গতিময় নগরে যে ছাদে মেলে শান্তি

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদ
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছাদ  © টিডিসি ফটো

আশ্বিনের নির্মল আকাশের পটভূমিতে অসংখ্য অট্টালিকার মাঝ দিয়ে অস্ত যাচ্ছে সূর্য, ছাদের আড্ডার টেবিলে রাখা বই কিংবা গরম চা আর সিঙারা- এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে রাজধানীর বাংলামটরে গড়ে ওঠা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাংস্কৃতিক ভবনের ছাদে থাকা ক্যাফেটেরিয়ায়। ইট-পাথরের ঠাস বুনটে দাঁড়িয়ে থাকা বই বোঝাই এই দালানের ছাদে রয়েছে অসংখ্য গল্প আর বহু জ্ঞানপিপাসুর পদচারণা।

শহরের কোলাহলের মাঝে দু-দণ্ড শান্তিতে বসে আড্ডা দেয়াটা বেশ লোভনীয় হলেও তার জন্য পোহাতে হয় অনেক কষ্ট। নগরের বাণিজ্যিক কিছু প্রতিষ্ঠান এমন সুযোগ করে দিলেও তা সকলের নাগালের মধ্যে থাকে না। টিউশনির বেতন, কিংবা জমানো 'পকেট মানি'র ছোট্ট একটা অংশ দিয়ে করা নাস্তা, কোলাহল মুক্ত সুন্দর পরিবেশ এবং বন্ধু বা সমমনাদের সাহিত্য আড্ডা, এই সংমিশ্রণ মহামূল্যবান বলা যেতেই পারে। 

গল্পের গরু কেবল গাছেই ওঠে না, কথিত আছে আড্ডায় গল্পে বেড়িয়ে আসে অনেক বড় বড় চিন্তা আর পরিকল্পনা। বই বা, সাহিত্যের আড্ডাও প্রসারিত করে মানুষের কল্পনার জগৎ, দেখাতে পারে দারুণ সব সম্ভাবনা, শেখায় নিজে পরিধিকে প্রসারিত করতে। পৃথিবীর অনেক বড় শহরেই বইয়ের দোকানগুলোতে লেখক-পাঠকদের আড্ডা জমে ওঠে প্রতিনিয়ত। ব্যাসদেবের মহাভারত থেকে জানা যায় মুনিঋষিরা তাদের জপ ও তপের মাঝে আড্ডা দিতেন। সত্যজিতের সিনেমাতেও লক্ষ করা যায় প্রাচীন গ্রিস ও রোমে আড্ডা দেয়ার প্রচলন। সক্রেটিস, প্লেটোরাও আড্ডা দিতেন শহরের মূল কেন্দ্র ফোরামে। পাবলো পিকাসোদের আড্ডা জমতো মাদ্রিদ, প্যারিস শহরে। ঋভু চট্টোপাধ্যায়ের এক লেখায় দেখা যায়, জাঁ পল সার্ত্র ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘ক্যাফে দ্য ম্যাগো’ নামে এক কফি হাউসে আড্ডা দিতেন। এই ক্যাফে সম্পর্কে স্টিভ ম্যাশেট নামে একজন লেখক লিখেছেন, ‘The first café in the quarter to be blessed by morning sun..’। আর বাংলার কালজয়ী গান 'কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই' এর সাথে আমরা কেউ-ই অপরিচিত নই।

আরও পড়ুন: পাথরে ফুল ফুটবে কবে?

ঠিক এমনই আড্ডার চাহিদাতেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে প্রতি বিকেলেই আগমন ঘটে তরুণ থেকে প্রবীণ লেখক-পাঠকদের। নিজস্ব প্রশান্তিতে মহিমান্বিত এই ছাদ মঙ্গলবার ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। স্বল্পমূল্যেই মেলে মুখরোচক হালকা খাবার। বহুতল এই ভবনে রয়েছে লাইব্রেরি, বই বিক্রয় কেন্দ্র, শ্রেণিকক্ষসহ একাধিক মিলনায়তন। কাজ শেষে দিনের শেষ ভাগে যেমন নানান গল্প এসে ঠাঁই নেয় ভবনের ছাদটিতে, তেমনি গরম চায়ের মতোই জমে ওঠে গরম সাহিত্যিক বিতর্ক। 

দিনের শেষে কাপ গুলো খালি হলেও পূর্ণ হয় জ্ঞানের ভাণ্ডার কিংবা মনের প্রশান্তি। নিয়ম করে সূর্য ঢলে পড়ে ইটের দালানের পেছনে। ব্যতিক্রম এই যে, বাকি গল্পের মতো নটে গাছটি এখানে কখনো মুড়োয় না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence