খাতা-কলম-বইয়ের দামে দিশেহারা শিক্ষার্থীরা, ফটোকপিতেও বিপদ

শিক্ষা উপকরণ ও ফটোকপির খরচ বেড়েছে
শিক্ষা উপকরণ ও ফটোকপির খরচ বেড়েছে  © প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া (ছদ্মনাম)। ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি থিসিসের কাজেও ব্যস্ত তিনি। এ জন্য বিপুল সংখ্যক ফরম ফটোকপি করতে হচ্ছে তার। তবে ফটোকপির খরচ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস ওঠার যোগাড়। বিভিন্ন ধাপে কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। অথচ একই পরিমাণ ফটোকপি এক বছর আগেও অর্ধেক টাকায় করা গেছে বলে জানান তিনি।

শুধু সুমাইয়ায় নন, শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ায় শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ বিপদে পড়ে গেছেন। তাঁদের পড়াশোনার খরচ বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। এর সঙ্গে থাকা ও খাওয়ার বাড়তি খরচে নাভিশ্বাস ওঠার যোগাড় তাদের। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা বেশি বিপদে আছেন। প্রতি মাসের খরচ সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীর।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশেরই মূল বই কেনার সামর্থ্য নেই। এ কারণে ফটোকপি করা তুলনামূলক কম দামের বই কিনে নেন অনেকে। কেউ কেউ আবার নোট ফটোকপি করে নেন। তবে এ ফটোকপির খরচই এখন লাগামহীন। আগে সেব ফটোকপি প্রতি পেজ দেড় টাকা থেকে এক টাকা ৭৫ পয়সা ছিল, সেই খরচ বেড়ে হয়ে গেছে আড়াই থেকে তিন টাকা। ফলে ফটোকপি বইয়ের দামও বেড়ে গেছে অনেক।

শুধু তাই নয়, খাতা-কলম থেকে শুরু করে অতি প্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রীর দাম বেড়েছে দ্বিগুন পর্যন্ত। আগের ১৫ থেকে ২০ টাকার পাতলা খাতাগুলো এখন ৪০ থেকে ৫০ বা তারও বেশি দামে বিক্রি  হচ্ছে। এ ছাড়া  বেশি পেজের খাতার দামও বেড়েছে ৪০-৫০ শতাংশ বা তারও বেশি। আগে ৫ থেকে ১০টাকায় যেসব কলম বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর দাম এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাদা কাগজের রিমের দাম বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি।

আরো পড়ুন: ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম ধাপের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আজ

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আহমাদুল হক বলেন, সব সময় সাদা কাগজে লিখেছি। কিন্তু প্রতি রিমে ১০০ টাকা বেড়েছে। খরচ পোষাতে প্রথমবারের মতো নিউজপ্রিন্ট কাগজ কিনেছি। এখন থেকে এটাতেই লিখতে হবে। গণিত অনুশীলনের জন্য বেশি কাগজ লাগে। শিক্ষা উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি তাঁর।

বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, খাতার দাম ৫-৭ টাকা করে বেড়ে গেছে। আগে তো যেভাবে লিখতাম, সেভাবে না লিখে এখন খাতা বাঁচায় অল্প জায়গায় লেখা শেষ করার চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের অনেকগুলো খাতা লাগে। আবার ক্লাসের কাজ, বাড়ির কাজ, বাসায় প্র্যাকটিস করতেও খাতা-কলম লাগে। এখন তো বুঝে চলা ছাড়া উপায় নেই।

অন্তত তিনজন দোকানি জানিয়েছেন, ফটোকপি করার কাগজের দাম বেড়েছে। সে কারণে এখন প্রতি পেজ তিন টাকা করে না রাখলে তাদের সামান্য লাভ থাকে। অবশ্য বেশি পরিমাণে ফটোকপি করলে অনেকে আড়াই টাকা করেও রাখছেন। আর অন্য সামগ্রীর দাম বাড়ার পেছনে কোম্পানিগুলোকে দায়ী করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল্লাহ বলেন, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে যেকোনো কিছুর খরচ বাড়লে সেটা আমাদের চাপ বাড়ায়। বর্তমানে বই, খাতা, কলম, পেন্সিল সবকিছুর দামই বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি আমাদের বাবাদের বেতন। ফলে অতিরিক্ত খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আমাদের পরিবার। এখানে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান পড়াশোনা করে, অনেকে তাদের টিউশনির টাকা ও বৃত্তির টাকায় চলে। তাদের জন্য এটা একটি বোঝা।

আরো পড়ুন: কুবির বিতর্কিত সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত

আরবি বিভাগের ছাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত শিক্ষাখাতে ভর্তুকি দেয়া। কারণ অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গ্রামের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের কাছে ৫ টাকার অনেক মূল্য অনেক বেশি। অবিলম্বে সকল শিক্ষা উপকরণের দাম কমাতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, দেশ একটি অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে বই যথাসময়ে ছাপা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। এরমধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘা শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি। শিক্ষাকে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ ভাবলে হবে না। এ খাতে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীদের খরচ বাড়লে তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সরকারের আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence