সহকারী অধ্যাপক নাকি পুলিশের এএসপি— দ্বিধায় শারমিন

অন্যের থেকে ধার করা ইউনিফর্মে শারমিন রহমান
অন্যের থেকে ধার করা ইউনিফর্মে শারমিন রহমান  © টিডিসি ফটো

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন রহমান। সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। পুলিশ ক্যাডারে ৭২ জন সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে তার অবস্থান ৫৯তম। শারমিন রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এই বিভাগ থেকে তিনি ৭ম অবস্থান করে স্নাতক এবং ৩য় অবস্থান করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

এরপর তিনি ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর মাভাবিপ্রবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার সাফল্য ও জীবনের গল্প নিয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নূর এ আলম নুহাশ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি কেমন?
শারমিন রহমানঃ পুলিশ ক্যাডারের স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই ছিলো। আমার পুলিশ ইউনিফর্ম ও ডিপার্টমেন্টের প্রতি প্রচুর ভালোলাগা কাজ করে। এমনকি এক সময় আমি ধার করে পুলিশ ইউনিফর্ম পরতাম। আজ সত্যি সেই স্বপ্ন স্বার্থক হয়েছে।

পুলিশ ক্যাডার হওয়ার আগে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সে অনুভূতিটাও অনেক আনন্দের ছিলো। শিক্ষক হওয়ারও স্বপ্ন ছিল আমার। তবে শিক্ষকতার চেয়ে পুলিশের প্রতিই বেশি আগ্রহ ছিল হয়তো প্রবল ইচ্ছার কারণেই আল্লাহ আমার জন্য এই সাফল্য নির্ধারণ করেছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাকি পুলিশ ক্যাডার, কোনটিকে বেছে নেবেন?
শারমিন রহমানঃ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া একটু কঠিন আমার কাছে। আসলে পুলিশ অফিসার হওয়া আমার স্বপ্ন ছিলো, একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। কিন্তু এর মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যাই। যেহেতু এখনো বেশ সময় আছে তাই ভাবনার মধ্যেই আছি। তবে এইটুকু বলতে পারি নিজের চাওয়া ও পরিবারের পূর্ণ সাপোর্ট থাকায় পুলিশেই যোগ দেয়ার ইচ্ছা আছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ কেন পুলিশ ক্যাডার আপনার কাছে এতো আগ্রহের?
শারমিন রহমানঃ আসলে আমার ছোটবেলা থেকে পুলিশের প্রতি, পুলিশের পোশাকের প্রতি একটা দুর্বলতা ছিল। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন পুলিশ অফিসার হবো। তবে শুরুতে যেহেতু বিভাগে রেজাল্ট ভালো ছিলো তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম এবং আল্লাহর রহমতে হয়েও যাই।

বিসিএসের ভাইভা বোর্ডেও স্যাররা অবাক হয়েছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতো মহান পেশা থাকা সত্ত্বেও আমি পুলিশ হতে চাই শুনে। উনারাও জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন পুলিশই হতে চাই? আমি বলেছি পুলিশের ওই পোশাকের প্রতি আমি খুব দুর্বল।

আরও পড়ুন: সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন অধরা ৬১ জনের

তারা বললেন পোশাক তো আরেকটি ক্যাডারেও আছে। তোমার আসলে এই ডিপার্টমেন্টের প্রতিই দুর্বলতা বেশি। আমি বললাম আমার কাছে নিয়মতান্ত্রিক ও চ্যালেঞ্জিং জব খুব ভালো লাগে; যা পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আমি দেখেছি। আর তাই সব সময় ভালোলাগার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো পুলিশ ক্যাডার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনি তো একটা সিদ্ধান্ত মোটামুটি নিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে অন্যদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
শারমিন রহমানঃ এই বিষয়টি সম্পর্কে একেকজনের মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গি একেকরকম হবে। কেউ ক্যাডার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয় আবার কেউ ক্যাডার হিসেবে যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা ছেড়েও দেয়।

আমার শিক্ষকতা পেশায় ৪ বছর চলমান। প্রমোশনও হয়েছে। এই পেশায় প্রমোশন খুব তাড়াতাড়ি হয়। কিন্তু আবার নতুন করে নবম গ্রেডে পুলিশে যোগদান করার ইচ্ছা শুধুমাত্র আমার স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জিং পেশা গ্রহণের জায়গা থেকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ আপনার পুলিশে যোগদানের ইচ্ছায় পরিবারের কিভাবে দেখছে? কেমন সমর্থন পাচ্ছেন
শারমিন রহমানঃ পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া তো এতো বড় সিদ্ধান্তে আশা সম্ভব না। মূলত আমার মেয়ের জন্য এই সিদ্ধান্তে আশাটা একটু কঠিন। তবে আমার মা ট্রেনিংয়ের পুরো সময় তাকে দেখবে বলে জানানোর কারণে ভরসা পাচ্ছি।

আমার স্বামী আমার জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেছে। তবে আমার পুলিশ অফিসার হওয়ার তীব্র নেশা দেখে আমাকে সব সময় সাপোর্ট করেছে। তাই সকলের সাপোর্টে আমার পুলিশে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হয়েছে। তবে এখনও যেহেতু সময় আছে তাই পুরোপুরি স্থির করিনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ শিক্ষকতার পাশাপাশি বিসিএসের জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কেমন ছিলো?
শারমিন রহমানঃ আমার কাছে বিষয়টি চক্ষু লজ্জার মনে হতো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়েও বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করা সবাই একভাবে দেখে না। তাই বইগুলোর উপর কাগজ লাগিয়ে রাখতাম।

তারপরেও নিজের স্বপ্ন পূরণে চেষ্টার কমতি রাখিনি। বিশেষ করে করোনা আশার পর বিভাগের চাপ কমে যাওয়ায় আমার পড়াশোনায় অনেকটা সুবিধা হয়। তবে অন্য কোনো ক্যাডার হলে হইতো শিক্ষকতাকেই স্থায়ী পেশা হিসেবে রাখতাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ পুলিশে যোগদানের পর যদি এমন মনে হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় বেশি ভালো ছিলো, তখন কি করবেন?
শারমিন রহমানঃ এমনটা হতে পারে বলে আমারও মনে হয়। তাই ফেরত আশার মতো সুযোগ থাকলে ভালো হতো। যদিও এমনটা হয়তো সম্ভব না। তবে সকলের সাপোর্টে আর আমার ইচ্ছা ইতিবাচক থাকায় চ্যালেঞ্জিং এই পেশায় আমি ভালো থাকবো বলে মনে করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ বিসিএস এ আগ্রহীদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
শারমিন রহমানঃ শুধু বিসিএস নয়, যে কোনো সাফল্য পেতে চাইলে চেষ্টা, পড়াশোনার বিকল্প কিছু নেই। চেষ্টার ত্রুটি না থাকলে এবং সবসময় পড়াশোনায় লেগে থাকলে যে কোনো কিছু সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence