প্রতিদিন হাজারো মানুষ একসঙ্গে সেহরি-ইফতার করেন যে মাদ্রাসায়

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল্-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম প্রকাশ হাটহাজারী মাদ্রাসা
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল্-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম প্রকাশ হাটহাজারী মাদ্রাসা  © টিডিসি ফটো

রাত দুইটা। মসজিদে সকলে নফল ইবাদাতে ব্যস্ত। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ভ্যানে করে মসজিদের দিকে আসতে থাকে বড় ডেক নিয়ে। তার কিছুক্ষণ পর মাইকে ঘোষণা আসতে থাকে সেহরির খাবার প্রস্তুত। ঘোষণা শেষে কেউ দস্তরখানায় বসতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কেউবা সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধভাবে সেহরি সংগ্রহ করছে। এমন দৃশ্যের দেখা মেলে প্রয়াত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর কর্মস্থল চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল্-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম প্রকাশ হাটহাজারী মাদ্রাসায়। পুরো এলাকা মুসল্লী এবং ইতেকাফে থাকা রোজাদারদের অংশগ্রহণে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।

শুধু সেহরি নয় একই দৃশ্যের দেখা মিলে ইফতারেও। ইফতারের মাত্র ৪০ মিনিট বাকি। তখন মসজিদে ইতেকাফে থাকা ৮ শতাধিক রোজাদার ও সাধারণ মুসল্লীরা হুজুরের ঈমান আমল ও আত্মশুদ্ধিমূলক এবং রোজার ফজিলত সম্পর্কে বয়ান শুনতে ব্যস্ত। এর মধ্যে দায়িত্বশীলদের মধ্যে কেউ সারিবদ্ধভাবে ইফতারির প্লেট রাখছেন। আবার কেউ ইফতারি  দিয়ে প্লেট সাজাচ্ছেন। 

সরেজিমন দেখা গেছে, মাদ্রাসার বাইতুল করিম মসজিদ, পরিচালকের কার্যালয়, ছোট মসজিদ বাইতুল আতিক, শিক্ষা ভবনের তৃতীয় তলা, দারে জাদীদ ভবন, নূর মঞ্জিল, মাদানী মঞ্জিল, দারুল আমান মঞ্জিল, শফীক মঞ্জিল ও মাদ্রাসা ক্যান্টিনে একত্রে সেহরি  ও ইফতার করেন প্রায় দুই হাজার রোজাদার। পবিত্র রমজান মাসের প্রথমদিন থেকে এ আয়োজন করে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ধনী-গরীব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে সামিল হয়ে পরম তৃপ্তির সঙ্গে প্রতিদিন সেহরি ও ইফতার করেন তারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ইতেকাফে থাকা ও সাধারণ মুসল্লি। ইফতারের পর মাগরিবের সালাতের পরেও রয়েছে ভাতের ব্যবস্থা। সুশৃঙ্খল ভাবে এতে অংশ নেন হাজারো মুসল্লী। 

ইতেকাফে থাকা মুসল্লীরা জানিয়েছেন, এখানের আয়োজন অনেক সুন্দর,সব গোছানো। যে যতটুকু খেতে চায় তাকে ততটুকু দেওয়া হয়।  প্রতিদিন ইফতারে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, সেমাই, খেজুর ও ফল (আঙ্গুর,আনারস, আপেল) থাকে। মাগরিবের সালাতের পর থাকে ভাত,মাংস, সবজি। সেহরিতে ভাতের সাথে কোনদিন গরু,ছাগলের মাংস বা মাছ থাকে। 

এ প্রসঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ সেহরি ও ইফতার করেন। প্রথম দিন থেকে বিনা পয়সায় এই আয়োজন করে আসছে হাটহাজারী মাদ্রাসা কতৃপক্ষ।

এই আয়োজনে প্রতিদিন মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি হাজার হাজার টাকা খরচ করেন। এত মানুষের খাদ্যের অর্থের উৎস কোথা থেকে এবং এত বিশাল আয়োজনে সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাওয়ারের ঘাটতি আল্লাহর রহমতে হয় না। ইতেকাফ নেওয়া মুসল্লী, এখানের ছাত্র-শিক্ষকসহ বাইরে থেকে শত শত মেহমান হাসিমুখে এখানে সেহরি ও ইফতার করেন। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি, আল্লাহর বান্ধারা সওয়াবের নিয়তে রোজাদারদের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে নগদ অনুদান প্রদান করেন। এছাড়া প্রতিদিনই কেউ না কেউ মাদ্রাসায় ইফতার সামগ্রী ও ফলমূল নিয়ে আসেন। এসব ফলমূল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে সকলের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করে। 

জানা গেছে, এবছর হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রায় ৮০০ মুসল্লী ইতেকাফ নিয়েছে। হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতেকাফ নিতে মুসল্লীরা এখানে আসেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence