চাকরি ছেড়ে পড়াশোনায় ফেরেন রোদ্দুর রায়, করতেন গবেষণাও

অনির্বাণ রায়
অনির্বাণ রায়  © সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ফেসবুক লাইভে কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগে ইউটিউবার রোদ্দূর রায়কে গোয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগেও নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

ইউটিউবার হিসেবে তিনি যেমন জনপ্রিয়, তেমনই বিতর্কিতও বটে। কটু এবং কদর্য ভাষায় সমাজ, সমাজের ধ্যানধারণা এবং সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের বার বার আক্রমণ ছিল তার স্বভাব। সেই তালিকা থেকে বাদ যাননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। কিন্তু এই রোদ্দুর রায়ের পুরো পরিচয় এখনো অনেকেরই অজানা। রোদ্দুর রায়ের আসল নাম অনির্বাণ রায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, মুখে অশ্রাব্য ভাষা ছুটলেও রোদ্দুর রায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। স্থানীয় রামনগর কলেজ থেকে তিনি স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন। গিটার বাজাতে পারদর্শী রোদ্দুর কিছু দিন ডিজে হিসাবেও কাজ করেছেন। 

এছাড়া রোদ্দুর রায় গবেষক হিসাবেও কাজ করেছেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু চেতনা বিজ্ঞান। অনেকের মত, তিনি যে ভাষা প্রয়োগ করেন এবং যে ধরনের গানবাজনা করেন, তা তার গবেষণার অঙ্গ। এক সময় দিল্লির নয়ডাতে আইটি সেক্টরে চাকরি করেছেন। পরে চাকরি ছেড়ে আবার পড়াশোনার মধ্যে ফিরে আসেন তিনি।

আওর পড়ুন: মোক্সাবাদের প্রবক্তা, বিতর্কিত ইউটিউবার, কে এই রোদ্দূর রায়?

লেখক হিসেবেও সমান খ্যাতি রয়েছে রোদ্দুর রায়ের। মনোবিজ্ঞানের উপর একটি বইও লিখেছেন তিনি। সেই বইয়ের নাম ‘অ্যান্ড স্টেলা টার্নস এ মম’। রোদ্দূর রায় বাংলায় একটি উপন্যাসও লিখেছেন। তার নাম– ‘মোক্সা রেনেসাঁ’। তিনি নিজেকে ‘মোক্সা ঘরানা’র প্রতিষ্ঠাতা বলেও দাবি করেন। 

হালে রূপঙ্করকে নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই নিয়ে বিতর্ক ছিল চরমে। তার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য নিয়েও জলঘোলা হয়েছে। সেই সূত্রেই গ্রেফতার তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার গোয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সংগীত শিল্পী রূপঙ্কর এবং সদ্যপ্রয়াত কেকে-কে নিয়ে রোদ্দূর রায় ফেসবুক লাইভ করেন। সেখানে তিনি রূপঙ্করের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেন।

কটূক্তি করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমসহ কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন সম্পর্কেও। ওই ফেসবুক লাইভের বক্তব্য নিয়েই গত শনিবার তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর গ্রেফতার হন তিনি।

তবে রোদ্দুর রায়কে নিয়ে এর আগে যে বিতর্কটি হয়েছিল, তা হল রবীন্দ্রভারতী ক্যাম্পাসে তাঁর গান পড়ুয়াদের গায়ে লিখে রাখা। সেই সময়ে বেলেঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের সদস্যরা। তাঁদের দাবি ছিল, ওই ইউটিউবার যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। রোদ্দুর রায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন করেন তাঁরা।

রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল ইসলামের গানের প্যারোডি গেয়ে সব সময়ে বিতর্কে থাকেন রোদ্দুর। তাঁকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি রবীন্দ্রবিরোধী কি না? নাকি তিনি রাবীন্দ্রিকতা বিরোধী? উত্তরে রোদ্দুর বলেছিলেন, ‘দাদুর প্রতি আমার অসীম প্রেম।’ তাতেও চটে যান রবীন্দ্রপ্রেমীরা।


সর্বশেষ সংবাদ