ভারতের আসাম রাজ্য

টিউশনি থেকে ফেরার সময় স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, হেফাজতে অভিযুক্তের মৃত্যু

আসামে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ
আসামে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ  © বিবিসি বাংলা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আসামের নগাঁও জেলার ধিং এলাকা খবরের শিরোনামে এসেছিল ২০১৮ সালে। সে বছর আইএএএফ বিশ্ব অনূর্ধ্ব-২০ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ৪০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছিলেন ছোট্ট এলাকা থেকে উঠে আসা ভারতীয় স্প্রিন্টার হিমা দাস। তিনিই প্রথম ভারতীয় নারী যিনি ওই রেকর্ড গড়েন। সম্প্রতি আরও একবার খবরের শিরোনামে ধিং, কিন্তু সেটা ভিন্ন কারণে।

টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে শহরে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যে। কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন নারীরা। শহরের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শত শত নারী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় বসে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন নিরাপত্তার।

তাদের হাতে যে প্ল্যাকার্ড রয়েছে তাতে লেখা ‘আমরা ন্যায় বিচার চাই’, ‘নারীদের নিরাপত্তা দিন’, ‘ধর্ষণ বন্ধ হোক, ধর্ষককে চরম শাস্তি দেওয়া হোক’ ইত্যাদি। একইভাবে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৯ অগাস্ট থেকে উত্তাল হয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ, প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে।

মহারাষ্ট্রের বদলাপুরে দুই খুদে পড়ুয়াকে যৌন হেনস্থার অভিযোগকে ঘিরে প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলে মহারাষ্ট্রের রাস্তায় নামেন সাধারণ মানুষ। তারপর আসামে এক নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর উত্তাল হয়ে উঠেছে নাগরিক সমাজ। আসামের ওই ছাত্র্রীকে গণধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র যে নারীরাই প্রতিবাদে পথে নেমেছেন এমনটা নয়। ছাত্র সংগঠনসহ বেশ কয়েকটা সংগঠনের সদস্যরাও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে ধর্নায় বসেছেন।

নির্যাতনের শিকার পড়ুয়ার গণধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে আসামের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ মানুষ। ধিং থানায় দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, ২২ অগাস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সে দিন সন্ধ্যায় টিউশন পড়ে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ওই ছাত্রী। অভিযোগ, ফেরার পথে নির্জন রাস্তার ধারে তার ওপর হামলা চালায় তিন যুবক এবং তাকে ধর্ষণ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর তিন অভিযুক্ত মেয়েটিকে অর্ধচেতন অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। নগাঁও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী।

এদিকে, এ ঘটনায় ধৃত এক অভিযুক্তের শনিবার সকালে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ দাবি করেছে, শনিবার সকালে অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় তিনি পালানোর চেষ্টা করেন এবং পাশের একটি পুকুরে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। মৃত যুবকের তাফাজ্জুল ইসলাম। পুলিশ সূত্রে খবর, ২৪ বছরের ওই যুবক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় তিনজন অভিযুক্তর মধ্যে অন্যতম।

পুকুর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধারের সময় তার দুই হাতে হাতকড়া ছিল বলে অভিযোগ। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার নারী সুরক্ষা সমিতির সভাপতি তুলিকা বোরা বলেন, এলাকার নারীরা মোটেই সুরক্ষিত নন। সরকার ও প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বৃহস্পতিবার ছাত্রীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর থেকেই এখানকার নারীরা আতঙ্কে রয়েছেন। নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে ন্যায় বিচার দিতেই হবে। আমরা এই ঘটনার ন্যায়সঙ্গত বিচার চাই। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা চুপ করে বসে থাকব না।

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর এক আত্মীয় বলেছেন, মেয়েটা ওর মাকে ছেলেবেলায় হারিয়েছে। গ্রামে দাদু-দিদার সঙ্গে থাকে এবং পড়াশোনা করে। গুয়াহাটিতে কর্মরত ওর বাবা। তিনি ঘটনার রাতেই গ্রামে ফিরেছিলেন। ও (ছাত্রী) সপ্তাহে তিন দিন টিউশন পড়তে অন্য গ্রামে যায়। সেদিনও পড়তে যাওয়ার জন্য দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন ওকে খুঁজতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ওকে যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেটা তার নিজের গ্রামে যাওয়ার প্রধান সড়কের কাছে।

ছাত্রীর পরিবার চাইছে, পুলিশ বাকি দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করুক, যাতে তাদের শাস্তি দেওয়া যায়। তা না হলে মানুষের এই আশঙ্কাতেই দিন কাটবে যে তাদের বাড়ির মেয়ের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

এই প্রতিবেদনে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর পরিবারের সদস্যের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ধর্ষণ, যৌন হেনস্থার মতো নির্যাতনের শিকার ও তার পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করা যায় না। ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ধিং এলাকা এবং প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই ধিং শহর ও আশেপাশে তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত অন্য দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ লাগাতার তল্লাশি চালাচ্ছে।

নগাঁও জেলার পুলিশ সুপার স্বপ্নিল ডেকা বলেন, মোট তিনজনের বিরুদ্ধে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো আইন এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: আর জি করে ধর্ষণের ঘটনার পর প্রাক্তন অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠদের আনাগোনা ছিল

এদিকে ঘটনায় অভিযুক্ত তাফাজ্জুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা ওই যুবকের পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযুক্তের মা বলেন, ‘পুলিশ যখন আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়, তখন তার অবস্থা ভালো ছিল। তাহলে পুলিশ হেফাজতে কীভাবে তার মৃত্যু হলো? পুলিশ ওকে রাতে মেরে পুকুরে ফেলে দেয় এবং সকালে আমাকে ফোন করে ওর দেহ শনাক্ত করার জন্য।’

পুলিশ সুপার স্বপ্নিল ডেকা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার ভোর তিনটের দিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দুই কনস্টেবলের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় পাশের একটা পুকুরে পড়ে যায় ওই অভিযুক্ত।

তার ভাষ্য, সে সময় অন্ধকার ছিল। তৎক্ষণাৎ ওকে (অভিযুক্ত যুবককে) খোঁজার করার চেষ্টা চালানো হয় এবং এসডিআরএফকেও এই বিষয়ে জানানো হয়। পুকুরে তল্লাশি করে অভিযুক্তের দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় আমাদের একজনের হাতেও চোট লেগেছে। খবর: বিবিসি বাংলা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence