‘লালবদর’ কবি-সাহিত্যিকদের তালিকা করছে আওয়ামী লীগ, সমালোচনায় মুখর তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিন  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বিতর্কিত ও প্রবাসী লেখক তসলিমা নাসরিন বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাকি ‘লালবদর’ কবি-সাহিত্যিকদের তালিকা প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে তারা প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। তিনি এই তালিকার তুলনা করেছেন ২০১৩ সালে জঙ্গিদের প্রকাশ করা ব্লগারদের হত্যার তালিকার সঙ্গে।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তসলিমা নাসরিন লেখেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকেরা নাকি ‘লালবদর’দের লিস্ট প্রকাশ করেছে। ২০১৩ সালে নাস্তিক-মুক্তচিন্তক ব্লগারদের হত্যাকারী জিহাদি জঙ্গিরা যেমন ৮৪ জনের লিস্ট বের করেছিল, এ অনেকটা তেমন।’

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে ধুমপান নিষিদ্ধ, ধরা পড়লে টাকা জরিমানা

তিনি আরও লেখেন, আওয়ামী লীগের সদস্য, সমর্থক এবং সরকার–সুবিধাভোগী ছাড়া প্রায় সবাই শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চেয়েছিল। তাঁর ভাষায়, ‘প্রগতিশীলতায়, সেক্যুলারিজমে, নারীর সমানাধিকারে, মানবাধিকারে বিশ্বাস করা আমি এক যুগ ধরে শেখ হাসিনার মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, হেফাজতিদের জমি ও অর্থদান, এবং ব্লগার খুনের পর খুনিদের দোষ না দিয়ে ব্লগারদের দোষারোপ করার বিরুদ্ধে সরব ছিলাম।’

গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের সময়কার অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে তসলিমা নাসরিন লেখেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের নামে জিহাদি অভ্যুত্থান ঘটেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই তখন চুপ থেকে ইউরোপ–আমেরিকায় বসে আরাম করছিল। আজ তারা ‘লালবদর’ তালিকা করছে।’

তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহনশীলতা ও আত্মসমালোচনার অভাবের কথাও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, ‘তারা রাজাকার-আলবদর আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হাসিনার সমালোচকদের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে না।’

বাংলাদেশের রাজনীতির সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিকদের অনেকেই স্বার্থান্ধ ও সুবিধাবাদী। তাঁর ভাষায়, ‘জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা—সবাই দেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। হাসিনার শাসনামলে প্রগতিশীল মানুষ দল বেঁধে দেশত্যাগ করেছে।’ তসলিমা নাসরিনের মতে, সরকার যদি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে চায়, তবে সমালোচকদের তালিকা করার বদলে নিজেদের ভুলের তালিকা তৈরি করা উচিত।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় যারা ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার লাল করেছিলেন, যারা আন্দোলন সমর্থন করেছিলেন তাদের ‘লালবদর’ বলে ব্যাঙ্গ করেন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। লালবদর শব্দটি আলবদর শব্দটি থেকে এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলবদর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ