ফুটপাতে বসবাস, ছেলেকে অফিসার বানানোর স্বপ্ন মিতালির

ফুটপাতে বসে ছেলেকে পড়াচ্ছেন মিতালি
ফুটপাতে বসে ছেলেকে পড়াচ্ছেন মিতালি  © সংগৃহীত

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। চারপাশে গাড়ির হর্নের শব্দ আর ধূলাবালি। এর মধ্যেই পাশের ফুটপাতে বসে মা মিতালি রানী দাস তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে দীপকে শেখাচ্ছেন বাংলা বর্ণমালা।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় পাশ থেকে এমন পড়ার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এই ফুটপাতে বসেই মা মিতালি ছেলেকে ‘অফিসার’ বানানোর  স্বপ্ন দেখছেন। তবে পরক্ষণেই আবার বললেন, ছেলেকে অফিসার বানাতে তো অনেক টাকার দরকার।

আরও পড়ুন: স্মৃতি থেকে আঁকা ম্যাপে ৩৩ বছর পর মা-ছেলের পুনর্মিলন

এইচএসসি পর্যন্ত পড়ুয়া এই নারী বাবা-মা ও তিন বোনের মধ্যে বাবাকে হারিয়েছেন ১৯৯৯ সালে। অন্য স্বজনদের সঙ্গেও নেই কোন যোগাযোগ। বর্তমানে, তার ছন্নছাড়া সংসারে রয়েছে কেবল শিশু ছেলে, লেখার স্লেট, বিভিন্ন বই রাখার জন্য কাপড়ের ব্যাগ, ছোট পানির বোতল, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ওজন মাপার মেশিন। 

জানা যায়, ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিতালিকে ২০১৬ সালে ছেড়ে চলে যান তার স্বামী। এরপর শুরু হয় মা ও ছেলের টিকে থাকার সংগ্রাম। তিনি ফুটপাতে ঐ ওজন মাপার মেশিন নিয়ে বসেন সকাল ১০টা বা ১১টার দিকে। এখানে মানুষের ওজন মেপে তার প্রতিদিনের আয় ২০০ থেকে ৫০ টাকা। এ কাজে প্রথম দিকে আশপাশের অনেকের কাছ থেকে বাজে মন্তব্য শুনলেও এখন আর শুনতে হয় না বলে জানান তিনি। 

মিতালির স্বামীও ওজন মাপার কাজ করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মিতালি একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। সেই থেকে জমানো টাকায় হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। অস্ত্রোপচারের পর ছোট বাচ্চাকে নিয়ে মিতালি আগের মতো কাজ করতে পারতেন না। তাই মাত্র ৪৪ দিন বয়সী ছেলেকে নিয়ে গৃহকর্মীর কাজটি হারান।

আরও পড়ুন: ঠাণ্ডায় কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

শেষে নিরুপায় হয়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন সাজেদা ফাউন্ডেশনের দ্বারস্থ হোন। এই ফাউন্ডেশনেরই একটি সেন্টারে রাতে ছেলেকে নিয়ে থাকার সুযোগ পান মিতালি। ছেলেকে ছয় মাস বয়স থেকেই ফাউন্ডেশনের পশ্চিম তেজতুরী বাজারের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখেন মিতালি। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে কেন্দ্রটি বন্ধ থাকলেও এখনো সেখান থেকে দেওয়া হচ্ছে দুপুরের খাবার। পাচ্ছেন শীতের কাপড়সহ অন্যান্য সহায়তাও। তবে কেন্দ্রটি আবার খুললে সেখানে তার ছেলে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত থাকার সুযোগ পাবে। তারপর ছেলেকে কোথায় রাখবেন, কীভাবে স্কুলে ভর্তি করাবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার। এ প্রসঙ্গে মিতালি বলেন,‘ভবিষ্যতে কী আছে কপালে, তা তো জানি না।’

আরও পড়ুন: আবর্জনার বিনিময়ে মিলবে বই পড়ার সুযোগ

এদিকে, যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিতালি জানিয়েছেন, ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি করা একজন তাকে ওজন মাপার মেশিনটি কিনে দিয়েছেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে শাহনাজ বেগম নামের আরেকজন তার নিজের বাসার ছাদে ছোট একটি ঘর করে তাকে ছেলেসহ থাকতে দিচ্ছেন।

স্বামী চলে যাওয়ার পর আর দ্বিতীয় বিয়ে করার চেষ্টা করেননি জানিয়ে মিতালি বলেন, প্রথম স্বামীই ছেড়ে চলে গেছেন, দ্বিতীয় স্বামী তার পাশে থাকবেন, সে নিশ্চয়তা তো নেই। মা ও ছেলে যেমন আছেন, তাতেই খুশি মিতালি। কারও বিরুদ্ধে রাগ, অভিমান বা অভিযোগ নেই। এ সময় তিনি আরও জানান, ছেলে হওয়ার পর থেকে আমার ভাগ্য খুলেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence