কখনও বলা হয়নি বাবা তোমায় অনেক ভালোবাসি
- নিশাত তাসনিম সুপ্তি
- প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৯:১৭ PM , আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ০৯:২৭ PM
ভরসা ও ছায়ার নাম বাবা। বাবা মানে উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। বাবা সে তো পরম নির্ভরতার প্রতীক। বাবা দিবস উপলক্ষে নয়, জীবনের প্রতিটি সময়ে বাবার ভালোবাসা অন্যরকম। বাবা শব্দটির মধ্যে বিশালতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। পাওয়া যায় নির্ভরতার আলিঙ্গন। বাবা মানে আশ্রয়, বাবা মানে বৃক্ষ। বাবা মানে এক টুকরো ছাদ। মাথার ওপর বিশাল সীমাহীন আকাশ। বাবা কখনও সন্তানকে বুঝতে দেন না কীভাবে সন্তানের মুখে অন্ন জোগান দেন। বাবা হলেন সন্তানদের নিরাপত্তার ভিত।
প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করে। সে হিসাবে ২০২৩ সালে বাবা দিবস জুন মাসের ১৮ তারিখ। ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতি বছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন।
বাবাকে সবসময় নিজের বাস্তব জীবনের নায়ক হিসাবেই পেয়েছি। ভালোবাসা, শাসন-বারন আর কেয়ারিংয়ের মধ্যে কখন যে জী্বনের ২১ টি বসন্ত পার করেছি বুঝতেই পারিনি। আসলে এখনও বাবার কাছে সেই ছোট্ট শিশু আমি। জীবন সংসারের মায়াজালে সমস্ত রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে অজানা গন্তব্যের সংসারে শান্তির বার্তাবাহক বাবা। বাবা! বাবা! বাবা! ডাকতে ডাকতে নিঃশ্বাস আটকে যায় তবুও বাবা ডাক ছাড়া বাঁচতে মন চায় না।
বাবারা সাধারণত সুপার হিরেই হয়। ঝামেলা-ঝঞ্জাটে যখন জীবনটা কানায় কানায় পরিপূর্ণ তখন বাবারা হাজির হন রিয়েল লাইফ সুপার হিরো হিসাবে। পুরো পৃথিবী যখন মুখ ফিরিয়ে নেয় আমার দিক থেকে, তখন আমার সুপার হিরো চট করে সকল সমস্যার সমাধান দেন। নিজে শত সমস্যায় আচ্ছন্ন থেকেও ফিল্মি স্টাইলে সবকিছুর সমাধান দেন বাবা। ইনি যেন আমার রিয়েল লাইফ মিউজিশিয়ান।
বাবা-মেয়ের সম্পর্কটা যেন অতি ভালোবাসার। সর্বদা খুনসুটিই বেশী চলে। সারাদিন বাবা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে বাসায় ফিরেই 'মা' বলে ডাক দেন, আমিও দৌড়ে আসি আর এখনও খুঁজতে থাকি হাতের দিকে আমার সেই আবদারের জিনিসটা। বাবা আবদারের জিনিসটা হাসিমুখে হাতে তুলে দিয়ে যেন স্বর্গীয় সুখ পান। এ যেন স্রষ্টা নিজে বাবা-সন্তানের এমন মধুর সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন মানবসৃষ্টির পর থেকেই যার সুফল ভোগকারী আমি নিজেই।
এখনও আবছা মনে পড়ে সেই দিনগুলির কথা। শীতের সকালে তোমার কোলে লুকিয়ে থাকা। আর মনে পড়ে সেই বিকেল তোমার আঙুল ধরে হাটতে যাওয়া। যদি পারতাম সেই দিনগুলো ফিরে পেতে তাহলে বুঝি জীবনের পূর্ণতা পেতো। পড়ালেখা আর ক্যারিয়ার নামক মরিচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে আজ বাস্তব আর মধুর ভালোবাসা থেকে অনেক দূরে। আর হয়তো অমন করে জড়িয়ে ধরা হবেনা, হবেনা আর অমন করে আবদার আর কান্না।
বাবা যেকোনো পরিস্থিতিতে সন্তানদের আগলে রাখেন, ছায়ার মতো পাশে থাকেন, নির্ভরতা দেন। সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না। বাবারা নিজেদের বাইরেরটা শক্ত খোলসে আটকে রাখলেও ভেতরটা তার নরম নারকেলের মতো। সন্তানরাও কিন্তু গম্ভীর বাবাকে ঠিকই ভালোবাসে। শুধু মুখ ফুটে বলা হয় না। কখনও সাহস করে বলতে চাই, বাবা তোমাকে ভালোবাসি।
লেখক: শিক্ষার্থী, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়