‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নয়, ঘরে থেকেও মরছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২১, ১১:৪৯ AM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২১, ০১:২৪ PM
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ঘরে বসেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মারা যাচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অন্তত ৫৭ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার যৌক্তিকতা এবং কার্যকারিত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতেই সরকার করোনার এই সংকটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। শিক্ষার্থীদের জীবন যদি না থাকে, তাহলে শিক্ষিত হয়ে কী হবে? তাই জীবন বাঁচাতেই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পড়ুন: করোনায় ঝরে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ১৮ শিক্ষার্থীর প্রাণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ এম রাহাত বলেন, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নয়, ঘরে থেকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মারা গেছেন। যারা মারা যাচ্ছেন শিক্ষকদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যাটাই বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে এটা হতে পারে। তবে মৃত্যু ও আক্রান্তের কথা ভেবে ধারাবাহিকভাবে এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। অন্যান্য সেক্টরগুলো যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয়েছে সেভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হতে পরে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নুর মুহাম্মদ সুমন বলেন, যে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেটির আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। এরজন্য মৃত্যু ও আক্রান্তের কারণ চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সেটিতে কাজ করতে হবে। এখন দেশে টিকা আছে। ব্যাপকহারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পড়ুন: করোনায় মৃত্যুর মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ শিক্ষক
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অন্তত ৫৭ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঘরবন্দী অবস্থায় হতাশাসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেলের ৪০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, ঘরবন্দী থেকেও তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেন মারা যাচ্ছেন? শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে নিরাপত্তার স্বার্থে নামে মাত্র শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখারা কথা বলছেন। কিন্তু এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা যেমন অসচেতন, তেমনি শিক্ষকদেরও একটি অংশ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। ফলে তারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ঘরে থেকেও সংক্রমণটা শিক্ষার্থীর মাধ্যমে বেশি ছড়াচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকার খবরে দেখি, শিক্ষার্থী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছেন। দেখা যায় তাদের কোন কাজ নেই। তবুও বের হচ্ছেন। অন্যদিকে শিক্ষকরা তো অভিভাবক; তাদের বের হতেই হয়। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, ঘরবন্দী থেকে করোনা ছাড়াও হতাশায় অনেকে আত্মহত্যা করেন।
>>> আত্মহত্যার মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ শিক্ষার্থী, ১১ জনই ঢাবির
>>> মানুষ আত্মহত্যা কেন করে?
>>> আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়
>>> আত্মহত্যা রোধে দরকার সচেতনতা
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের এক অনুসন্ধানের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৪০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এদিকে, এ পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ১১ আগস্ট থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করে সকল সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও খোলার দাবি উঠছে।
সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি রয়েছে। যেখানে ঘরে থেকেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে এ বিষয় নিয়েও কথা হচ্ছে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে এভাবে শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ থাকতে পারে না; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। অন্যান্য সেক্টরগুলোতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অন্যান্য সেক্টরগুলো থেকে অনেকটা সচেতন এবং তারা তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে অভিজ্ঞ। এছাড়া টিকা দেয়ার পর শরীরে এক ধরনের নিরাপত্তা জোরদার হবে। এরপরেও কেউ যদি আক্রান্ত হন তাহলে তাদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে। করোনা প্রতিরোধে প্রচারণা চালাতে হবে।