চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:২৩ AM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:২৩ AM
চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের ২৫তম মৃত্যবার্ষিকী আজ। গ্রামের পথে পথে ঘুরে খবরের পেছনে থাকা খবর সংগ্রহ করে লিখতেন তিনি। এটাই যার নেশায় রূপ নিয়েছিল। যা ছিল দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা। পথে প্রান্তরের অনুসন্ধানে গিয়ে জীবনেরও যবনিকা ঘটে চারণ সাংবাদিকের।
১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর ফুলছড়ি থানাধীন যমুনা নদীতে কালাসোনার ড্রেজিং পয়েন্টে দুটি নৌকাডুবির তথ্যানুসন্ধান করতে অসুস্থ শরীর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন গাইবান্ধায়। যাওয়ার পথে ‘শেরেবাংলা’ নামক ফেরিতে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। ফেরির ছাদ থেকে হঠাৎ করেই পানিতে পড়ে যান তিনি। স্থানীয় নৌকার মাঝিরা তাকে তাৎক্ষনিকভাবে উদ্ধার করতে পারলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। তবু তিনি তার কর্মের মাধ্যমেই অমর হয়ে আছেন সকলের হৃদয়ে।
আরও পড়ুন: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন আজ
সাংবাদিকতার নেশায় তিনি চষে বেড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মাঠের পর মাঠ, গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। কথা বলেছেন, একেবারে শেকড় থেকে তিনি সৃষ্টি করেছেন সংবাদ ভাষ্য, প্রতিবেদন, ফিচার। তার প্রতিটি প্রতিবেদনই ছিল গ্রাম বাংলার অকৃত্রিম চিত্র আর মানুষ ও সমাজের বাস্তব মুখচ্ছবি। জীবদ্দশায় তিনি নিজেকে ‘তৃণমূল মানুষের সংবাদকর্মী’ হিসাবে দাবি করতেন।
১৯৪৯ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুর শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মোনাজাত উদ্দিন-এর সাংবাদিকতা শুরু ১৯৬৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকার মধ্য দিয়ে। এরপর ১৯৭২ সালের মার্চে স্বাধীন চিন্তা, বিশ্বাস আর আদর্শের ভিত্তিতে প্রকাশ করেন ‘দৈনিক রংপুর’।
আরও পড়ুন: ২২ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হচ্ছে কাল
মূলত তিনি দৈনিক সংবাদে পথ থেকে পথে ধারাবাহিক রিপোর্টের জন্য বেশি খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৭৬ সালে দৈনিক সংবাদে যোগ দেয়ার পর থেকে তিনি মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন পত্রিকাটির সঙ্গে। বিশ বছর একটানা ‘সংবাদ’ এ কাজ করার পরে ১৯৯৫ সালের ২৪ এপ্রিল দৈনিক জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন ।
‘মোনাজাত উদ্দিনের সংবাদ সংগ্রহের স্টাইল ও নিষ্ঠা জড়িয়ে গিয়েছিল; কোথাও ভঙ্গী দিয়ে চোখ ভোলানোর আয়োজন ছিল না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ফলোআপ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অনন্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। গ্রাম বাংলার জনজীবনের একটা নিখুঁত তথ্য নির্ভর এবং একই সঙ্গে সংবেদনশীল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও চিত্ররূপময় বর্ণনা এবং চিত্র তিনি দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন খবরের মাধ্যমে।’ তার সম্পর্কে এই মন্তব্য প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট সন্তোষ গুপ্ত’র।
আরও পড়ুন: যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ, লজ্জায় আত্মহত্যা স্কুলছাত্রীর
তিনি তার একানিষ্ঠ কর্মের জন্য অনেক সম্মাননাও পেয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে ‘সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক’, দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত ‘মানুষ ও সমাজ’ প্রতিবেদনের জন্য সালে ফিলিপস্ পুরস্কার, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে অশোকা ফেলোশিপ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক একুশে পদক (মরনোত্তর) লাভ করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি অনেক সমাজসেবামূলক কাজেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। গ্রামীণ এলাকায় মানুষের কুসংস্কার, অন্ধতা দূর করতে তিনি তরুণদের নিয়ে সংগঠন করেছেন। কখনো তাদের নিয়ে নাটক করিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে। তিনি নিজেও ছিলেন একজন গীতিকার ও নাট্যকার। রংপুর বেতারে নিয়মিত কাজ করতেন। তার একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। যদিও চারুশিল্পে তার তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না কিন্তু নিজের অধ্যাবসায়ের ফলে তিনি অনেক বই ও ছোট কাগজের প্রচ্ছদ করেছেন। ছিলেন দক্ষ ফটোগ্রাফারও।
আরও পড়ুন: এসএসসি পাসে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে চাকরি
রিপোর্টিং ছাড়াও গল্প, কবিতা, ছড়া ও নাটক রচনায় তার দক্ষতা ছিল তিনি। মৃত্যুর আগে ৯টি ও পরে ২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। পাশাপাশি লিখেছেন জীবনের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ নানা ঘটনা। তার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে-‘পথ থেকে পথে’, ‘সংবাদ নেপথ্য’, ‘কানসোনার মুখ’, ‘পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ’, ‘নিজস্ব রিপোর্ট’, ‘ছোট ছোট গল্প’, ‘অনুসন্ধানী রিপোর্ট’: গ্রামীণ পর্যায়’, ‘চিলমারীর এক যুগ’, ‘শাহ আলম ও মজিবরের কাহিনী’, ‘লক্ষীটারী’, ‘কাগজের মানুষেরা’।
এ ছাড়াও, মাসিক মোহাম্মদি, দৈনিক আজাদ, সওগাত ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় তার বেশ কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হয়। নাটকের একমাত্র প্রকাশিত বই ‘রাজা কাহিনী’। তিনি অনেক জনপ্রিয় ছড়ার রচয়িতা ছিলেন।