পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বই জীবন, এটাকে পড়তে জানতে হবে

সাদাত হোসাইন
সাদাত হোসাইন

সাদাত হোসাইন সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক, উপস্থাপক ও নির্মাতা। তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস ‘আরশিনগর’ ‘অন্দরমহল’ মানবজনম’ ও নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ রীতিমত বিস্মিত করেছে পাঠককে। ৪টি উপন্যাসই টানা ৪ বছর স্থান করে নিয়েছে বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায়। বই প্রকাশিত হয়েছে ৯ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৩ তে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড,ও ২০১৬ তে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার পেয়েছেন। স্বপ্নের সবটা জুড়ে তার গল্প। সেই গল্প বলতে চান লেখায়, চলচ্চিত্রে, ও ছবিতে। সাদাত হোসাইনের কিছু অজানা তথ্য জানাচ্ছেন- এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

নাম: সাদাত হোসাইন
ডাকনাম: সাদাত
জন্মতারিখ: ২১ শে মে

যা অনুপ্রেরণা দেয়: ভালোবাসা। জগতে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় অনুপ্রেরণাদায়ী আর কিছু নেই।

প্রথম লেখা প্রকাশের অনুভূতি: প্রথম লেখা প্রকাশের চেয়ে প্রথম নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখার আনন্দটা একটু অন্যরকম। এখানে মজার বিষয় হচ্ছে আমার নাম প্রথম যেদিন আমি ছাপার অক্ষরে দেখি, সেদিন কিন্তু আমার কোন লেখা প্রকাশিত হয়নি। খুব ছোটবেলায়, পুরনো খবরের কাগজের বিভিন্ন সংবাদ থেকে আমার নামের অক্ষরগুলো ব্লেড দিয়ে আলাদা আলাদা কেটে আমি ভাতের আঠা দিয়ে পাশাপাশি লাগিয়ে দেখি, নিজের নাম, ছাপার অক্ষরে! ওই অনুভূতিটা ছিল সবচেয়ে বেশি অসাধারণ, অবর্ণনীয় ভালো লাগার।

প্রিয় লেখক: সবচেয়ে প্রিয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও মানিক বন্দোপাধ্যায়। আছেন হুমায়ূন আহমেদ ও। এছাড়া এরিক মারিয়া রেমার্ক এবং স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড।

সম্প্রতি পড়া বই: কমলকুমার মজুমদারের গল্প সমগ্র পড়ছি। লাল জুতো, ফৌজ-ই-বন্দুক, মল্লিকা বাহার পড়া শেষ করলাম। বাকীগুলোও ধীরে ধীরে পড়ছি।

সম্প্রতি দেখা চলচ্চিত্র: আমি প্রচুর সিনেমা দেখি। সব ধরনের সিনেমা। এনিমেশন থেকে শুরু করে একশন, মিস্ট্রি, থ্রিলার, ক্ল্যাসিক, ওয়েস্টার্ন, সব। নিজের লেখালেখি এবং নির্মাণ নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকায় সম্প্রতি সেভাবে সিনেমা নিয়ে বসার সুযোগ হয়নি। যেসব বইয়ের কপিরাইট ফ্রী পিডিএফ পাওয়া যায়, সেসব বই যেমন ফোনে রেখে বাসে ট্রেনে বা যেখানে সেখানেই পড়া যায়। সিনেমার ক্ষেত্রে নানা কারণেই এটি একটু কঠিন। তারপরও সম্প্রতি এনিমেশন মুভি কোকো দেখলাম, দেখলাম মিনাসকিউল সিরিজের ভেলি অফ দ্যা লস্ট আন্টস। আর শেপ অফ ওয়াটার।

জীবনকে যেভাবে দেখা হয়: ওই যে, লাইফ ইজ লাইক আ বক্স অফ চকোলেটস, ইউ নেভার নো, হোয়াট ইউ আর গনা গেট!

জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার ঘটনা: অনেকগুলো ঘটনা আছে। আলাদা করে বলা ডিফিকাল্ট। তবে মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ঘটনা এখনই না বলা ভালো। কারণ জীবনতো এখনো ঘুরছে, এখনো চলছে, বহমান। স্থির হয়ে গেলে তখনই না কেবল বলা সম্ভব, কোনটা কতটুকু মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

যে কাজটি করতে কখনো ক্লান্তি লাগে না: গল্প বলতে, গল্প শুনতে। আমার বুকের ভেতর অজস্র গল্প জমে আছে, আমি সেই গল্পের যতটা বেশি সম্ভব বলে যেতে চাই। চলচ্চিত্রে, লেখায়, আলোকচিত্রে, কথায়। এই গল্প বলায় আমার কোন ক্লান্তি নেই। ক্লান্তি নেই গল্প শোনায়ও। চারপাশে এতো এতো জীবন, সেইসব জীবনে এতো এতো গল্প, সেইসব গল্প আমাকে মুগ্ধ করে, আনন্দিত করে, বিষাদগ্রস্ত করে, নতুন ভাবনা ভাবায়। এই গল্পগুলো আমি শুনতে চাই, পড়তে চাই। মানুষ বলে বই পড়ো, বই পড়ো। আমিও বলি, হ্যাঁ, বই পড়তে হবে, তবে তারচেয়েও বেশি পড়তে জানতে হবে জীবন। জীবনের চেয়ে বড়, গভীর বই আর পৃথিবীতে নেই। কিন্তু সেটি পড়তে জানতে হবে।

যে বইটি অনেকবার পড়েও আবার পড়ার ইচ্ছা জাগে: এরিখ মারিয়া রেমার্কের থ্রী কমরেডস,মারিও পুজোর গডফাদার, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা। এমন আরও বহু আছে।

নিজের যে বিষয়টি নিজের খুব প্রিয়: সেন্সিটিভিটি এবং সেন্সিবিলিটি

লেখক না হলে যা হতেন: আমি আসলে খুব ক্রিকেটার হতে চাইতাম, খুব। হতে পারতাম কিনা জানি না, তবে ইচ্ছেটা তীব্র ছিল।

আয়নায় নিজেকে দেখে যা মনে হয়: নানান অপ্রাপ্তি থাকা সত্তে¡ও জীবনের প্রাপ্তিগুলোকে বড় করে দেখতে জানি, প্রচন্ড হতাশার ভেতর থেকেও অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারি। আক্ষেপ করার চেয়ে সন্তুষ্ট হবার চেষ্টা থাকে। আমার মনে হয় আমি একজন সুখী মানুষ, সফল মানুষ। কারণ আমার মনে হয় সফলতা মানে কেবল যা চাই তা পাওয়াই নয়, সফলতা মানে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে চেষ্টা করে যাওয়া। অন্যের প্রাপ্তিতে ঈর্ষাকাতর না হইয়ে আনন্দিত হওয়া। এই বিষয়গুলো আমি খুব অনুভব করি, ফলে জীবনজুড়ে অসংখ্য অপ্রাপ্তি থাকা সত্ত্বেও আমি নিজেকে একজন সফল সুখী মানুষ ভাবি।

ভবিষ্যত স্বপ্ন: প্রচুর লিখতে চাই, প্রচুর গল্প বলতে চাই। অসংখ্য মানুষের কাছে গল্পগুলো ছড়িয়ে দিতে চাই। আমার উপন্যাসগুলো নিয়ে অন্তত পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ