অদৃশ্য ‘জিন সাপের’ কামড়ে হাসপাতালে ভর্তি ১২ নারী

অদৃশ্য ‘জিন সাপের’ কামড়ে হাসপাতালে ভর্তি ১২ নারী
অদৃশ্য ‘জিন সাপের’ কামড়ে হাসপাতালে ভর্তি ১২ নারী  © সংগৃহীত

যশোরের চৌগাছার পাশাপোল ইউনিয়নের রানিয়ালি গ্রামে অদৃশ্য ‘জিন সাপের’ কামড়ে অসুস্থ হয়ে ১২ জন নারী যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সোমবার বেলা ১২টার দিকে তারা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন।

কয়েকদিনের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ কথিত জিন সাপের কামড় খেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, অসুস্থ সবাই আতংকে ‘ম্যাস হিস্টিরিয়া ইনসেক্ট বাইট’ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১ জুলাই ওই গ্রামের এক নারীকে রাতে ঘুমের মধ্যে সাপে কামড় দেয়। সে সময় বাড়ির লোকজন তাকে প্রথমে পার্শ্ববর্তী কালিয়াকুন্ডি গ্রামের রনৌক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। তার অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন সকালে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় কবিরাজের ওপর উত্তেজিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। এ সময় কবিরাজ জানান, রাবেয়াকে জিন সাপে দংশন করেছে। যে কারণে চিকিৎসা দেওয়ার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। এরপর গ্রামে কথিত অদৃশ্য জিন সাপ আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

কথিত জিন সাপের কামড়ের চিকিৎসা নেওয়া গৌরচন্দ্র মন্ডল বলেন, আমি মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। এসময় হঠাৎই মনে হলো আমার পায়ে কিসে কামড় দিয়েছে। এরপরে আমার শরীরের মধ্যে জালা পোড়া শুরু হয়। আমি কালিয়াকুন্ডি গ্রামের কবিরাজ মুজিদ মেম্বরের কাছে যায়। হাত চালান দিয়ে দেখে আমার শরীরে বিষ রয়েছে। সেখান থেকেই চিকিৎসা নিয়ে বিষ মুক্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। এভাবে বিভিন্ন ভাবে গ্রামের মহিলারা পর্যায়ক্রমে অসুস্থ হতে থাকেন।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার আবু হায়দার মোহাম্মাদ মনরুজ্জামান বলেন, কোনো রোগীকে সাপে ছোবল দেয়নি। সবাই মানসিক আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেডিকেল ভাষায় এই রোগটাকে বলা হয় ‘ম্যাস হিস্টিরিয়া ইনসেক্ট বাইট’। এটি মূলত মানুষের নিউরো হরমোন ও মানসিক দ্বন্দ্বের কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া হিস্টিরিয়া রোগের পেছনে আরও কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে, মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা, শারীরিক অলসতা, ভয়, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, মস্তিস্কের সমন্বয়হীনতা। এই রোগে মানুষ অসুস্থ হলে, প্রথমে শরীর ঝিন-ঝিন করে, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, স্পর্শনীয় অনুভূতি বুঝতে না পারা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। অস্বাভাবিকভাবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ও বুকের ধরফরানি হতে দেখা যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কবিরাজ আব্দুল মজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো কারও চিকিৎসা দিতে যাচ্ছি না। সবাই আমার কাছে আসছে। আমিই রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিছি।


সর্বশেষ সংবাদ