নিজের সম্পদের হিসাব দিলেন প্রেস সচিব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ AM , আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৫ AM

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে সময় বেঁধে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সবশেষ সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিজের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সম্পদের বিবরণী লিখে ফেসবুকে নিজের আইডিতে একটি পোস্ট করেন তিনি।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘২০০০ সালের দিকে আমার বাবা ঢাকা শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এলাকা ডেমরার কাছে জুরাইন ও যাত্রাবাড়ীর মধ্যবর্তী দনিয়া এলাকায় পাঁচতলা একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করেন। সেই ভবনের একটি ১১৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। ২০১০ সালে দনিয়া ছেড়ে চলে এলেও এখনো সেই ফ্ল্যাট আমার মালিকানায় আছে।’
‘একসময় আমি সেটি আমার এক ভাইয়ের কাছে বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম, যিনি এখনো সেখানে থাকেন। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। জীবনের এক পর্যায়ে হয়তো আবার দনিয়ায় ফিরে যাব। মা-বাবার বাড়িতে গেলে আমি এখনো সেই সরু করিডোরগুলোতে তাদের হাঁটতে দেখি। আমার প্রয়াত বাবার কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনি, মা যেভাবে বিনয়ের সঙ্গে সালাত আদায় করতেন, তাও যেন দেখতে পাই।’
‘২০১৪ সালে আমি শাহীনবাগে ১১০০ বর্গফুটের একটি তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। ভাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছু টাকা দিয়েছিলেন, আর বাকিটা আমার সঞ্চয় থেকে দিয়েছিলাম। আমি জায়গাটি ভালোবাসি। তবে নিরাপত্তার কারণে হয়তো খুব শিগগিরই এই ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে হবে। সম্প্রতি দেখছি, আমাদের এলাকার মসজিদের ভিক্ষুকরাও আমাকে চেনেন। কিছুদিন আগে কয়েকজন তরুণ আমাকে তাদের আড্ডার সামনে দিয়ে হাঁটার সময় ‘গণশত্রু’ বলে ডেকেছিল। এ কারণে আমাকে হয়তো শিগগিরই সরকারি একটি ফ্ল্যাটে চলে যেতে হবে। আমার পরিবার এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।’
‘প্রায় পাঁচ বছর আগে আমি আমার এক শ্যালকের কাছ থেকে ময়মনসিংহে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। খুব সস্তায় পেয়েছিলাম সেটি। একই ভবনে আমার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। এই দুটি ফ্ল্যাট আমাদের জন্য মাসিক আয়ের একটি উৎস। এ ছাড়া গ্রামে আমার ৪০ শতাংশ আবাদি জমি আছে। বহু বছর ধরে একটা ভ্রান্ত ধারণায় ভুগেছি যে, অবসরে গ্রামে ফিরে যাব। শুধু লিখব আর হাঁটব, এটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু এখন মনে হয়, গ্রামে আর কখনো ফিরে যাওয়া হবে না। হয়তো আমি মরে গেলে আমার সন্তানরা আমাকে মা-বাবার পাশেই কবর দেবে।’
‘একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা (১১.৪ মিলিয়ন টাকা) সঞ্চিত আছে উল্লেখ করে পোস্টে তিনি আরও লেখেন, এই আগস্টে আমি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিতে দুই দশকের চাকরি ছেড়েছি। অ্যাকাউন্টে থাকা বেশির ভাগই আমার এএফপির চাকরির পেনশন ও গ্র্যাচুইটির টাকা। কিছু মানুষ আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। আমার ধারণা, বছরের শেষে আমার সঞ্চয় হয় অপরিবর্তিত থাকবে, নয়তো খরচের কারণে কমে যাবে। আমার একটি গাড়ি আছে। ঢাকা শহরে একটি গাড়ি পরিচালনা এবং ড্রাইভার রাখার মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা।’
‘আমি জানি না, প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শেষ করার পর আমার ভাগ্য কোথায় নিয়ে যাবে। তবে নিশ্চিত জানি, এই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কোনো কাজ না পেলেও আমি মধ্যবিত্তের মতোই সাধারণ জীবন যাপন করতে পারব। ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই আপনার উপার্জন নিয়ে মিথ্যা রটায়। এটাই আমার পূর্ণাঙ্গ সম্পত্তির প্রকাশ।’