এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে ৪৩১২ ইবতেদায়ী মাদ্রাসা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ জুন ২০১৯, ০৯:৪৯ AM , আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯, ১০:০৪ AM
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এবার বাজেটে বরাদ্দ থাকায় অন্তত তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চার হাজারের অধিক ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে অন্তত ২১ হাজার মাদ্রাসা শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেও। জানা গেছে, সে হিসেবে এবার প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্ত করা হবে সারাদেশের চার হাজার ৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। এতে এসব মাদ্রাসায় কর্মরত প্রায় সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষকের সরকারি বেতন চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। বর্তমানে এসব মাদ্রাসার শিক্ষকরা কোনো বেতন পান না। তারা সরকার থেকে তিন মাস পর পর নামমাত্র ভাতা পান। তবে এমপিওভুক্ত হলে তারা সরকারি বেতনের আওতায় আসবেন। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষকরা বৈশাখী ভাতা এবং পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্টও পেতে যাচ্ছে। এ দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন বেসরকারি শিক্ষকরা।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়। কিন্তু অভিন্ন আইনে প্রতিষ্ঠা হলেও বঞ্চিত থাকে ইবতেদায়ি (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) মাদরাসা। তারা মাত্র ৫শ’ টাকা করে মাসোহারা পেয়ে আসছেন। তবে ২০১০ সালে মাসোহারা এক হাজার টাকা করা হয়। পরে তা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়। তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে সহকারী শিক্ষকদের (মৌলভী) সম্মানী দুই হাজার ৩০০ আর প্রধান শিক্ষকদের আড়াই হাজার টাকা করা হয়।
জানা গেছে, এবার যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলার অন্তত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও এবার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা শিক্ষার জন্য পৃথক বাজেট দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা খাতের অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করে নিয়ে ব্যয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তদারকি বাড়ানোর কথা বলেছেন।
এ বছর এমপিওভুক্তি খাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তত এক হাজার ২১০ কোটি টাকা খরচ করবে। গত জুলাইয়ে এমপিওভুক্তির এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারির পর যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করতে চারটি মানদ ঠিক করে মন্ত্রণালয়। এগুলোর জন্য রাখা হয় ১০০ নম্বর। গত বছরের আগস্টে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ৯ হাজার ৬১৪টি আবেদন জমা পড়ে। সব শর্ত পূরণ করতে পেরেছে দুই হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান।
তবে বাছাইয়ে দেখা গেছে, দেশের সব এলাকা এটি কভার করতে পারেনি। অনেক উপজেলায় যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা একেবারেই কম। আবার কোনো উপজেলায় পাওয়াই যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন- প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুটি যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করতে। এতে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আবেদন করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে না। এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করতে গেলে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা লাগবে।
আসছে নতুন অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়ায় বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে জোরেশোরে। দীর্ঘ ৯ বছর পর এ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এবার অন্তত তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এমপিওভুক্তিতে কেবল যোগ্যতা নয়, বরং এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রতিটি উপজেলার অন্তত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে, দেশের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের সবিশেষ গুরুত্ব পেলেও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এ খাতের বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। তারা শিক্ষার জন্য পৃথক বাজেট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এবার ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতবারের সংশোধিত বাজেটের বেড়েছে ১৩ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ২ ভাগ অর্থ শিক্ষা খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মোট বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ এ খাতে ব্যয় করা উচিৎ। শিক্ষার বাজেট পর্যাপ্ত নয়।’ এছাড়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার বাজেট শুভঙ্করের ফাঁকি। এবারের বাজেটে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে এ খাতে। এর কারণ, এমপিওভুক্তি ও শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা চালু। এসময় শিক্ষার মান উন্নয়নের টাকা কোথায়? এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।