তুরস্কের নির্বাচন কমিশন এবং পদ্ধতি কতটা স্বচ্ছ

তুরস্কের নির্বাচন
তুরস্কের নির্বাচন  © ফাইল ছবি

দলীয় সরকারের অধীনেই তুরস্কে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমি এখানের ছয়টি নির্বাচন দেখেছি, কোনো নির্বাচন নিয়েই কথা উঠেনি। গতবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে কেউ কেউ কথা উঠাতে চেয়েছিল কিন্তু বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্বয়ং নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে মর্মে বিবৃতি দিয়ে যেকোনো শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছিল। প্রশ্ন হল, এমন কি পদ্ধতি তুরস্কের আছে যাতে সবাই আস্থা রাখতে পারে। আমার কাছে দুটো বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়: 

পদ্ধতিগত দিক: 
১. নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি থাকে। ১১ জন নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশী ভোট পাওয়া চারটি রাজনৈতিক দলের স্থায়ী প্রতিনিধিরা কমিশনের সব মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন, যদিও তাদের ভোটিং পাওয়ার থাকেনা। কিন্তু কমিশন কি করছে, ভিতরে কি আছে তার আদ্যোপান্ত জানে দলগুলোর প্রতিনিধিরা। এভাবে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি থাকে। 

২. ভোটে পোলিং অফিসার হয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে। ৭ জন পোলিং অফিসারের মাঝে যিনি পোলিং বুথের সভাপতি হন তিনিসহ আরেকজন থাকেন সরকারী কর্মকর্তা। আর বাকী ৫ জন থাকেন সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া ৫ দল থেকে (১ জন করে)। তাতে নির্বাচনে আপনি কারচুপি করার সুযোগই পাবেন না। 

৩. পোলিং বুথ সংক্রান্ত আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হল, এখানে একটি নির্বাচনী কেন্দ্রের অধীনে অনেকগুলো ভোট-কক্ষ থাকেনা। বরং এখানে রয়েছে পোলিং বুথ অর্থাৎ প্রতিটি ভোট কক্ষই একেকটি ভোটকেন্দ্র। আর এক একটি পোলিং বুথে মাত্র ৩৩০-৩৪০ এর মতো ভোটার থাকে। ফলাফল তৈরিতে স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে প্রত্যেক বুথের আলাদা হিসাব হয়। তাতে স্বচ্ছতা বেশী থাকে। আপনি সন্দেহ করলেই ৩৩০-৩৪০ ভোট সহজেই হিসাব করতে পারবেন। তুরস্কে এবার পোলিং বুথের সংখ্যা ২ লাখের কিছু বেশী।

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা। রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ জনগণের নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি সিরিয়াস। এখানে কারচুপি করে জিতবে এমন চিন্তাই সচরাচর কেউ করেনা। কারচুপি করাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু মনে করে। আর এসবই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বুঝায়।

তারপরও প্রতিটি সিস্টেমের কিছু গলদ থাকতে পারে। কিছু সিস্টেম লস হতে আরে। কিছু অভিযোগ উঠতে পারে। কিন্তু সবমিলে তুরস্ক একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

তুরস্কে নির্বাচনের দিনের আমেজ কেমন?

স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আপনি এখানের রাস্তা-ঘাট ও ভোটকেন্দ্রে তেমন কোনো আমেজ পাবেন না। শান্ত একটি দিন। সবাই সবার মতো আসছে। ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছে। ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে আমাদের দেশের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর কোন স্ট্যান্ড নাই, কোন শক্তি প্রদর্শন নাই। নাই পুলিশ-আনসারের বহর, সেনাবাহিনীরতো প্রশ্নই উঠেনা। হয়তো ১-২ জন পুলিশ সর্বোচ্চ থাকে, সহায়তা করার জন্য বিশেষত মুরুব্বীদের। 

অথচ তুরস্কের নির্বাচনগুলোতে ৮৫% ভোট কাস্ট হয়। এবার হয়তো আরও বেশী হতে পারে। নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়। কারো তেমন কোনো অভিযোগ থাকেনা। এমন সুন্দর একটি নির্বাচন পদ্ধতি ও পরিবেশ তারা তৈরি করতে পেরেছে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, তোকাত গাজী উসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence