মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ শিক্ষিকার, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

জাহিদা পারভীন
জাহিদা পারভীন  © সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কাবাডি খেলার জন্য মেয়েরা ফ্রেন্স বেণি করে চুল বাঁধায় প্রধান শিক্ষিকা তাদের মারধর ও বকাঝকা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে ওই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন নিজের চুল ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং স্কুল থেকে পদত্যাগও করেছেন। এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শুক্রবার এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৯তম জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ১২ জন ছাত্রী নিয়ে গঠিত কাবাডি দলকে মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন জাহিদা পারভীন। বেণি করে চুল বাঁধায় গত ৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি এলাকার ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া তাদেরকে মাঠে খেলতে নামার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদে নিজের মাথা ন্যাড়া করে ছবি তুলে বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকা।

তিনি ছবির ক্যাপশনে লেখেন, স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধে আমার স্কুলের হেড মাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?

জানতে চাইলে জাহিদা পারভীন বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর কাবাডি দলের মেয়েদের মারধর করা হয়। তাদের অপরাধ ছিল চুলে ফ্রেঞ্চ বেণি করা। তা ছাড়া পরদিন কাবাডি খেলায়ও অংশ নিতে পারেনি মেয়েরা।

জাহিদা পারভীন বলেন, ‘আমাদের সাড়ে নয়টায় উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়েদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া হয় আটটা থেকে। পরীক্ষার হল থেকে মেয়েরা নয়টায় বের হতে চাইলেও তাদের অন্য শিক্ষকেরা বের হতে দেননি। ১০টার পর খাস্তগীর স্কুলে পৌঁছে জানতে পারি প্রতিপক্ষ দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’

এ জন্য থানা পর্যায়ের ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষপাতেরও অভিযোগ আনেন জাহিদা। এ নিয়ে সেখানে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হয় বলেও জানান তিনি।

তবে তাঁর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রেঞ্চ বেণি করার জন্য ছাত্রীদের কাউকে মারধর করা হয়নি। কাবাডি খেলতে যাওয়ার আগে স্কুলের কাবাডি দলের সঙ্গে হাসিমুখে ছবিও তুলেছি। কিন্তু খাস্তগীর স্কুলে দেরি করে যাওয়ায় খেলায় অংশ নিতে পারেনি। এ জন্য তাঁর (জাহিদা) মন খারাপ ছিল।’

এদিকে ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। তিনি জানান, তাদের দ্রুত সময়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় যেই দোষী হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ