আড়িপাতার চর্চা থেকে নাগরিকদের মুক্ত করতে আইনি কাঠামোর তদন্ত দরকার: সাবহানাজ 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং পলিসি ফেলো শাবহানাজ রশিদ দিয়া
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং পলিসি ফেলো শাবহানাজ রশিদ দিয়া  © সংগৃহীত

ব্যক্তিগত ফোনালাপ এবং অনলাইনের কার্যক্রমে আড়িপাতার ক্ষেত্রে এনটিএমসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং পলিসি ফেলো সাবহানাজ রশিদ দিয়া। এ ধরনের প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী নির্ধারণের আহবান জানিয়েছেন তিনি। নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ আহবান জানিয়েছেন। আড়িপাতার চর্চা থেকে নাগরিকদের মুক্ত করতে আইনি কাঠামোর তদন্ত দরকার বলে মত তার।

সাবহানাজ রশিদ বলেছেন, ব্যক্তিগত ফোনালাপ এবং অনলাইনের কার্যক্রমে আড়িপাতা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এরকম মানবাধিকারবিরোধী এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী চর্চা বন্ধ করার দাবি বহুদিনের। আড়িপাতার ক্ষেত্রে এনটিএমসির ভূমিকা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে এবং এ সংস্থাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এনটিএমসি কীভাবে শুরু হলো, কোন আইনের দোহাই দিয়ে এতদিন কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে, এসব বিষয় আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করলে আদৌ আমরা নাগরিক পর্যায়ে আড়িপাতার প্রথা থেকে মুক্ত হতে পারবো কি না, সেটিও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জানি বাংলাদেশের আইনে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমনভাবে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে যে, আজ এনটিএমসি বন্ধ হলেও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে একইভাবে নাগরিকদের উপর নজরদারি চালানো সম্ভব। ডিপ প্যাকেট ইন্সপেকশন বা ইন্টারনেট ট্রাফিক মনিটরিং শুধু ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশন (ডিওটি) বা একটি বিশেষ সংস্থা করে না, বরং অনেক সংস্থা এবং প্রাইভেট কোম্পানি এর সঙ্গে জড়িত।

সাবহানাজ রশিদ বলেন, আরও কথা উঠেছে, গত ১০-১৫ বছরে রেকর্ড করা ফোনালাপ বা অনলাইন প্রোফাইল মুছে ফেলতে হবে। এ ধরনের উপাত্ত যেমন গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, তেমনি ভবিষ্যতে মামলায় উপযুক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যেতে পারে। গণহারে তা ধ্বংস করা একেবারেই ঠিক হবে না, বরং আলোচনায় উঠে আসা উচিৎ এই বিপুল উপাত্তের কাস্টোডিয়ান কে হবে, সেইটি কোন পদ্ধতির অধীনে হবে, কোন আইনী প্রক্রিয়া এই ধরনের উপাত্ত কোর্টে পেশ করা যাবে এবং এটির অপব্যবহার কীভাবে ঠেকানো যাবে। 

আরো পড়ুন: হাবিপ্রবির প্রশাসনিক পদের দায়িত্বে এক অনুষদের প্রাধান্য, সমালোচনা

সত্যিকার অর্থে যদি আড়িপাতার চর্চা থেকে সাধারণ নাগরিকদের মুক্ত করতে চাই, তাহলে একটি আইন বা সংস্থার দিকে না তাকিয়ে আমাদের পুরো আইনগত কাঠামো কীভাবে অসাংবিধানিকভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে, তা আরও গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন, যোগ করেন তিনি।

সাবহানাজ রশিদ আরো বলেন, ব্যক্তিগত উপাত্ত কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন বিশেষ অবস্থার অধীনে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অ্যাক্সেস করতে পারবে, কতদিনের জন্য পারবে, কার নির্দেশে পারবে— এ ধরনের প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র, সরকার, দেশীয় প্রাইভেট কোম্পানি, বিদেশী কোম্পানি ইত্যাদির দায়িত্ব কী কী, সেটিও পাবলিক কনসাল্টেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা অত্যন্ত জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ