‘কয়েকটি শীর্ষ কোম্পানি দেশের জরুরী পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদে বিতার্কিক, বিচারক এবং অতিথিরা
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ছায়া সংসদে বিতার্কিক, বিচারক এবং অতিথিরা  © টিডিসি ফটো

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এ. এইচ.এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোজ্য-তেল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য ৪-৫ টি বড় কর্পোরেট কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি জানান, তারা যাতে অন্যায্যভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে নজরদারি রয়েছে সরকারের। 

শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে বিজয়ী দলকে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন এ. এইচ.এম সফিকুজ্জামান

দেশের বড় কোম্পানিগুলোর আধিপত্যের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যেসব কর্পোরেট কোম্পানি অতি-মুনাফার জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে, আমাদের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাদের তালিকা করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পণ্য মজুদসহ অন্যায়ভাবে দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার কারণে কমিশনে বর্তমানে ৫৩টি মামলা চলমান রয়েছে। 

আমাদের দেশে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা হলেও ভারত, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশি দেশে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩’শ টাকা কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য ভোক্তাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণও দায়ী। তিনি বলেন, আমাদের বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না; কিন্তু ভোক্তাকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য মধ্য-স্বত্বভোগী ছাড়াও পরিবহণ ভাড়া ও রাস্তায় পদে পদে চাঁদাবাজিও দায়ী। এসবের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ অপর্যাপ্ত—মনে করেন তিনি। 

দেশে গণমাধ্যম সবসময় অনিয়মের বিপক্ষে সরব ভূমিকা পালন করে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে মজুদদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে মজুদদার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে; তা পাশ হলে এখাতে আরও সুশাসন এবং স্বচ্ছতা আসবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে; একইসাথে ভোক্তাদের প্রতি তার পরামর্শ আরও বেশি সচেতন হওয়ার।

দেশের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পেছনে বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনেকাংশে দায়ী জানিয়ে সফিকুজ্জামান জানান, ২০১৯ এর মতো স্থিতিশীল সময়ে ফিরতে আমাদের আরও অনেক সময় লাগবে; তবে, তাতে ফেরা সম্ভব কিনা-তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তার। আমাদের আমদানি নির্ভরতা রয়েছে এবং এর জন্য বাধ্য হয়েই আমদানি করতে হচ্ছে; কারণ আমাদের সম্পদ এবং উৎপাদন কম। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সার আমদানি এবং ভর্তুকি দিয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে সরকার চাইলেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না; সরকার শুধুমাত্র ২৩ টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে।

বিচারক এবং অতিথিদের সাথে রানার্স-আপ দলের সদস্যরা

‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এতে বেসরকারি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং স্টেট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি বিতর্ক দল বিজয়ী হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সুশাসনের অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতারও এর জন্য দায়ী। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। মধ্য-স্বত্বভোগীরা সবসময়ই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনগণকে প্রতারিত করে থাকে। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী শিল্প-মালিকরাও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে সুকৌশলে তেল, চিনি, ডিম, মুরগির দাম বড়িয়ে দেয়। তা প্রতিরোধে আরো শক্তিশালী বাজার মনিটরিং টিম গঠন ও বাস্তবায়ন করা জরুরী; যে মনিটরিং টিম শুধু জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। 

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে বাজার মনিটরিং টিম মাথানত করলে এর সুফল থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে। সম্প্রতি ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, ধান, চালসহ ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির সাথে জড়িত মূল হোতা কাউকেই তেমন কোন শাস্তির আওতায় আনতে দেখা যায়নি। দৃশ্যমানভাবে প্রভাবশালী এইসব বাজার সিন্ডিকেটকারীদের শাস্তি দেওয়া না গেলে অন্যান্যরা প্রশ্রয় পেতে থাকবে; অনিয়ম করতে ভয় পাবেনা—যুক্ত করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

অনুষ্ঠানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাজার তদারকি, নিয়ন্ত্রণ, এলাকাভিত্তিক বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন এবং চলমান প্রেক্ষাপটে ১ কোটি পরিবারকে রেশন কার্ড প্রদানসহ ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের বিজনেস এডিটর উম্মান নাহার আজমী, একাত্তর টিভির বিজনেস প্রোগ্রাম উপস্থাপক সাংবাদিক জুলিয়া আলম, দৈনিক প্রথম আলোর অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আরিফুর রহমান, ড. এস এম মোর্শেদ, অধ্যাপক ড. শাহ আলম চৌধুরী প্রমুখ। 

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে জন-বান্ধব কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য এদিন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামানকে অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence