যাদের জিপিএ কম তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি!

মুহম্মদ সজীব প্রধান
মুহম্মদ সজীব প্রধান  © পরীক্ষায় বন্ধুদের মতো চমৎকার রেজাল্ট করতে পারো নি তাই মনটা আজ মেঘলা আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে, তাইনা? চারদিকে পরিচিত মানুষের সামনে যেতেও দ্বিধা হচ্ছে।
পরীক্ষায় বন্ধুদের মতো চমৎকার রেজাল্ট করতে পারো নি তাই মনটা আজ মেঘলা আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে, তাইনা? চারদিকে পরিচিত মানুষের সামনে যেতেও দ্বিধা হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে একাকি হতাশার সাগরে হারিয়ে যাচ্ছো। আমি জানি এই মুহুর্তে পুরো পৃথিবীটা তোমার বিরুদ্ধে মনে হচ্ছে এবং নিজেকে ব্যর্থ ভাবছো। চলো, তোমাকে ১টি বাস্তব গল্প শোনাই।
 
আমার কলেজের বড় ভাই নাবিল হাসান। ওনি কলেজে খুবই ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন এবং পরীক্ষাও ভালোই দিয়েছিলেন। কিন্তু যেদিন রেজাল্ট দিয়েছিলো সেদিন আকাশটা ওনার মাথার ওপর ভেঙে পড়েছিলো। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! ওনার অন্যান্য ফ্রেন্ডরা দলবেঁধে এ+ পেলেও ওনি এ গ্রেড পান। অনেকে ওনাকে নিয়ে তখন সমালোচনা করতে এক চুলও ছাড় দেননি। অনেকে তো ধরেই নিয়েছিলো নাবিল এ+ পায়নি মানে ভবিষ্যৎ অমাবস্যা রাতের মতো অন্ধকার।  তবে এর পরের গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়। ওনার ভেতরটা ছিলো আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত যা যেকোনো ব্যর্থতাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়খার করে সফলতার বিনির্মাণ শুরু করার জন্য যথেষ্ট।  সবাই যখন এ+ পাওয়ার বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠে তখন নাবিল ভাই অঝোরে কান্না করে হতাশাকে চোখের জলের সাথে ভাসিয়ে দেয়।
 
নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাতদিন এক করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করে। জিদ করে মারাত্মক ভাবে ২০ গুণ বেশী পড়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো বলে পাগলামি শুরু করে। ফলশ্রুতিতে, ভর্তি পরীক্ষায় দেশের লাখলাখ শিক্ষার্থীদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের জায়গা করে নেন এই জেদী ছেলেটা। এবার বলো, ৩ মাস আগে যে ছেলেটা এ+ না পাওয়ায় সবাই তাকে ব্যর্থ ভেবেছিলো সে ছেলেটা কি আসলেই ব্যর্থ? নিশ্চই সে এখন সফলতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মনে রেখো, দুর্বল ঘুর্ণিঝড় সহজেই উপকূলে আছড়ে পড়ে। কিন্তু শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় প্রথমে উৎপত্তিস্থলে দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করে। তারপর কয়েকটি দেশের উপকূল কাঁপিয়ে সর্বোচ্চ গতিবেগে হাজার মাইল অতিক্রম করে। তাই শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়ের মতো সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করো। তারপর দুর্দান্ত সাফল্যে চারপাশে কাঁপুনি সৃষ্টি করো।
 
চলো এবার জনৈক পণ্ডিতের গল্প শোনাই। স্কুল জীবনে একজন পণ্ডিত ক্লাসে কখনোই পড়া পারতেন না। একদিন তার শিক্ষক তাকে চরম অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দেন। তারপর তিনি নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন। স্কুল থেকে বাড়ি বেশ দূরে ছিল তাই ক্লান্ত হয়ে পাথরের একটি ঘাটে খানিকটা বসে বিশ্রাম নেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন গ্রামের মহিলারা মাটির কলস দিয়ে পানি নেওয়ার সময় যেখানে কলস রাখেন সে স্থানটি ক্ষয় হয়ে গর্তে রূপ ধারণ করেছে যা তাকে ভীষণ ভাবায়। তখন তিনি ভাবতে লাগলেন মাটির কলসের ঘষায় যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে তাহলে আমি চেষ্টা করলে আমার ব্রেন কেন ধারালো হবেনা? তারপর তিনি নিরলস পরিশ্রম করে এক মাস পর ক্লাসে যান তখনই ঘটে ম্যাজিক! তার সেই শিক্ষক তাকে পড়া জিজ্ঞেস করে অবাক হলেন। তাকে বইয়ের যেখান থেকেই প্রশ্ন করা হয় তিনি সেখানে থেকেই নির্বিঘ্নে জবাব দিতে থাকেন। তারপর সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে ওঠেন সে সময়ের প্রথিতযশা পণ্ডিত।
 
তুমিও আজ হয়তো রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মন খারাপ করছো কিংবা কান্না করছো। আমি তোমাকে বলছি, চোখের পানি মুছো আর নিজের সাথে প্রতিশ্রুতি দাও যে আগামি ৩ মাসে নিজেকে বদলে দিবে। তাই এখন থেকেই এমন কিছু করো যাতে আজ যারা ভাবছে তুমি জীবনে কিছুই করতে পারবে না তাদের ধারনা যাতে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আজ যারা কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট করোনি তাদের মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ জীবনে ভালো কিছু করতে জিদ দরকার যা তোমাদের মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার এ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী চান্স পায়না। আবার, তুলনামূলক কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা মেরিট লিস্টে টপ পজিশনে থাকে। তাই আর দেরি কেন পাঞ্জেরী, মাথায় ঢুকাও, তিন ডিজিটের  জিপিএ কখনোই তোমার সমুদ্রের মতো অপার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে না। চ্যালেঞ্জ নাও, আত্মবিশ্বাস রাখো এবং পরিশ্রম করো। মনে রেখো দিনশেষে, সাফল্য আসবেই।
 
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।
ই-মেইল: sajibprodhanbd@gmail.com
 

সর্বশেষ সংবাদ