পাথরে ফুল ফুটবে কবে?
- তাহমিদ তাজওয়ার
- প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৫ PM , আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০০ PM
গোটা বিশ্বকে এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে পার হতে হচ্ছে। চারদিকে কি এক অস্থিরতা! অশান্ত! মন খারাপ করা পরিবেশ! একে তো এল নিনোর প্রভাবে এ যাবৎকালের সবচাইতে গরম এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের তীব্রতায় জনজীবন বিপর্যস্ত। তারপরও একই সাথে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব ইউরোপে চলছে যুদ্ধের দামামা। এ যেন প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে ক্ষমতাসীন, সম্পদ গ্রাসী মানুষের সবকিছুকে নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য ধ্বংসযজ্ঞ করার এক নির্মম প্রতিযোগিতা।
গাজার পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর অমানবিক নিপীড়ন এবং সামরিক আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা পাঁচ অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে অনেক আগেই। বাদ যায়নি নারী, কোলের শিশুরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ত্রাণ কার্যক্রমগুলোর দৃশ্য চোখের সামনে এলে বুঝা যায় কতটা মানবেতর জীবন পার করছে ফিলিস্তিনের মানুষ। ত্রাণবাহী কার্গো বিমান থেকে ফেলা ভারী রসদের আঘাতেই প্রাণ গেছে অনেক মানুষের। দুবেলা খাবারের জন্য মানুষের আপ্রাণ প্রচেষ্টা এবং ত্রাণের প্যাকেটগুলোর দিকে ছোট্ট শিশুদের তাকিয়ে থাকা বলে দেয় কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তারা।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলী বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ হাজার ৮৪৩ জন। আহত হয়েছে ৭৬ হাজার ৫৭৫ জন।
এছাড়াও এ বছরের জানুয়ারির ৩১ তারিখ পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের নিহত হওয়ার সংখ্যা ১০ হাজারের অধিক। যেখানে ৫৭৯ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, শিশু এবং নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের জাতিসংঘ যে মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছিল তার সাথে কর্মসূচির সফলতা আজ অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ। একসাথে মানব কল্যাণ মূলক হাজারো সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে মানবতার সর্বোচ্চ প্রসার এবং নিরাপদ পৃথিবী নিশ্চিতকরণের জন্য। অথচ যুদ্ধাবস্থায় এসব সংগঠনগুলোর কাজ যেন শুধু ত্রাণ সরবরাহ কর্মসূচির মাঝেই থেমে গিয়েছে।
মানুষের মাঝে স্বার্থপরতার অবাধ চর্চা, সর্বগ্রাসী আত্মতুষ্টিমূলক আদর্শের বীজসমেত জাত্যভিমান, সিলেক্টিভ মানবতাবাদ, চটকার পরিভাষার অপব্যবহার যখন সর্বত্র বিরাজমান হয়, তখন দেখার শক্তি থাকবার পরও তার চোখ দেখবে না, শ্রবণশক্তি থাকবার পরও সে কানে শুনবে না, প্রতিরোধ করার সক্ষমতা গায়ে থাকবার পরও পাথর হয়ে যাওয়া অন্তর প্রতিরোধ করতে উদ্বুদ্ধ করবে না। তবুও মানুষ হিসেবে মানবসুলভ কখনও কখনও ঠিকরে বেরিয়ে আসে। তা কখনও জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় নিস্তেজ করে দেওয়া চেতনার জুজুবুড়িকে। যেটি মার্কিন সেনাসদস্য বুশনেল নিজের বিবেকের কাছে দহন হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মত্যাগ করে দেখিয়ে গিয়েছে বিশ্বকে।
আত্মগ্লানিতে নিমজ্জিত সেনা সদস্যের 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' যেন পাথরে ফুটা এক ফুলের শেষ সুবাস। পাথরের মাঝে ফুল জেগে উঠলে তার স্নিগ্ধ সুবাস তো পচে যাওয়া আদর্শের উটকো গন্ধকে দূর করতে বাধ্য! বুশনেলের আত্মগ্লানি থেকে সূচিত আত্মত্যাগ মানবতার ন্যারেটিভকে নাড়া দিতে এক ফুল ফুটিয়ে গিয়েছে। আমাদের বিকিয়ে দেওয়া মগজ আর পাথর হয়ে যাওয়া অন্তরগুলোতে নির্যাতিত মানুষদের জন্য মুক্তির সুবাস ছড়িয়ে দিতে সে ফুল ফুটবে কবে?