‘দেহে এক ধরনের মৃত্যুবোধ জন্মায়, তখন বেঁচে থাকলেও মনে হয় তুমি মরে গেছো’
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৪ PM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৭ PM

‘আমি আমার দেশের দ্বারা প্রতারিত বোধ করছি। আমি একজন উৎকৃষ্ট নাগরিক, আমি সব কিছু দিয়েছি। কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না।’ হামাসের হাতে জিম্মি হওয়ার পর মুক্তি পাওয়া ওফার কালদেরন তার প্রথম সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘দেহের একধরনের মৃত্যুবোধ জন্মায়। তুমি শারীরিকভাবে বেঁচে থাকলেও মনে হয় তুমি মরে গেছ।’
শুক্রবার (এন১২)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কালদেরন বলেন, মুক্তির পর থেকেই যে মানসিক আঘাত তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তা যেন মৃত্যুরই সমান।
তিনি জানান, ৭ অক্টোবর তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হন, তবে তার বড় মেয়ে গাইয়া অপহরণের সময় নীর ওজে ছিলেন না। তিনি তখন তেল আবিবে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
কালদেরন বলেন, ‘আমি জীবনের সব কান্না কেঁদে ফেলেছি, কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার কিছুই করার নেই। আমার কাছে লোড করা বন্দুক ছিল, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে আমার সন্তানদের রক্ষা করব?
তিনি জানান, বন্দি অবস্থায় থাকাকালীন তিনি অন্যান্য জিম্মিদের সঙ্গেও দেখা পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আদিনা মোশে, নিমরোদ কোহেন, মাতান জাঙ্গাউকার, সাগি ডেকেল চেন, ডেভিড কুনিও, ভাই ইতান ও ইয়াইর হর্ন ও ইয়ারদেন বিবাস। (সূত্র: এন১২)
কালদেরন এন১২-কে আরও জানান, বন্দি অবস্থায় তিনি হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সঙ্গেও মুখোমুখি হন। ‘সে টানেল দিয়ে হেঁটে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিনে ফেলি,’
আরও পড়ুন: ‘বড় ভাইয়ের জন্য কিছু টাকা দিও’— মুদি দোকানির কাছে ইবি ছাত্রদল নেতাদের চাঁদা দাবি
শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে কালদেরন জানান, তিনি বর্তমানে জনসাধারণের সহায়তা কামনা করছেন নিজের জীবন নতুন করে গড়ার জন্য।
গত ৭ অক্টোবর হামলার দিন তার নির্মাণকারখানা (কারপেন্ট্রি শপ) নীর ওজ-এ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বলেন, তীব্র মানসিক আঘাত ও স্মৃতি থেকে তিনি আর কিবুৎজে ফিরে যেতে পারছেন না। তাই পরিবারকে সহায়তা করার মতো একজন পূর্ণাঙ্গ পিতা হয়ে উঠতে তিনি এখন সহানুভূতিশীল মানুষের সহযোগিতা চাচ্ছেন। এ উপলক্ষে কালদেরনের জন্য একটি ক্রাউডফান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে।
কালদেরনের জন্য একটি ক্রাউডফান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করেছে সেই সাইক্লিং দলটি, যাদের সঙ্গে তিনি অপহরণের আগপর্যন্ত নিয়মিত সাইক্লিং করতেন। কারণ, তার কাঠের কাজের দোকানটিই ছিল একমাত্র আয়ের উৎস।
কালদেরন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি এমন একটি পোস্ট আমাকে লিখতে হবে। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি, আমার কোনো বিকল্প নেই। কিছু অনুভূতি আমার ভেতর থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। হামাসের বন্দিত্বে ৪৮৪ দিন পার করেছি, কিন্তু এখনও আমি সত্যিকার অর্থে জীবনে ফিরতে পারিনি। আমার স্বপ্ন হলো, আমি আবার এমন একজন বাবা হতে চাই, যে তার সন্তানদের ও পরিবারকে রক্ষা করতে পারে।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার পতন চেয়ে পোস্ট শেয়ার করলেন হাবিপ্রবি উপাচার্য
তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবরের সকালটি ছিল সেই মুহূর্ত, যখন আমার জীবনটা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। আমার চোখের সামনেই, যখন আমি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলাম, তখন হামাস সন্ত্রাসীরা আমার দুই সন্তান— ১৬ বছরের সাহার ও ১২ বছর বয়সী এরেজকে অপহরণ করে নেয়। এরপর আমাকে গাজায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়— লাঞ্ছিত, অপমানিত ও অসহায় অবস্থায়। সেই মুহূর্ত, যখন এরেজকে আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো ও সাহারকে দুই সন্ত্রাসীর মাঝখানে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হলো। এটি এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন, যা প্রতিদিন রাতে ফিরে আসে এবং আমাকে ছাড়ে না।’
কালদেরনে আরও বলেন, ‘অনেকেই জিজ্ঞেস করেন আমি কি আবার সেখানে ফিরে যাব? আমি সেটি কল্পনাও করতে পারি না। কিবুৎজের প্রতিটি কোণ আমার জীবনের দুঃস্বপ্নের স্মৃতিতে ভরা।’
কালদেরনের পরিবার জানিয়েছে, বন্দি অবস্থায় তিনি প্রায় ২৫ কেজি ওজন হারিয়েছেন, যা তার মুক্তির কয়েক সপ্তাহ পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হাসপাতাল থেকে মুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।