দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

ইসরাত জাহান ইভা (ওপরে বায়ে), মিনহাজুল আবেদিন নান্নু (ডানে) আহসান জোবায়ের (নিচে বায়ে) ও আয়েশা সিদ্দিকা (বায়ে)
ইসরাত জাহান ইভা (ওপরে বায়ে), মিনহাজুল আবেদিন নান্নু (ডানে) আহসান জোবায়ের (নিচে বায়ে) ও আয়েশা সিদ্দিকা (বায়ে)  © সংগৃহীত

নানান অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে চলেছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। কিছু পণ্যের দাম চলে যায় অস্বাভাবিক পর্যায়ে। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। একইভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে পাওয়া স্বল্প টাকায় খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা, তা জানার চেষ্টা করেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। আর প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশুনা করতে হয়। অনেকে টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জব করে নিজের খরচ বহন করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্বল্প আয় দ্বারা চলা কষ্টকর। ফলে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা হারিয়ে ফেলছে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ।

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু হাতে-কলমে শিক্ষিত হতে গেলে প্রয়োজন বই, খাতা, কলম। যেখানে খাবার চাহিদা মেটানো কষ্টকর, সেখানে শিক্ষা উপকরণ যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু মুনাফালোভী মজুদদার অধিক মুনাফা লাভের জন্য দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। তাতেই ঘটে যত বিপত্তি। সরকারী কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধি এই সমস্যার অন্যতম কারণ।

হাতে-কলমে শিক্ষিত হতে গেলে প্রয়োজন বই, খাতা, কলম। যেখানে খাবার চাহিদা মেটানো কষ্টকর, সেখানে শিক্ষা উপকরণ যোগান দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু মুনাফালোভী মজুদদার অধিক মুনাফা লাভের জন্য দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। তাতেই ঘটে যত বিপত্তি।

দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ ভাতা পেলেও ক্ষতির শিকার হচ্ছে একটি বৃহত্তম অংশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে পরিত্রাণের জন্য মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সরকারকে অবশ্যই কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করছি।

ইসরাত জাহান ইভা 
ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
গণ বিশ্ববিদ্যালয় 


রুখতে হবে মধ্যসত্বভোগী, আড়াতদ্বার ও দুষ্টচক্রদের

মেস চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের আয় বাড়েনি। বাড়েনি পরিবার থেকে টাকা আনার পরিমাণ। আগে প্রতি সপ্তাহে ন্যুনতম তিন দিন আমিষ খাবারের যোগান দিলেও এখন তা ঠেকেছে দুই বা এক বেলায়। খাবারের পরিমাণও কমে এসেছে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম। ব্যাচেলর বাসায় গৃহকর্মীর বেতনও বেড়েছে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা।

মেসে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি এই টাকার যোগান দেয়া কিছু ক্ষেত্রে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মেসের খরচ চালাতে না পেরে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। দেশের একদিকে কৃষক তার সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মাঝে নেই। এতে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী একদল মানুষ। নিয়মিত বাজার মনিটরিং নেই। মধ্যস্বত্বভোগী, আড়তদার ও দুষ্টচক্র দালালদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারলে মানুষ শান্তি পাবে।

আহসান জোবায়ের
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

আগে প্রতি সপ্তাহে ন্যুনতম তিন দিন আমিষ খাবারের যোগান দিলেও এখন তা ঠেকেছে দুই বা এক বেলায়। খাবারের পরিমাণও কমে এসেছে।

যানবাহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

বর্তমান দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। যে অনুপাতে সব কিছুর দাম বেড়ছে, তাতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ছি। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের সকল মৌলিক চাহিদার ওপর। খাদ্যদ্রব্যসহ মুদি দোকানের নিত্য ব্যবহার্য সব সামগ্রীর দাম গুনিতক হারে বেড়েছে, কাচা বাজারের প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সাধারণ নাগরিকদের জীবন আজ বিধ্বস্ত। আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, প্রতি সেমিস্টারের নতুন বইগুলো কিনতে পারছি না। কিন্তু পড়াশোনা তো করতে হবে সেক্ষেত্রে পিডিএফ পড়তে হচ্ছে।

এতে করে আমরা আমাদের চোখের সুস্থ্যতা নিয়ে চিন্তিত। এছাড়াও আমার পক্ষে মাসে একবার ভালো খাবার খাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য চাহিদা কোনোমতে পূরণ করাই যেখানে কষ্টকর, সেখানে বস্ত্রের চাহিদা বিলাসিতা। সুতরাং আমরা আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি।

মাসে একবার ভালো খাবার খাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য চাহিদা কোনোমতে পূরণ করাই যেখানে কষ্টকর, সেখানে বস্ত্রের চাহিদা বিলাসিতা।

এদিকে যে কৃষক ফসল উৎপাদন করছেন, তিনি নায্যমূল্যের অভাবে ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারছেন না। অন্যদিকে ঠিকই দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি। পথেঘাটে চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য আর সরকারের উদাসীনতা এ জন্য দায়ী। প্রশাসনের সঠিক তদারকি নেই। বাজার চলে গেছে একচেটিয়া ব্যবসায়ীর হাতে। এ অবস্থা প্রতিরোধে দরকার কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

মিনহাজুল আবেদিন নান্নু
ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বেগম রোকেয় বিশ্ববিদ্যালয়

বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

বিগত কয়েক বছরে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণের মত অন্যান্য সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। মাছ-মাংস কিংবা ডিম যেন বিলাসবহুল খাদ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। এমন সংকটময় মুহূর্তে যেখানে মধ্যবিত্তদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে নিম্নবিত্তদের অবস্থা চিন্তাও করা যায় না। এর পেছনে মূলত দায়ী সিন্ডিকেট।

চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণের মত অন্যান্য সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। মাছ-মাংস কিংবা ডিম যেন বিলাসবহুল খাদ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি।

কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েই চলেছে। বিশেষ করে যখন রোজা আসে বা বিশেষ কোন উপলক্ষ আসে, তাকে কেন্দ্র করে দাম বৃদ্ধির এক উৎসব রচিত হয়। এতে সাধারণ মানুষ কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয় তা বলার মতো না। তাই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে এখনই শক্ত হাতে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা রাষ্ট্রের জন্য ব্যাধিতে পরিণত হবে, যা রাষ্ট্রকে যুগের পর যুগ ধরে ভোগাবে।

আয়েশা সিদ্দিকা
দর্শন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence