প্রিলিতে ফার্স্ট নয় পাস দরকার— পুলিশ ক্যাডারে ১৬তম মিজানুর 

মো. মিজানুর রহমান:
মো. মিজানুর রহমান:  © টিডিসি ফটো

মো. মিজানুর রহমান। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে ১৬তম হয়েছেন। তার জন্ম নেত্রকোনার মদন উপজেলায়। বাবা মুসলিম উদ্দিন শিক্ষক ছিলেন। মা রোকেয়া আক্তার গৃহিণী। মিজানুর ২০১২ সালে খাগুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মিজানুর। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি রিফাত হক-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জীবনের মূলমন্ত্র কী ছিল আপনার ? 
মো. মিজানুর রহমান: ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছি প্রান্তিক মানুষের সাথে মিলেমিশে চলতে। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, মানুষের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করার ইচ্ছেটাই আমার জীবনের মূলমন্ত্র। এই শিক্ষা আমার পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশবের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই আর আপনার বাবার প্রভাব কতটুকু জীবনে?
মো. মিজানুর রহমান: আমার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের খাগুরিয়া নামক চমৎকার একটি গ্রামে। যেটিকে প্রকৃতি দুহাত ভরে সাজিয়েছেন। আমি এসএসসি পর্যন্ত গ্রামেই বেড়ে ওঠেছি, গ্রামে দুরন্তপনায় কেটেছে আমার শৈশব ও কৈশোর। আমার আব্বা একজন শিক্ষক এবং কৃষক। আব্বা আমাদের তিন ভাইকে সবসময় অংক, ইংরেজি পড়াতেন। ক্লাস নাইন টেন পর্যন্ত আব্বাই আমাদের গাইড করেছেন। আমার আব্বা একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ হয়েও আমাদের তিন ভাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার পিছনে ওনার শত শত স্বার্থত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। নিজেদের সকল চাহিদা কমিয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। আব্বা আম্মার অবদান আমার কাছে অপরিমেয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো স্মৃতি আছে কী?
মো. মিজানুর রহমান: আমি আমার গ্রামের স্কুলেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছি। শিক্ষা জীবনে সবচেয়ে উপভোগ্য দিনগুলো ছিল স্কুলের দিনগুলো। চিন্তামুক্ত জীবন আর দুরন্তপনায় কেটেছে স্কুলজীবন। স্কুলের বন্ধুদের ও শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি মিস করি। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে। কলেজের শিক্ষকরা অভিভাবকসুলভ আচরণ করতেন। ওনাদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তারপর ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যেখানে এসে আমি অসাধারণ কয়েকজন বন্ধু পাই। এতসব পজিটিভ মানসিকতার মানুষের ভীড়ে আমি নিজেকে গড়ে তুলতে অনেক বেশি সহায়তা পেয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এমন কোনো অভিজ্ঞতা আছে যা আপনাকে সফল হতে প্রেরণা দিয়েছিল?
মো. মিজানুর রহমান: এসএসসিতে আমার রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হয় কারন স্কুললাইফে পড়াশোনাটাকে এতটা সিরিয়াসলি নেইনি। খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু তুলনামূলক খারাপ রেজাল্ট এর পরেও আমার পরিবারের সবাই আমাকে প্রচুর উৎসাহ দিয়েছিলেন, আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। সবাই বলতেন আমি ভবিষ্যতে অনেক ভালো করব। আমার রেজাউল মামা আমাকে সবসময় বলতেন আমি নিশ্চয় একদিন অনেক ভালো কিছু করে দেখাব। ওনাদের উৎসাহ আমার জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিবার ফুয়েল হিসেবে কাজ করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কখন থেকে বিসিএস পড়া শুরু করলেন? 
মো. মিজানুর রহমান: অনার্স ফাইনাল ইয়ারে যখন বুঝলাম এপিয়ার্ড দিয়ে বিসিএস এর আবেদন করতে পারব তখন থেকে বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনা শুরু করি। আমি ম্যাথে দক্ষ ছিলাম তাই ম্যাথ করতে হয়নি বিসিএস প্রস্তুতিকালে। এতে অন্য বিষয়গুলোতে বেশি সময় দিতে পেরেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি, ভাইভা ও রিটেন নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা বলুন?
মো. মিজানুর রহমান: প্রিলির জন্য খুব বেশি বই না পড়ে প্রতিটি টপিকের জন্য যেকোন একটা করে বই ভালো করে পড়া উত্তম। প্রিলি পরীক্ষায় টিকা পরিশ্রমের সাথে সাথে কৌশলেরও ব্যাপার। কারণ প্রিলিতে ফার্স্ট নয় পাস দরকার।

রিটেনের ধাপটা আমার কাছে প্রিলির চেয়ে সহজ মনে হয় যদি ধৈর্য সহকারে, কৌশলে পড়া যায় এবং পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজ করে, খাতার সৌন্দর্য বজায় রেখে আন্সার করা যায়। এক্ষেত্রে যারা ম্যাথে আর বিজ্ঞানে একেবারেই দুর্বল তাদের উচিত বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, ইংরেজি, বাংলাতে বেশি মার্কস তোলার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া। বিজ্ঞান ও ম্যাথে এত মার্কস না পেয়েও ভালো ভালো ক্যাডার পেতে দেখেছি অনেককে। আর যারা বিজ্ঞান ও ম্যাথে ভালো তাদের লক্ষ্য থাকা উচিত এই দুইটাতে গড়ে ৮০% মার্কস তোলা।

ভাইভার ক্ষেত্রে যদি বলি, চাপমুক্ত থেকে ভাইভা এটেন্ড করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন কিছু না পারলে সরি বলে আত্মসমর্পণ করা উচিত। আর যা জানি, সেটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আন্সার করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ভাইভা বোর্ডে যেন কোনমতেই অতিরিক্ত পণ্ডিতি দেখানো না হয়। ডাউন টু আর্থ থেকে স্যারদের মন্তব্য মানতে হবে। অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে অনেকেই ধরা খায়।

আর সর্বোপরি একটা কথায়, সবসময় মনে করবেন যে এটাই আপনার জীবনের শেষ বিসিএস, আপনি আর বিসিএস পরীক্ষা দিতে চাননা। সেই স্পিরিট রেখেই নিজেকে প্রস্তুত করা উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 
মো. মিজানুর রহমান: ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে চাইনা, সামনের দিনগুলোকে উপভোগ করে চলতে চাই। পরিকল্পনা হলো সৎ থেকে মানবকল্যানে কাজ করা, বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বমুখী সুনামকে আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. মিজানুর রহমান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence