জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন জমিরুল ইসলাম
- আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহান, যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৩ PM , আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৩ PM
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মুন্সিখানপুর গ্রামে হরিহর নদীর তীরে অবস্থিত খামারবাড়ি পাবলিক লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরি শুধু বইয়ের সংগ্রহ নয়, একটি ইতিহাস, একটি স্বপ্নের নাম। আর এই স্বপ্নকে প্রাণবন্ত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত একজন মাদ্রাসা শিক্ষক মো. জমিরুল ইসলাম।
চার বছর আগে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলেও শিক্ষার আলো ছড়ানো বন্ধ করেননি এই শিক্ষক। সাইকেলে চড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাইব্রেরির বই পৌঁছে দেন তিনি। পাঠকের দরজায় বইয়ের ঘ্রাণ পৌঁছে দেওয়ার এই প্রয়াস তাকে করে তুলেছে স্থানীয়দের কাছে এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
মো. জমিরুল ইসলাম চার বছর আগে অবসরে গিয়েছেন। তবুও শিক্ষার আলো ছড়ানো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি তিনি। স্বেচ্ছাশ্রমে এলাকার মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছেন জ্ঞানের আলো। সাইকেলে চড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাইব্রেরির বই পৌঁছে দিয়ে আসেন পাঠকদের জন্য।
গোলপাতার ছাউনি ও চাঁচের বেড়ার নির্মিত ঘরে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয় যা পরবর্তীতে পাকা বিল্ডিংয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। ঘরের মেঝেতে বসানো হয়েছে টাইলস। মুক্তিযুদ্ধ কর্নারসহ এই লাইব্রেরির সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২ হাজার ৩৫৮টি বই। ৪টি আলমারি ও ৪টি র্যাকে এই সব বই রাখা রয়েছে। বই পড়ার জন্য বড় পরিসরের তিনটি টেবিল ও ২০টি চেয়ার রয়েছে।
জমিরুল ইসলাম বলেন, 'একসময় এই লাইব্রেরিতে অনেক পাঠকের সমাগম ঘটত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন পাঠক অনেক কম আসে। আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এখন বই দিয়ে আসি। সপ্তাহ শেষে সেসব বই সংগ্রহ করে নতুন বই দিই।'
পাঠক ফাহিম বলেন, 'ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় লাইব্রেরিতে যেতে পারি না। কিন্তু জমিরুল কাকুর মাধ্যমে ঠিকই নিয়মিত বাড়িতে বসে নতুন নতুন বই পাই। তাকে ফোন করে চাহিদার কথা জানালেই তিনি বাড়িতে এসে বই দিয়ে যান।'
আরেক পাঠক ফয়সাল হুসাইন বলেন, 'আগে নিয়মিত লাইব্রেরিতে যেতাম। বর্তমানে একাডেমিক পড়াশুনার অনেক চাপ থাকায় লাইব্রেরিতে যেতে পারি না। কিন্তু জমিরুল চাচা আমার বাড়িতে নিয়মিত বই পৌঁছে দেন। তার এই অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে এলাকার অনেক লোক বাড়িতে বসেই বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
লাইব্রেরির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মতিয়ার রহমান খান বলেন, 'উপজেলা পর্যায়ে এটি বেশ পুরোনো, প্রসিদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরি, যা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। পাঠকপ্রিয় করার জন্য লাইব্রেরির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঝে মাঝে পাঠচক্র ও নানামুখী প্রতিভা বিকাশে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ লাইব্রেরিটি আরও প্রসিদ্ধ হবে এবং এই জনপদের মানুষ উন্নত সমাজ ও উন্নত জাতি গঠনে নেতৃত্ব পাবে।'
উল্লেখ্য, এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসারের জন্য আব্দুস সাত্তার মোড়ল, শামছুর রহমান, মতিয়ার রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন খান, দৌলত হোসেন খান, ফজলুর রহমান মোড়লসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯৬৬ সালে খামারবাড়ি পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই লাইব্রেরির আজীবন সদস্য ৮৩ জন ও সাধারণ সদস্য ২২০ জন।