সাতক্ষীরা-১ আসন

নির্বাচনী মাঠে সরব বিএনপি-জামায়াত, নীরব আ.লীগ-অপেক্ষায় জাপা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থিরা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থিরা  © টিডিসি সম্পাদিত

তরুণ-জ্যেষ্ঠ নেতাদের পদচারণায় জমে উঠেছে সাতক্ষীরা-১ আসনের রাজনীতি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা না হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা-সমালোচনা। তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা বাড়ছে, দলে দলে শুরু হয়েছে মাঠে নামা। এই আসনের ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লক্ষাধিক। দুই উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনে প্রার্থিতা নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন।

আসন ইতিহাস: ওঠানামার গল্প
সাতক্ষীরা-১ আসনে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখত, ১৯৯১ সালে জামায়াতের আনসার আলী, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বি. এম. নজরুল ইসলাম, ২০০১ সালে আবারো বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের জোটে ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আ.লীগের নিরবতা, চাঙ্গা বিএনপি-জামায়াত
৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উদ্দীপনা। উল্টো চিত্র আওয়ামী লীগে। দলটির একাধিক নেতা আত্মগোপনে, রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকেও তারা রয়েছেন দূরে। একইসঙ্গে জাতীয় পার্টিতেও নেই তেমন কার্যকর তৎপরতা। ১৪ দলের অন্য শরীকরা আছেন অন্তরালে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেছেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

বিএনপির মাঠজুড়ে সক্রিয়তা
এ বিষয়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে, তালা-কলারোয়ার মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে মিথ্যা মামলায় আমাকে ৭০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তালা-কলারোয়ার মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে তা ভোলার নয়। আমি আজীবন তাদের পাশে থেকেই সেবা করতে চাই। দল আমাকে আগেও জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আগামীতেও সুযোগ পাব বলে আশা করি, যদিও বিষয়টি দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তারুজ্জামান বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে একাধিকবার আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। তবুও মানুষ আমাকে ভালোবেসে দুইবার মেয়র নির্বাচিত করেছে। দল চাইলে মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হবো।

একইভাবে সাতক্ষীরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক, দিনকালের সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমান। তিনি জানান, আমি বিগত ৫-৭ বছর ধরে সাতক্ষীরায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়। জেলার তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও দল যদি মনে করে তরুণ নেতৃত্ব এগিয়ে আসুক—তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত।

জামায়াতও মাঠে সক্রিয়, প্রার্থী নির্ধারণ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও নির্বাচনী মাঠে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরা-১ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ।

জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহকে মাঠে কাজ করতে বলা হয়েছে। এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি, তবে আমরা আগেও সাতক্ষীরার মানুষের সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি। আমরা যথাসাধ্য কাজ করছি এবং ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি।

জাতীয় পার্টি 'অপেক্ষায়'
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। আগে তফসিল ঘোষণা হোক, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থানীয়দের মতে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সৈয়দ দিদার বখতের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চলমান আলোচনা ও অপেক্ষা
নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা না হলেও সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই মাঠে সক্রিয়। অনেকেই রয়েছেন দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। আলোচনায় রয়েছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলে কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ