লালমাটিয়ায় সবুজ ক্যাম্পাসের দিনগুলো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস  © সংগৃহীত

একটা কাক ডাকা ভোর। চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরপুর। মসজিদ থেকে ভেসে আসে সুমধুর কণ্ঠস্বর। মুয়াজ্জিনের ডাকে সাড়া দিয়ে কিছু মুসল্লি চললো মসজিদের দিকে। একটু পরেই চোখ মেলে গগন আলোকিত করবে সূর্যি মামা। সকালটা উপভোগ করতে কেউ কেউ ছুটে চলছে ওই লাল পাহাড়ের দিকে। শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় মাঠের দিকে ছুটে চলে তরুণ-তরুণীর দল। দলবদ্ধভাবে তারা শরীর চর্চা করে চলে।

ততক্ষণে নীল তরুনীদের চালকেরা ব্যস্ততার টানে ক্যাম্পাসে পৌঁছতে থাকে। বাসগুলো নিয়ে যেতে হবে শহরের নানা প্রান্তরে। সময় যখন ঠিক ৭টা ১৫ মিনিট, কাঁঠালতলা থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাসগুলো ছেড়ে চলতে শুরু করে।

এদিকে সাঁঝ সকালেই সালমানপুর, কোটবাড়ি কিংবা শহরের মেসের শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের খাদ্য-রসদ জোগাড়ের হুড়োহুড়ি। কেউ ছুটে চলল বাজারের উদ্দেশ্যে। তবে হল বাসিন্দাদের কথা একটু ভিন্নতর। তাদের তখনও মাত্র সকাল এল বলে। এদিকে ঘুমকাতুর চোখে কেউবা সকাল দশটার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবার শেষ প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে।

আবার শহুরে বাসিন্দারা এর মাঝে সকাল আটটার বাস ধরতে তাড়া অনুভব করছে। নির্দিষ্ট স্টপেজে গিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করে, কেউবা বাস চলে গেল বলে মুখে পুরানো রুটির কামড়টুকু শেষ না করেই চলে আসে। এক এক করে ৮টায়, ১০টায় হিসাব করে বাসগুলো আসতে থাকে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে।

শিক্ষার্থীরা কেউ চলে ক্লাসের দিকে শিক্ষাগুরুর লেকচার শুনতে। কেউ ছুটে গেল লাইব্রেরিতে, দুপুর দুইটায় মিডটার্মের প্রস্তুতি নিতে। এদিকে চায়ের আড্ডায় ব্যস্ত থাকে ভিসির টং, মামা হোটেল, শহীদ মিনার থেকে মুক্তমঞ্চ, সানসেট ভেলী, কিংবা বাবুই চত্বরে।

আরেকদল শিক্ষার্থী ব্যস্ত তাদের এসাইমেন্ট কিংবা ফিল্ডওয়ার্ক জমা দিতে। ঠিক তখনি চোখে পড়তে পারে লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে রঙ্গিন শাড়ি পরা মেয়েরা স্যুটকোট পর়া ছেলেদের সাথে ক্লাসে যাচ্ছে প্রেজেন্টেশন দিতে। মিডটার্ম আর সেমিস্টার মাথায় নিয়ে কেউ ছুটছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দীর্ঘ বিরতিতে কেউ আড্ডার আসর মাতিয়ে যায়, আবার কারও সময় কাটে পরবর্তী বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়ে।

উদ্যোক্তা সংগঠনগুলো প্রায়ই হরেক রকমের কারুশিল্প, হস্তশিল্প, নারী অঙ্গের নানান সাজ কিংবা রঙিন পোষাকের হাট বসাত। আবার প্রশাসনের কোন সিদ্ধান্তে যখন প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের মতের অমিল হত অথবা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত নিত তখনি প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিতে ভুলবেন না তারা। মানববন্ধনের দেখা মিলতে পারে দীর্ঘ সারিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের ঝাঁঝালো বক্তব্যে।

বিকেল গড়ালে আবার সেই প্রতিবাদীদের দেখা যেতে পারে নীরব রাস্তায়, প্রেমিকার হাতে হাত রেখে এক ঠোঙ্গা বাদাম নিয়েই কাটবে সারা বিকেল। কিংবা গিটারের টুংটাং শব্দে গলা মিলিয়ে লালন ভক্ত গেয়ে উঠবে এসব দেখি কানার হাটবাজার।

কখনও কখনও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় নাচ, গান, কৌতুকের আসর জমে মুক্তমঞ্চে। সেখানে কবিতার আবৃত্তিকারের কণ্ঠে ভাসতে পারে আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে! উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চায় ব্যস্ত থাকে ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা। আবার সবার সংবাদ আনতে ছুটে চলে ক্যাম্পাস হিরোরা। অনিয়ম ও দুর্নীতির খবরও বাদ যায় না এখানে।

তবে! আজ শুধু অনুভূতির আঁচড় কাটে প্রতিটি কুবিয়ানের সেই দিনগুলোয়। মহামারীর এই ক্রান্তিলগ্নে বহুদিনেও ফেরা হয়নি ক্যাম্পাসে। কেউ আবার বাড়িতে থাকার রেকর্ড করে ফেলছে এতদিনে। শিক্ষার্থীদের শূন্যতায় স্তব্দ করে দিয়েছে চারপাশ। আজ প্রিয় ঠিকানাও একা নির্জনে সময়ের প্রহর গুনছে। সবাই একটা চাপা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। ক্যাম্পাসে ফিরতে মরিয়া সবাই। যারা কয়েকটা দিনের জন্য ছুটি চেয়েছিল তারাও এমনটি চায়নি কোনদিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence