অবহেলিত সুন্দরবন দিবস
- সোহেল রানা
- প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:০৪ PM
১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে।
একইসঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। খুব উদ্যম উচ্ছ্বাসের সাথেই সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশেও পালিত হয় বিশ্ব ভালবাসা দিবস। গোলাপের সুগন্ধি কপোত-কপোতির মাঝে আত্মার বাঁধন সৃষ্টি করে। আবার এই ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসও। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই দিবসগুলো।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস যতটা উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়। সুন্দরবন দিবসকে ততটাই অবহেলা করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হয়েছে। আবার প্রেম বঞ্চিতরা বিক্ষোভ মিছিলও করেছে কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়নি। একটা বিশ্ববিদ্যালয় একটা জাতির প্রাণ। জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা এখান থেকে তাদের মেধা, মনন, দেশাত্মবোধ গড়ে তুলে,এখান থেকেই জাতি তার জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করতে শিখে।কিন্তু আজ আমাদের বিশ্ববিিদ্যালয় গুলো সুন্দরবনের মত জাতীয় সম্পদ কেন ভাবতে পারে না?
একটা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সব কিছুই নির্ভর করে মিডিয়া কাভারেজের উপর। আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদকে আলোকিত করতে পারছে না। একই সাথে মানুষের মাঝে এর বার্তাও পৌঁছে দিতে পারছে না। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে আমাদের দেশের সব মিডিয়াই বিশেষ বিশেষ সংবাদ পরিবেশন করেছে। সোশাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। কিন্তু কোন মিডিয়ায় আমাদের সুন্দরবন দিবস নিয়ে ফলপ্রসূ কোন সংবাদ প্রকাশ করেনি। শুধু মাত্র প্রথম আলো একটি গবেষণা তুলে ধরেছে, ৫০ বছরের মধ্য সুন্দর বনের বাঘ বিলুপ্ত হতে পারে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ আমাদের এই সুন্দরবন। সুন্দরবন গুরুত্বও তাৎপর্য অনুধাবণ করতে আজ আমরা ব্যর্থ। এজন্যই আমাদের সুন্দরবন দিবস নিয়ে এত উদাসীনতা, এতো অবহেলা।
নামমাত্র সুন্দরবন দিবস বা বইয়ের পাতায় লিখা থাকলেই হবে না। সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচাতে, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হবে হবে। চোরাকারবারি, পশুপাখি শিকারী, ভূমিখোরদের থেকে সুন্দরকে বাঁচাতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভার মাধ্যমে সুন্দরবনের তাৎপর্য প্রান্তিক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া মারাত্মক হুমকির। এজন্য সুন্দরবনের আশে পাশে শিল্পকারখানা বন্ধ রেখে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। মিডিয়াগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের প্রিয় এই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারবো।