ভারতকে যে চরম উভয় সঙ্কটে ফেলেছে শেখ হাসিনা
- বিবিসি
- প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ PM , আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ PM
বহু বছর ধরে ভারতের সবচেয়ে প্রিয় বিদেশী অতিথিদের অন্যতম হলেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই থাকুন বা বিরোধী নেত্রী, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে চরম বিপদের মুহূর্তে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী– বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে দিল্লির দরজা তার জন্য সব সময় অবারিত থেকেছে। সেটা ইন্দিরা গান্ধীর আমলে যেমন, তেমনি বাজপেয়ী-মনমোহন সিং বা নরেন্দ্র মোদির আমলেও।
কিন্তু সোমবার এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের একটি সামরিক বিমান দিল্লির উপকণ্ঠে অবতরণ করার পর যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দিল্লি একেবারেই প্রস্তুত ছিল না।
বস্তুত এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ভারত সরকারকে এতটাই অপ্রস্তুত ও হতচকিত করেছে যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক একটি বিবৃতি দিতেও তারা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়েছে। অথচ এই সময় পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছিল, যেখানে সরকার প্রতিটি ছোটবড় ঘটনা নিয়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ক্যাবিনেটের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠকেও বসেছিল- সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ সিনিয়র কর্মকর্তারা সবাই উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ঠিক কী করবে, ওই বৈঠকে সে ব্যাপারেও কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যেতে চাননি: জয়
ব্রিটিশি সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে—শেখ হাসিনা যতটুকু সময়ই দিল্লিতে থাকুন- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সাথে প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ করবেন কি না অথবা করলেও সেই বৈঠকের কথা প্রকাশ করা হবে কি না, সে ব্যাপারেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অথচ শেখ হাসিনা নিজেই দেখা করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
দিল্লিতে একাধিক পর্যবেক্ষক জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতি ভারত সরকারকে একটা ‘ক্যাচ টোয়েন্টি টু সিচুয়েশন’ বা চরম উভয় সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে, এ কথা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে।
আর এই বিপদটা আসছে দু’দিক থেকে-এক, ব্যক্তি শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দিল্লি কী পদক্ষেপ নেবে আর দুই, বাংলাদেশের ভেতরে যা ঘটছে—সেটাকেই বা দিল্লি কিভাবে অ্যাড্রেস করবে।
যেমন- শেখ হাসিনাকে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়াটা ভারতের উচিত হবে কি না, তা নিয়েও ভারতে দু’রকম মতামত শোনা যাচ্ছে। অনেকে যেমন এর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, আবার এর বিপক্ষেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ।
আরও পড়ুন: কী হয়েছিল শেষ মুহূর্তে, যে পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা
আবার বাংলাদেশের ভেতরে এই মুহূর্তে যে ধরনের পরিস্থিতির খবর আসছে, সেখানে দিল্লির কী করণীয় আছে তা নিয়েও পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে স্পষ্ট দ্বিমত আছে।
একদল মনে করেন, বাংলাদেশে এখন যে ধরনের ভারত-বিরোধিতার ঝড় দেখা যাচ্ছে তাতে ভারত অতি-সক্রিয়তা দেখাতে গেলে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে যাবে। সে দেশে ভারতীয় স্থাপনা, ভারতের শিল্প বা ভারতীয় নাগরিকদের আরো বড় বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হবে এবং ভারত-বিরোধিতা আরো বেশি ইন্ধন পাবে বলে তাদের যুক্তি।
সরকারিভাবে ভারত অবশ্য এখনো ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’– অর্থাৎ পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখার কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে। কিন্তু এই পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্কগুলো ভারতকে যে প্রবল দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছে তাতে কোনো সংশয় নেই।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া কি উচিত হবে?
সোমবার দুপুরে যখন শেখ হাসিনার গতিবিধি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা, ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার ছিলেন এমন একজন সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদকে মেসেজ করেছিলাম, ‘শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ঢাকা ছেড়েছেন জানতে পারছি, আপনি কিছু শুনেছেন?’
আরও পড়ুন: পুলিশ নেই ঢাকার ‘বেশিরভাগ’ থানায়
সাথে সাথে তিনি সংক্ষিপ্ত জবাব দেন, ‘যেখানে খুশি যান, ভারতে না এলেই হলো!’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের জেরে শেখ হাসিনাকে ভারতে পালিয়ে আসতে হলে সেটা নিয়ে যে দিল্লিতেই একটা প্রবল দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করবে, তা তার ওই মন্তব্যেই স্পষ্ট ছিল।
দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো তথা বাংলাদেশ গবেষক ম্ম্রুতি পট্টনায়ক এই কথাটাই আবার বলছেন একদম চাঁছাছোলা ভঙ্গীতে।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি শেখ হাসিনা যদি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তাহলেও ভারতের উচিত হবে না সেটা মঞ্জুর করা’, এদিন একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রের আইকন যেভাবে একনায়ক
ড: পট্টনায়ক যুক্তি দিচ্ছেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি সরকারের বিরুদ্ধে যে তীব্র আন্দোলন হয়েছে তার একটা স্পষ্ট মাত্রা ছিল ভারত বিরোধিতা।
ভারতকে যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে দেখা হতো, তাই হাসিনা বিরোধিতার আন্দোলনে স্বভাবতই মিশে ছিল ভারত-বিরোধিতার উপাদান।
‘এই পটভূমিতে ভারত যদি তাকে এখন রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, সেটা একটা ভুল বার্তা দেবে এবং বাংলাদেশের ভেতরে ভারত বিরোধিতাকে আরো উসকে দেবে’, জানাচ্ছেন স্ম্রুতি পট্টনায়ক।
ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত আবার যুক্তি দিচ্ছেন, ১৯৭৫-এ যে পটভূমিতে শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী সরকার ভারতে আশ্রয় দিয়েছিল তার চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।
আরও পড়ুন: সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা
‘তখন যেটা সম্ভব ছিল, এখন সেটা সম্ভব নয়। সে সময়কার মতো শেখ হাসিনাকে তো আর পান্ডারা রোডের একটা ফ্ল্যাটে কার্যত কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই রাখা যাবে না, এখন সম্পূর্ণ অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।’
‘আর শেখ হাসিনা তসলিমা নাসরিনও নন যে দিল্লি পুলিশের পাহারায় শহরের কোনো ফ্ল্যাটে তাকে রাখা যাবে। আর এই সিদ্ধান্তের ‘জিওপলিটিক্যাল রিস্ক’-টাও অনেক বেশি, সেটাও মাথায় রাখতে হবে’, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
এই পর্যবেক্ষকরা দীর্ঘমেয়াদে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি দিলেও সম্পূর্ণ অন্য কথা বলেছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
‘তিনি যদি কোনো কারণে ভারতে থাকতে চান, তার মর্যাদা ও সম্মান অনুযায়ী যথাযথ পর্যায়ে (অ্যাপ্রোপ্রিয়েট লেভেল) তার সাথে আমাদের এনগেজ করতে হবে। এখানে দ্বিতীয় কোনো ভাবনার অবকাশ নেই’, বলছেন মি শ্রিংলা।
আরও পড়ুন: দেশ ছাড়ার আগে ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা, পাননি সুযোগ
সোজা কথায়, পুরনো ইতিহাস ও এতদিনের সম্পর্ককে মাথায় রেখে তার ইচ্ছাকে ভারতের সম্মান দিতে হবে- এটাই তার যুক্তি।
ভারতে শাসক দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ ও পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ শুভ্রকমল দত্ত আবার মনে করেন, এখনই স্থায়ীভাবে না-হলেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
‘যতদিন না তৃতীয় কোনো দেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে তিনি আশ্রয়ের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত ভারতের উচিত হবে তাকে সসম্মানে ভারতেই রাখা’, বিবিসিকে বলছিলেন ড: দত্ত।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে ভারতের কী করণীয়?
বাংলাদেশে বিশেষ করে গত ৪৮ ঘণ্টায় যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যে ধরনের অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বা সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর আসছে- তাতে ভারতের এখন ঠিক কী করা উচিত তা নিয়েও দেশের ভেতরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে কোথায় যাবেন শেখ হাসিনা?
বিশেষ করে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠরা প্রাধান্য পেতে পারেন, এই ধরনের ইঙ্গিতও দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি করেছে।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মনে করেন, ‘বাংলাদেশে ভারত একটি শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও স্থিতিশীল সরকার চায়, এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। আর কোনো দেশই চায় না তার ঘরের দোরগোড়ায় একটি শত্রুভাবাপূর্ণ সরকার থাকুক।’
সুতরাং বাংলাদেশে পরবর্তী সরকার যাতে ভারতের প্রতি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ থাকে, তার জন্য যা যা করা উচিত সেটা করা দরকার বলেই মনে করেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুরও বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর যে ভারত-বিরোধিতার ইতিহাস, তাতে নতুন সরকারে তাদের প্রভাব কতটা হবে সে ব্যাপারে ভারতকে আগেভাগেই সতর্ক থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন: রাজনীতিতে আর ফিরবেন না শেখ হাসিনা: জয়
এমন কী, ওই সরকারের ওপর চীন বা পাকিস্তানের মতো শক্তিগুলো কলকাঠি নাড়াতে চাইবে বলেও মনে করেন শশী থারুর। কিন্তু জামায়াতের এই ‘প্রভাব’ ঠেকানোর জন্য ভারত ঠিক কী করতে পারে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট দিশা দেখাতে পারেননি তারা কেউই।
শ্রীরাধা দত্ত অবশ্য বলছিলেন, ‘আমার মতে প্রথমে কমিউনিকেশনের চ্যানেলগুলো খুলতে হবে। ওপেন আপ করতে হবে।’
‘বাংলাদেশে কারা এই মুহূর্তে শেষ কথা বলছেন বা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেটা আমরা জানি না। তাদের ভালো করে চিনিও না। আমরা যদি তাদের সাথে একটা সুস্থ ও স্বাভাবিক ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ চাই, তাহলে সবার আগে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে’, জানাচ্ছেন তিনি।
এদিকে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির ভেতর থেকেই কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি ‘সফট ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাপ্রোচে’র বদলে ‘কঠোর দৃষ্টিভঙ্গী’ নেয়ার দাবি উঠছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রের আইকন যেভাবে একনায়ক
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারী যেমন প্রকাশ্যেই বলেছেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের ওপর এখনই চাপ প্রয়োগ করা দরকার- নইলে সে দেশ থেকে কমপক্ষে এক কোটি হিন্দু পালিয়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হবেন।
শুভ্রকমল দত্তও বলছেন,’একাত্তরের যুদ্ধও কিন্তু শুরু হয়েছিল শরণার্থী সমস্যা দিয়ে। আমি মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কটে ভারতের অনেক আগেই সরাসরি হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল, তখন সেটা না হলেও এখন কিন্তু করতেই হবে।’
‘হস্তক্ষেপ’ মানে অবশ্য কেউ বাংলাদেশে সেনা পাঠানোর কথা বলছেন না, তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক যত ধরনের চাপ প্রয়োগ সম্ভব- সে দিকেই ইঙ্গিত করছেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কিমশনার ভিনা সিক্রি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের জ্বালানি, অবকাঠামো থেকে শুরু করে অজস্র সেক্টরে ভারত শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে, এটা ভুললে চলবে না।’
আরও পড়ুন: দিল্লিতে শেখ হাসিনা, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া নিয়ে যে জটিলতা
সেই বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটা ‘স্টেবল নেবারহুড’ বা স্থিতিশীল প্রতিবেশ চাই – আর তার জন্য যা করা দরকার, ভারতকে তা করতে হবে বলেও যুক্তি দিচ্ছেন তিনি।
ভারত এখন ঠিক কী করছে?
মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
প্রথমত, তার আগের গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ‘কর্তৃপক্ষে’র সাথে ভারত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তবে এই কর্তৃপক্ষ বলতে সেনাবাহিনী না কি প্রশাসনিক বিভাগ, সেটা তিনি কিছু ভেঙে বলেননি।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, দোকানপাট বা ব্যবসা এবং মন্দিরে হামলার বহু ঘটনা ঘটেছে বলে খবর আসছে। এই পরিস্থিতির ওপর ভারত সতর্ক নজর রাখছে।
আরও পড়ুন: শিগগিরই প্যারিস থেকে দেশে ফিরছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংগঠন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছে ও নানা পদক্ষেপও নিয়েছে, ভারত তা স্বাগত জানায়। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যত উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ভারত অবশ্যই এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকবে। সীমান্তে বিএসএফকেও অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তৃতীয়ত, ভারত মনে করছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে (‘ইভলভিং’)। ইতোমধ্যে সে দেশে থাকা প্রায় ১৯ হাজার ভারতীয় নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। তবে এই ১৯ হাজারের মধ্যে প্রায় নয় হাজারই ছাত্রছাত্রী, যাদের অধিকাংশই গত মাসেই ভারতে ফিরে এসেছেন।
জয়শঙ্করের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভারত সরকার বাংলাদেশের বর্তমান ‘নীতি-নির্ধারক’দের সাথে একটা যোগাযোগের চ্যানেল স্থাপন করে ফেলেছেন, দু’পক্ষের মধ্যে কথাবার্তাও হচ্ছে।
তবে ভারতেই বহু পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক মনে করেন, এটুকুই হয়তো যথেষ্ঠ নয়- নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে হলে ভারতকে আরো অতি-সক্রিয় (প্রোঅ্যাক্টিভ) ও দরকারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
এর আগে সকালের সর্বদলীয় বৈঠকেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনাকে তার ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ স্থির করার জন্য ভারত সময় দিতে চায়।
আরও পড়ুন: কী হয়েছিল শেষ মুহূর্তে, যে পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা
বৈঠকে উপস্থিত একজন বিরোধী দলীয় এমপি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ভারত ছাড়ার জন্য কোনো তাড়া দেয়ার প্রশ্ন নেই, বরং তিনি যতদিন খুশি থাকতে পারেন- এটাই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন।’
এদিকে আজ বুধবার ভারতের ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিওরিটি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আবারো বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় বসবে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। দেড় দিনের মধ্যে সেটা হবে কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক।
কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের সার্বিক ভূমিকা থেকে এটা স্পষ্ট- তাদের কাছে সম্পূর্ণ অভাবিত ও অপ্রত্যাশিত এই সঙ্কটকে ঠিক কিভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই পরিকল্পনা বা ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ দিল্লি এখনো চূড়ান্ত করে ফেলতে পারেনি।