মীনা দিবসের প্রতিপাদ্য ও আমাদের দায়িত্ব

মীনা একটি প্রতিবাদী চরিত্র। সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে অন্যতম চরিত্রের নাম মীনা।বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসন্মত পায়খানা নির্মান ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে থেকে স্কুলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে মেয়ে সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রভৃতি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে অন্যতম চরিত্র। সে নিজে করে দেখায়। অন্যকে করতে শিখায়। জনপ্রিয় এ কার্টুনটির জনক মোস্তফা মনোয়ার।

১৯৯৫ সালে বিটিভি মীনা কার্টুনটি দেখানো শুরু করে। ১৯৯৮ সালে সার্কের পক্ষ থেকে ২৪ সেপ্টেস্বরকে ঘোষণা করা হয় মীনা দিবস। সে সময় থেকে প্রতি বছর ২৪ সেপ্টেম্বর মীনা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছর নতুন নতুন প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে দিবসটি পালিত হয়। এবারের শ্লোগান হলো- ‘মনের মত স্কুল পেলে, শিখব মোরা হেসে খেলে’। বিষয়টির গভীরে গিয়ে যদি একটু চিন্তা করি তাহলে দেখবো আসলেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময়ই বলি, বিদ্যালয় হবে শিশুবান্ধব। শিশুর চাহিদা এবং মানসিকতার দিকে খেয়াল রেখে বিদ্যালয়ের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

আশার বানী হচ্ছে, বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অগ্রগামী। বিদ্যালয়ে তাদের সংখ্যা এবং নিয়মিত উপস্থিতি ছেলেদের তুলনায় বেশি। কিন্তু বাল্যবিবাহ যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে তা বলা যাবে না। এখনো হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও চেষ্টা করছে এটি বন্ধ করার। হয়তো এক সময় পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে।

মানসন্মত পায়খানা কিংবা স্বাস্থ্যসন্মত পায়খানা এখন প্রায় সকল বিদ্যালয়েই আছে। সুন্দর অবকাঠামো দিয়ে মানসন্মত ওয়াসব্লক শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে। এবং এটি ব্যবহারের নিয়মও তাদের শেখানো হচ্ছে। তার মানে শিশুর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তার চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি আমরা মিঠুর কথাও ভুলে যাব না। মিঠুও কিন্তু অনেক ভালো। সে মীনার বিপদে আপদে উপকারী বন্ধু। মিঠু চরিত্রের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে বন্ধুত্বের মনোভাব গড়ে উঠে।

মীনা এখন শুধু বাংলাদশেই নয় পাশাপাশি ভুটান, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলন্কায় এখন মেয়ে এবং শিশুদের অধিকারের একটি প্রতীকে পরিনত হয়েছে। এমনকি মীনা এখন অনেক দেশে ভ্রমনও করে। শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টি, নিরাপত্তা, শিশুদের অধিকার সহ অনেক সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত বার্তা প্রচারের জন্য মীনাকে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও মীনা কার্টুনটি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু হিন্দি ও নেপালী ভাষায় সম্প্রচার করা হয়েছে। কার্টুন ছাড়াও কমিক বই ও রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়েছে।

মীনার শেষ চরিত্র গুলোর দিকে শিশুদের প্রাকৃতিক দুর্যোগে করনীয় বিষয়গুলোকে আনা হয়েছে।এটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সুনামি আর ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিশুরা ঠিক কী করতে পারে নতুন কার্টুনে সে বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘যাদুর পাথর’ (ম্যাজিক স্টোন) এবং রুপকথার দেশে মীনা (মীনা ইন ফ্যান্টাসিল্যান্ড)। কার্টুনটির সূচনা সংগীতটিও শিশুদের কাছে খুব প্রিয়।

বিদ্যালয় শিশু শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। শিশুরা শিখে হেসে খেলে। বিদ্যালয়ে শিশুদের চাহিদার সবকিছু থাকবে। শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টিও এক্ষেত্রে বিবেচ্য। কোন শিশু যেনো নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে সেদিকেও আমাদের খেয়ার রাখতে হবে। শিশু বিশেষ করে কন্যা শিশুর বিদ্যালয় গমনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের বাঁধার সন্মুখীন যেন না হতে হয় সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।

সমাজের যে সকল অসঙ্গতিগুলো নিয়ে মীনা চরিত্র সে অসঙ্গতিগুলো দূর করতে শিশুদের সহযোগিতা করা, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মান আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কন্যা শিশু বেড়ে উঠা কিংবা তার বিদ্যালয় গমন নিশ্চিত কতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

মীনা চরিত্রটি দেখা যায় সে নিয়মিত সময়মত স্কুলে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে এবং পরিবারের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে। এসকল বিষয়ে বিদ্যালয়ে শিশুদের শিখাতে হবে।

প্রতিটি কর্মই হোক সুন্দর এবং শিশুদের জন্য সহযোগিতামূলক। আর এভাবেই মীনা দিবসের শ্লোগানের যথার্থতা ফুটে উঠবে।

লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
naforhad.du@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence