আগ্নেয়াস্ত্রসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান, সূচনা’র পদ হারানোয় আনন্দ কুমিল্লায়
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪৭ PM , আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪৭ PM
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাকে অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে কুমিল্লা নগরীতে বইছে আনন্দের বন্যা। এর আগে একই প্রজ্ঞাপনে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অপসারণের পর প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে তাহসীন বাহার সূচনার নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে নগরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় মুখ খুলছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এর আগে উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ঠিকমতো কাজ গুছিয়ে উঠতে পারেননি তাহসীন বাহার সূচনা। মাত্র পাঁচ মাস আগে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শপথ নিয়েছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারের বড় মেয়ে ডা. তাহসীন বাহার সূচনা।
আরও পড়ুন: হাসিনা-কাদের-নওফেলসহ ১০৮ জনের নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রামে মামলা
গত ৪ আগস্ট কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়াকে আওয়ামী লীগের লোকজন কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। গতকাল রবিবার রাতে এ ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তাঁর মেয়ে সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় করে একটি হত্যা মামলা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, তাহসীন বাহার সূচনা প্রথম থেকেই ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করে তাঁর ফেসবুক থেকে বিভিন্ন লেখা পোস্ট করেছেন। গত ১৮ জুলাই কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই দিন বিকেলে সূচনা পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কোটবাড়িতে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে নগরীর পূবালী চত্বরসহ যেখানেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গিয়েছিল সেখানেই তাঁর অনুসারীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। জিলা স্কুলের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী জানান—গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তাহসীন বাহার সূচনার অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মুনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে জিলা স্কুলের মাঠে নিয়ে ফটক বন্ধ করে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এ সময় খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন আসছে আগামী সপ্তাহে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
এরপর শিক্ষার্থীরা গত ২ আগস্ট জুমার নামাজের পর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে নগরীর ঝাউতলা ছাতা মসজিদ এলাকায় জড়ো হন। পরে তাঁরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি রেসকোর্স এলাকায় গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
৪ অাগস্ট সকাল থেকে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও নগরীর পূবালী চত্বরে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। দুপুরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুল সার্কিট হাউজ হয়ে ফৌজদারি মোড়ে যায়। সেখান থেকে পুলিশ লাইন্স হয়ে শাসনগাছা গিয়ে শেষ করবে মিছিল। তবে মিছিলটি পুলিশ লাইন্স পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু গুলি করে। বাঁশের লাঠি, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এ সময় আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিতেও বাধা দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।