায় অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে বরিশাল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব (আন্তর্জাতিক) হুমায়ুন কবির, আমি কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার আলম বিপ্লব, সদস্য সচিব জহির সাজ্জাদ হান্নান, আরাফাত বিল্লাহসহ অন্য নেতৃবৃন্দ ছিলাম। সেখানে অন্যদের মতো আরাফাতও বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি স্বপন ভাইর জন্য ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন।
জাকির বলেন, আরাফাত ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে সাবেক ছাত্রদল নেতা। স্বাভাবিকভাবেই সে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইবে। এখান রাজনীতির জন্য বাবা হিসেবে পুত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনা নিছকই জামায়াতের কু-রাজনীতি। আমি এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং জানাই।
এদিকে, সম্পর্ক ছিন্ন করে বাবার ফেসবুকে ঘোষণা দেয়ার পর ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান সন্ধ্যায় ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন,
আমি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একজন রাজনৈতিক কর্মী। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে জেনে শুনে বুঝে আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ব্যক্তিগতভাবে উদার রাজনৈতিক চিন্তাধারার মানুষ।
‘‘আমি বিএনপির রাজনীতি করার কারণে আমার বাবাকে বিভিন্ন সময় তার কর্মীরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে। আমাকে নূহ নবীর কাফের সন্তানের সাথে তুলনা করে। মনে কষ্ট পেলেও ক্ষমা করে দেই কারণ আমার নেতা জনাব তারেক রহমান প্রতিশোধ পারায়ণতায় বিশ্বাস করেন না। গত ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী জনতা বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় বরিশাল-১ আসনে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থীর উপস্থিতিতে আমি ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাই। আমি আমার বাবা বা জামায়াতকে কটাক্ষ করে কোনো বক্তব্য রাখিনি। বক্তব্যটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা আমাকে যা তা ভাষায় আক্রমণ করেছে। সংগত কারণেই আমার বাবা হয়তো সামগ্রিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন।’’
তিনি লেখেন, রাজনৈতিক মতাদর্শে হয়তো বাবার অবাধ্য হয়েছি, পারিবারিক সম্পর্ক থেকে বঞ্চিত হলাম কিন্তু আমি আরাফাত বিল্লাহ খান এজন্য ন্যূনতম অনুশোচনা করি না। গণতন্ত্রই যদি মানতে হয় তাহলে সচেতনভাবেই আমি বিএনপি সমর্থন করি কারণ বিএনপির চেয়ে উত্তম, জনবান্ধব ও সর্বগ্রহণযোগ্য দল বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি আর নেই এবং কেউ চাইলেও বিএনপির মত হতে পারবে না।