তারুণ্যের অনুভূতিতে বিজয় দিবস 

  © টিডিসি সম্পাদিত

‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’ বিখ্যাত গীতিকার গোবিন্দ হালদারের রচিত অমর গানটি মহান বিজয় উল্লাসের এই অনুভূতিকে আরো শিহরিত করে হৃদয়ের অবিরাম স্পন্দনে। ইতিহাসের পাতায় বাঙালি জাতির শৌর্যবীর্যের এক মহিমান্বিত বিজয়গাঁথা এই বিজয় দিবস। মহান এই গৌরবগাঁথা নিয়ে তারুণ্যের অনুভূতি তুলে ধরেছেন— বাঁধন বৈষ্ণব।


বিজয়ের মহীয়ান মহাকাব্য

১৬ ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির ইতিহাসের অবিস্মরণীয় দিন। রক্তে রঞ্জিত মাটি, স্বপ্ন ভাঙার কান্না, আর অসংখ্য বিপ্লবী আত্মত্যাগে অর্জিত এ বিজয় আত্মপরিচয়ের মহাযজ্ঞ। দীর্ঘ ২৩ বছরের শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির নয় মাসের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ এ দিনে পূর্ণতা পায়। বিজয়ের এ উজ্জ্বল প্রতীক এক ধ্রুপদী আহ্বান—অধিকার ও মর্যাদার জন্য অনন্ত সংগ্রামের। 

বাঙালির এ বিজয় কেবল ভৌগোলিক নয়; এটি একটি জাতির জাগরণ, একটি সভ্যতার নবজন্ম। এদিনে আমরা স্মরণ করি তাঁদের, যাঁরা রক্ত দিয়ে ইতিহাসের রক্তিম পৃষ্ঠা লিখেছেন। বিজয় দিবস তাই জাতীয় চেতনার শিখরে স্থাপিত এক অক্ষয় স্তম্ভ। বিজয়ের এই মহীয়ান মহাকাব্য আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষণে স্মরণ করিয়ে দেয় বাঙালির চির উন্নত শির। বিজয়ের এই অর্জনের প্রতি সম্মান রেখে আমরা যেন শান্তিপূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্রতী হয়ে ওঠতে পারি সেই প্রত্যাশা করি। 

শ্রী গৌরাঙ্গ সরকার 
শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সরকারি বাঙলা কলেজ

স্বাধীনতার স্পর্শ পেয়েছি তবে স্বাধীনতা নয়

শিশু-কিশোরের ফুলের মতো জীবনের প্রতিদান, দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধের ফল আমাদের স্বাধীনতা। শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত বাঙালি অত্যাচারের খাঁচা থেকে মুক্ত আজ। আজীবন শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই সেই মুক্তিসেনাদের। তবে স্বাধীনতাকে রক্ষা করাও একটি চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। হেনরী ওয়ার্ড বিশার বলেছেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’। আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও রক্ষা করতে পারছি কই? ১৯৭১ পরবর্তী সময় থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দৃষ্টিপাত করলে আমাদের পরাধীনতার খণ্ড চিত্র ভেসে ওঠে। 

জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন তবে বাকস্বাধীনতায় নয়, অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে মানুষ উন্নত হচ্ছে না, রাজনৈতিকভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছে আমাদের। শোষকের হার এত বেড়ে গেছে যা ৭১’র শোষককেও যেন হার মানাবে। আমরা স্বাধীনতার স্পর্শ পেয়েছি, স্বাধীনতা পায় নি। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করতে চাই। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়েও আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি না আমরা স্বাধীন। আমাদের এই শোষিতের শেকল থেকে বের হতে হবে। আমরা যেন বলতে পারি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। 

ছাবিহা জামান ইসপা 
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ। 

অসাম্প্রদায়িক চেতনার অর্জন স্বাধীনতা

নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতির ঐক্যের অর্জন এই বিজয়। শত বছরের শোষণ নিপীড়নের শেষে সর্বশেষ পাক বাহিনীর থেকে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দ্বারা বাঙালির অর্জন স্বাধীনতা। এই অর্জন মোটেই সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই নতুন রাষ্ট্রের অবস্থা ছিল নাজেহাল। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জীবন পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল দিকেই ছিল ক্ষয়ক্ষতিতে ভরপুর। সেই থেকে ধীরে ধীরে আমরা এসে পৌঁছাই আজকের উন্নয়নশীল দেশে। 

পৃথিবীর বুকে ছোট্ট একটি রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি যা বাঙালি জাতির গৌরবগাঁথা। বিজয়ের এই অর্জনের অম্লানতায় অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি ও দরিদ্রতা এই সমস্যাটি যেমন অতীতেও ছিল এখনো আছে, তাই সম্পত্তির সঠিক বন্টনের মাধ্যমে সমাধানের লক্ষ্যে ও সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন। সেই প্রত্যাশা রেখে আমরা যেন পৃথিবীর বুকে সুখী সমৃদ্ধি একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারি তারই আশাবাদী। সবশেষে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত রেখে এবং যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকেই এই দিবস তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

শামায়েল উদ্দিন মাইন, 
শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ। 

বিজয় হলো জাতির সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগ 

বাংলাদেশের ইতিহাস যুগে যুগে রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য বহন করে আসছে। বিদেশিদের শাসন শোষণের ইতিহাস বাঙালিদের বহন করতে হয়েছিল প্রাচীনকাল থেকে। এই অত্যাচারের পাতায় ইতি টেনেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে অর্জন করা বিজয়। আমরা যারা ৭১ দেখিনি হয়ত কল্পনাও করতে পারব না এই বিজয়ের যথার্থ মাহাত্ম্য। ৩০ লক্ষ প্রাণ, সেই সাথে ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশ।

আরও পড়ুন: শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মানেনি আরিফের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে

আমরা সেই বীর সন্তানের জীবনগাঁথা  আজীবন হৃদয়ে লালন করব। তবে একটা কথা না বললেই নয় এক তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে ১৯৭২ সালে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা  সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিল (৭০ হাজার) কিন্তু বর্তমানে সরকারি সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার)। একটি স্বাধীন দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যথাযথ প্রমাণস্বরূপ ঐসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোশ উন্মোচন করা, এবং প্রকৃত দেশপ্রেমী জাতির সূর্য সন্তানদের যথাযথ সম্মান প্রদান। তবেই বিজয়ের মর্যাদা আগামী প্রজন্মের চেতনায় মহীয়ান হয়ে থাকবে।

বন্যা রানী বৈষ্ণব, 
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ। 


দেশপ্রেম ও অনুপ্রেরণার গৌরবগাঁথা এই বিজয়

‘স্বাধীনতা’ কেবল একটি শব্দ নয় এটি আমাদের হৃদয়ে লালিত এক স্নিগ্ধ আবেগঘন অনুভূতি। বাঙালি জাতির শৌর্য আর দেশপ্রেমের চেতনায় একতাবদ্ধ হয়ে বহিঃশত্রু দমনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের প্রকাশ হলো ৭১ এর বিজয়। এদিনেই ধরিত্রীর এই ভূখণ্ডবাসী দেখেছিল বিজয়ের লাল সূর্য, পেয়েছিল মুক্তির অফুরন্ত স্বাদ, হেসেছিল তৃপ্তির হাসি। তারপর থেকেই দিনটি মহান বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাঙালি জাতির মহিমান্বিত এই অর্জনকে চিরস্মরণীয় রাখার সংকল্পে দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয় আসছে প্রতিবছর। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা ঘটে। 

তারুণ্য ও আগামী প্রজন্মের হৃদয়ে এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার প্রত্যয়ে স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজয় দিবসের মাহাত্ম্য জাগ্রত রাখার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন গান, গল্প, কবিতা রচিত হয় এই বিজয় দিবসকে ঘিরে যা আমাদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত রাখে। তাই বিজয়ের এই দিনটিকে অন্তরে ধারণ করে সমস্বরে গেয়ে যাই জাতীয় সঙ্গীতের একটি লাইন যা বরাবর আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

ইসরাত জাহান ইবা,
শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence