সব ইশতেহারে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:১৬ PM , আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২৫ AM
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটার দুই কোটির উপরে। অনেকেই মনে করে এবারের নির্বাচনে এসব ভোটাররা নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের ইশতেহারে তরুণদের দিকে বাড়তি মনোযোগ দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা, পঞ্চম ও অষ্টমের দুই সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেয়া, কোচিং ব্যবসা বন্ধসহ একই ধরণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের ইশতেহারে।
মঙ্গলবার নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে অধিকতর বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি, তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিসহ তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন পরিকল্পনা।
তাদের ইশতেহারে যা যা রয়েছে-
#স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে।
#বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।
#তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে।
#সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
#প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
#দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’র অধীনে ‘স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ’ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ‘সুদক্ষ প্রকল্প’র অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তা দূর করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
#জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে।
#কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
একইদিনে নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছে বিএনপি। তাদের ইশতেহারে রয়েছে-
#প্রথম তিন বছরে দুর্নীতি মুক্ত ব্যবস্থায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে দুই লাখ মানুষকে চাকরী দেয়া।
#এক বছর অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিতদের বেকার ভাতা প্রদান। এদের যৌক্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা করা।
#শিক্ষার্থীদের উপর সকল ভ্যাট বাতিল করা।
#ভ্যাট বিরোধী, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে আনা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া।
#তরুণ দম্পতি ও উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ২০ বছর মেয়াদি ঋণ চালু করা।
#আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
#বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের সুবিধার্থে মেধাবীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা।
এর আগে সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ক্ষমতায় গেলে তারা সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাতিল করার অঙ্গীকার করেছে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটাব্যবস্থা রেখে বাকি সব ধরনের কোটা বাতিলেরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় এই ইশতেহারে।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করার কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। এতে আরো বলা হয়েছে, প্রথম বছর থেকেই ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। বাতিল করা হবে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে সরকারি শিক্ষাব্যয় সুনির্দিষ্ট করা হবে। ওয়ার্ক পারমিটবিহীন সকল বিদেশী নাগরিকদের কর্মসুযোগ বন্ধ করা হবে।
দেশের ডিজিটালাইজেশনের গতিকে সমুন্নত রাখতে দেয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগের ব্যবস্থাও করা হবে।
এদিকে, শুক্রবার সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি ‘গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার’ লক্ষ্যে ১৮ দফা অঙ্গীকার নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এ ইশতেহারে শিক্ষা পদ্ধতিরও সংস্কার করতে চায় তারা।
ইশতেহারে বলা হয়েছে-তারা ক্ষমতায় গেলে পঞ্চম ও অষ্টমের দুই সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে। টিউউশন নির্ভরতা কমিয়ে বন্ধ করবে কোচিং ব্যবসা। স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করবে।
শনিবার নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে গণসংহতি আন্দোলন। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করাসহ দুটি লক্ষ্যে ৭৪টি উপধারা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংগঠনের প্রধান নেতা জোনায়েদ সাকি জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা চাই শিশুদের মেধার বিকাশ। কিন্তু পিইসি ও জেএসসির মত পরীক্ষা শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেয়ায় তাদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে পিএসসি ভীষণ রকম অপ্রয়োজনীয়।