রমজানে সুস্থ থাকতে পুষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নির্দেশনা

রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। আগামী শুক্রবার (২৪ মার্চ) বাংলাদেশে প্রথম রোজা। আর তারাবিহর নামাজ শুরু হবে বৃহস্পতিবার। রমজান মাসে রোজা রাখাই ইবাদত, কারণ তা আল্লাহর হুকুম। রোজা রাখার জন্য এ মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে। সেই নিয়মের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

এই সময়ে নিয়মিত জীবনযাপনে আসে পরিবর্তন। সিয়াম সাধনার এই মাসে সুস্থ থাকতে বেশকিছু করণীয় ও বর্জনীয় ঠিক করে দিয়েছে পুষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ফলিত পুষ্টির আলোকে সেহরি, ইফতার এবং এর মধ্যবর্তী সময়ে অনুসরণীয় বিষয়গুলো জনসচেতনতার জন্য তুলে ধরা হলো—

সেহরিতে করণীয়
* সেহরিতে সামর্থ্য অনুযায়ী আশজাতীয় খাবার গ্রহন করা প্রয়োজন (লাল চাল, লাল আটা, শাকসবজি, বিচিজাতীয় শস্য- সিমের বিচি, মটরটি প্রভৃতি)। আশজাতীয় খাবার ধীরে হজম হয়, ফলে ক্ষুধা অনুভব কম হয় এবং পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়। 
* সেহরিতে বেশি খাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে শাকসবজি এবং মাছ-মাংস ও অন্যান্য তরকারি গ্রহণ করা উচিত হবে। 

* প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা পূরণে ও দেহের ক্ষয়পূরণে ছোট-বড় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

* রোজায় পানিশূন্যতা রোধে সহজে হজম হয়—এমন শাকসবজি যেমন লাউ, ঝিঙে, পটোল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া প্রভৃতিকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। 

* সেহরিতে খাবারের পর টক বা মিষ্টিজাতীয় ফল রাখা ভালো।

ৰজনীয়
*  সেহরিতে চা এবং কফি পান না করাই ভালো। এগুলোতে থাকা ক্যাফেইন তৃষ্ণার সৃষ্টি করে, এসিডিটি উৎপন্ন করে এবং খাদ্যের পুষ্টি পরিশোষণে বাধা দেয়। 
* সেহরিতে অতিরিক্ত তেল, মসলা ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।
* তেহারি, খিচুড়ি, বিরিয়ানি প্রভৃতি সেহরিতে না যাওয়াই ভালো। এসব খাবার হজম করতে দেহে প্রচুর পানি পরিশোষিত হয়,যা রোজাদারকে তৃষ্ণার্ত করবে।

ইফতার করণীয়
* ইফতারে পানীয় হিসেবে ঘরে তৈরি তাজা ফলের শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল প্রভৃতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের পানি ও লবণের (ইলেক্ট্রোলাইট) ভারসাম্য রক্ষা করতে ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করবে।

* এ ছাড়াও যেকোনো মিষ্টি ফল যেমন খেজুর, তরমুজ, কলা প্রভৃতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যা দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করবে।

* পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয় এমন খাবার ইফতারে রাখা যেতে পারে (সিদ্ধ  ছোলা, দই-চিড়া, সবজি খিচুড়ি বিভিন্ন ধরণের বাদাম এবং শসা টমেটোর মিশ্রিত সালান প্রভৃতি)

* ইফতারে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য ডিম বা ডিমের তৈরি খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। 

* ইফতারে খাবার খেতে হবে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে, যা খাবার সহজে হজমে সহায়ক হবে।

বর্জনীয়
* অধিক মসলা এবং কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চললে ইফতার-পরবর্তী বদহজম, অন্তস্তি ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

*  ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা, পোড়া বা গ্রিল করা খাবার যেমন মাংসের ফ্রাই, গ্রিল বা শিক কাবাব ইত্যাদি পরিহার করা প্রয়োজন। এসব খাবারে তৈরি হওয়া ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। 

* অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় যেমন: চিপস, জিলাপি, কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস, শিঙাড়া, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কেক-পেস্ট্রি, শিক্ষা- বার্গারসহ যাবতীয় জাংক ফুড এড়িয়ে চলা ভালো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ লক্ষ মানুষ হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।

ইফতার ও সেহরি মধ্যবর্তী সময়ে করণীয়
* দেহের পানির চাহিদা পূরণে ইফতার এবং সেহরির মাঝের সময়ে ২.৫-৩ লিটার বা ৬ থেকে ১৪ গ্লাস নিরাপদ পানি পান করতে হবে। রোজায় পর্যাপ্ত পানি পান করলে মাথাব্যথা, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য নিরাময়েও সহায়ক হবে।

বর্জনীয়
* রাতের খাবার গ্রহণের পরে সাথে সাথে ঘুমাতে যাওয়া পরিহার করতে হবে। 
* সেহরি পর্যন্ত রাত জেগে থাকা পরিহার করুন, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।

অসুস্থতার কারণে অনেকেই হয়তো রোজা রাখতে পারেন না ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। আবার অনেকে আছেন যারা হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, পেপটিক আলসার কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে। এ ধরনের ব্যক্তিদের অনেকেই ইচ্ছা থাকার পরও রোজা রাখতে পারছেন না সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যেসব রোগ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে ক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব। চিকিৎসকদের মতে, এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চাইলেই রোজা রাখতে পারেন। বিভিন্ন রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো পরিবর্তন করে নিলেই রোজা রাখার পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় সম্ভব।

The Daily Campus এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন