শিশুর উন্নতিতে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা ও গুরুত্ব
- মোস্তাহেদা পারভীন মৌ
- প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১৮ PM , আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৩ PM
প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর ভবিষ্যৎ তৈরি করে। তৈরি করে একটি জাতির ভবিষ্যৎ। এই কারনেই পৃথিবীর সব দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার হিসাবে ধরা হয়েছে। প্রতিটি শিশুর শিখতে চাওয়ার প্রবণতা, চারিত্রিক গঠন, বিভিন্ন ধরনের মৌলিক শিক্ষা ইত্যাদি সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখানো হয়। যেটি ভবিষ্যতে তাদের সারা জীবনের উন্নয়নের চাবিকাঠি হয়ে উঠে।
প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের খুবই ধীরে ধীরে মূল্যবোধ, সততা, চিন্তা করার ক্ষমতা, দেশ প্রেমিক হয়ে উঠার শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা শুধুমাত্র একটি শিশুর উন্নতির জন্যই নয় বরং একটি দেশের জন্যও বটে। কারন প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ লেখাপড়ার ভিত্তি এই প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব:
প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমেই একটি শিশু লিখতে পড়তে শিখে। জীবনের মৌলিক শিক্ষার শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে। সামাজিকতা, নৈতিকতা, পরষ্পর যোগাযোগ, সহমর্মিতা এসব গুনের সাথে পরিচয় ও চর্চা হয় প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গনেই। সার্বিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব একটি শিশুর জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটিও আমরা বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা করলেই আরো সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারবো।
আরও পড়ুন: নিয়োগের পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ থেকে হিন্দু শিক্ষককে অব্যাহতি
১. নৈতিকতা
নৈতিকতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা একটি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পাবে। একজন শিক্ষক তার অভিজ্ঞতা ও শিখানোর মাধ্যমেই একটি শিশুর সারা জীবনের নৈতিকতার ভিত্তি গড়ে দিতে পারেন প্রাথমিক শিক্ষা জীবনেই।
২. সামাজিকতা
সামাজিকতা শিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে বড় কোন কিছুই হতে পারে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসার আগে একটি শিশু কেবল তার মা-বাবা ভাই-বোন আত্নীয় স্বজনের সাথেই মিশেছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে আসার পর সে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছে, খেলছে, অনেকটা সময় একসঙ্গে থাকছে ফলে সামাজিকতার মহান পাঠ সে প্রাথমিক শিক্ষাতেই পেয়ে যাচ্ছে।
৩. পড়তে শিখা ও যোগাযোগ
একটি শিশু প্রথম বারের মতো পড়তে শিখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পড়ার অভ্যাসটি অবশ্যই সারাজীবনের জন্য অন্যতম সেরা একটি অভ্যাস। পড়ার মাধ্যমেই সবার সাথে যোগাযোগের বিষয়টিও আয়ত্ত করতে সুবিধা হয়।
৪.আত্মবিশ্বাস
একটি মানসম্পন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের দক্ষতা ও বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকেই আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে।
প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা: প্রতিটি শিশুর প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হলো শিক্ষা। এটি শুধুমাত্র সরকার একার দায়িত্ব নয় বরং প্রতিটি বাবা মাকেও সমানভাবে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, প্রতিটি শিশুর জ্ঞান বা চেতনা বৃদ্ধি করা, আত্মোন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি করা, মানসিক বিকাশ ঘটানো, স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করা, শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে ধারনা, সর্বোপরি নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করা।
প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর সামাজিক, মানসিক, দৈহিক, সাংস্কৃতিক, আবেগীয় বিষয় সংক্রান্ত সকল বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করবে। উল্লিখিত বিষয় গুলোর সুশিক্ষা একটি শিশুর সারাজীবনের পথ চলার সঙ্গী হয়ে থাকবে। প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু একটি শিশুর শিক্ষা জীবনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে, তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। খুব ভালো ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হলে প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা প্রতিটি শিশুর মনে দেশ প্রেমের বীজ বুনে দিতে পারি, প্রতিটি শিশুর মননে সততা ও নৈতিকতার বীজ বুনে দিতে পারি, প্রতিটি শিশুর অন্তরে ভালবাসার পাহাড় তৈরি করতে পারি। ভবিষ্যতে এসব বীজ বৃক্ষে পরিণত হবে, ভালবাসার পাহাড় এভারেস্টে পরিনত হবে, দেশ ও জাতি পাবে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
লেখক- সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।