স্কুল-কলেজে এক, মাদ্রাসায় ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৫ PM
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন নীতিমালার খসড়া অনেকটাই চূড়ান্ত করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এ নীতিমালায় স্কুল-কলেজ এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের এবং মাদ্রাসার জন্য পৃথক পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক করা হয়েছে।
রবিবার বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত এনটিআরসিএ-এর নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করতে শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, তিন অধিদপ্তরের ডিজিবৃন্দ, বোর্ডসমূহের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত, যুগ্ম ও উপসচিববৃন্দের সমন্বয়ে একটি সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি কেমন হবে, কত নম্বরে পরীক্ষা হবে সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত বলা সম্ভব না।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএর একটি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি এবং মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে। স্কুল-কলেজ এবং কারিগরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর বিষয়ভিত্তিক এবং অবশিষ্ট ১০০ নম্বর হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ওপর।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নম্বরের বেশ পার্থক্য থাকছে। মাদ্রাসায় পরীক্ষা ২০০ নম্বরের মধ্যে হলেও ১৪০ নম্বর হবে বিষয়ভিত্তিক। অবশিষ্ট ৬০ নম্বর হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর।
স্কুল-কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার পরীক্ষা পদ্ধতিতে এমন পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদ্রাসায় আরবিসহ অন্যান্য বিষয় পড়ানো হয়। তাদের পড়ানোর পদ্ধতি ভিন্ন। সেজন্য অন্যান্য বিষয়ের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মাদ্রাসায় নিয়োগের প্রশ্নের মানবন্টনে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের আরেকটি বড় পরিবর্তন হলো- আরবি প্রভাষকের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মতো স্নাতকোত্তরের শর্ত বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশোধীত বিধিমালায় বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে।’
এনটিআরসিএর সংশোধীত বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় থাকবে দুটি ধাপ—বাছাই (নির্বাচনী) পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচনী পরীক্ষা, যা এমসিকিউ ভিত্তিক হতে পারে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে শূন্য পদের দ্বিগুণ প্রার্থীকে ডাকা হবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য।
দ্বিতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা হবে ২০ নম্বরের। উভয় ধাপেই উত্তীর্ণ হতে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ করা হবে এবং সেখানে শূন্য পদের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ প্রার্থীর নামও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণরা তিন বছরের জন্য একটি সনদ পাবেন। এ সনদধারীরাই সরাসরি নিয়োগ পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন।
নতুন বিধিমালায় নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছরই বহাল থাকছে। তবে বয়স গণনা করা হবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে। এর ফলে সনদ পেতে পেতে কারো বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করলেও তারা চাকরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকা সত্ত্বেও প্রার্থীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। এনটিআরসিএ’র সুপারিশ পাওয়ার পরও নানা জটিলতা তৈরি হয়। নতুন বিধিমালা এসব জটিলতা দূর করার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবর্তিত পদ্ধতিতে পুরো প্রক্রিয়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর হবে। এতে আইনি জটিলতা কমবে এবং নিয়োগ কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।’
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। তাদের মতে, বিসিএসের আদলে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়া হলে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা সহজ হবে। দীর্ঘদিন ধরে সুপারিশ ও বিভিন্ন প্রভাবের কারণে যে বাধা তৈরি হচ্ছিল, নতুন ব্যবস্থায় তা অনেকটাই দূর হবে বলে তারা আশা করছেন।